একীভূতকরণের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে জিপি ও বাংলালিংক পৃথক চিঠি দিয়েছে বিটিআরসিকে — বাজারে অসম প্রতিযোগিতা ও ভোক্তা বিভ্রান্তির আশঙ্কা।
টেলকো সেবায় গ্রাহক অসন্তোষ ও নিয়ন্ত্রকের নীরবতা
গ্রাহকদের ভোগান্তি কমছে না, এবার রবির বিরুদ্ধে অভিযোগ জিপি ও বাংলালিংকের সারাক্ষণ প্রতিবেদন
দেশের মোবাইল ফোনের সেবা নিয়ে টেলকো কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগের শেষ নেই। কিন্তু প্রতিকারে এগিয়ে আসে না বিটিআরসি। বিগত রাজনৈতিক সরকারের মত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও এ বিষয়ে নীরব-নির্বিকার।
রবির বিরুদ্ধে একীভূতকরণের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ
তবে এবার দুই টেলকো কোম্পানি অভিযোগ তুলেছে অপর একটির বিরুদ্ধে। গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক রবির বিরুদ্ধে একীভূতকরণের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে বিটিআরসির কাছে এর প্রতিকার দাবি করেছে। বাংলালিংক ও গ্রামীণফোনের (জিপি) অভিযোগ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও হাই কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রবি প্রায় নয় বছর পরও এয়ারটেলকে আলাদা ব্র্যান্ড হিসেবে একদিকে যেমন প্রচার চালাচ্ছে, অন্যদিকে আলাদাভাবে সিমও বিক্রি করে চলেছে।

এয়ারটেল ব্র্যান্ড সক্রিয় — বিভ্রান্ত ভোক্তা ও বাজারে অসম প্রতিযোগিতা
এয়ারটেল সিম, প্রমোশন, ওয়েবসাইট ও অ্যাপ এখনো সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং তা পরিচালনা করছে রবি-আজিয়াটা। এর ফলে ভোক্তারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন এবং বাজারে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।
রবির যুক্তি: ‘এয়ারটেল একটি সাব-ব্র্যান্ড’
তবে রবির কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানাচ্ছেন, একীভূতকরণের মাধ্যমে এয়ারটেল একটি আইনগতভাবে অধিগৃহীত সাব-ব্র্যান্ড। তাদের যুক্তি—সাব-ব্র্যান্ডিং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। নিয়ম মেনেই তা পরিচালিত হচ্ছে।
জিপি-বাংলালিংকের পাল্টা অভিযোগ: ‘নির্দেশনা মানছে না রবি’
কিন্তু এসব যুক্তি না মেনে জিপি ও বাংলালিংক বিটিআরসির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেছে যে রবি আজিয়াটা লিমিটেড ২০১৬ সালে এয়ারটেলের সঙ্গে একীভূতকরণের শর্ত বারবার লঙ্ঘন করছে। তাদের অভিযোগ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং হাই কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনার পরও রবি এখনো এয়ারটেল ব্র্যান্ডকে পৃথকভাবে প্রচার ও পরিচালনা করছে; একীভূতকরণের পর প্রায় নয় বছর পার হলেও তা অব্যাহত থাকাটা গ্রহণযোগ্য নয়।
বিটিআরসিকে পাঠানো চিঠিতে বিস্তারিত অভিযোগ
বিটিআরসিকে পাঠানো পৃথক চিঠিতে জিপি ও বাংলালিংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর একীভূতকরণের অনুমোদনের শর্ত অনুযায়ী সব বিজ্ঞাপন, বিপণন ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ শুধু “রবি আজিয়াটা লিমিটেড” নামেই পরিচালনা করার কথা। ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট দেওয়া হাই কোর্টের রায়ও একই শর্তে রবি ও এয়ারটেলকে একীভূত করার অনুমোদন দেয়। এটা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি-সহ সবার জন্য প্রযোজ্য।

এয়ারটেল সিম এখনও বাজারে—অভিযোগ দুই অপারেটরের
দুই টেলকোর অভিযোগে বলা হয়েছে এয়ারটেল ব্র্যান্ডের সিম এখনো সহজলভ্য; অনেক রিটেইল আউটলেটে এয়ারটেলকে একচেটিয়া বিক্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রচার করা হয়, এবং আলাদা এয়ারটেল ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ এখনো স্বাধীনভাবে প্যাকেজ ও গ্রাহকসেবা দিচ্ছে। এয়ারটেল ব্র্যান্ডে ডেটা প্যাক, রিচার্জ অফার, আন্তর্জাতিক কল রেট, রোমিং সার্ভিস এবং VoLTE প্রমোশনও সক্রিয়ভাবে চলছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এয়ারটেল নিজস্ব অপারেটর হিসেবে উপস্থিত রয়েছে।
বিটিআরসিতে দেওয়া অভিযোগে বাংলালিংকের বক্তব্য
গত ৩০ অক্টোবর বিটিআরসিতে দেওয়া অভিযোগে বাংলালিংক লিখেছে, “রবি এখনো ০১৬ নম্বর সিরিজে সক্রিয়ভাবে সিম সংযোগ দিচ্ছে এবং ‘এয়ারটেল’ নামে ব্যাপক ব্র্যান্ড প্রচার ও গ্রাহকমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কমিশনের পক্ষ থেকে এমন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কোনো বৈধ অনুমতি, ছাড় বা সংশোধনের প্রমাণ প্রকাশ্যে নেই।”
‘আইনের বাইরে পরিচালিত হতে পারে না’—বাংলালিংকের প্রতিক্রিয়া
এসব অভিযোগের বিষয়ে বাংলালিংকের একজন কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি মূলত নিয়ম-নীতি মেনে চলা নিয়ে। “যখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং এমনকি হাই কোর্টও পরিষ্কার শর্ত নির্ধারণ করে দিয়েছে, তখন কোনো অপারেটর আইনের বাইরে পরিচালিত হতে পারে না। আমরা আশা করি বিটিআরসি একটি সমান প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করবে।”

গ্রাহক ভোগান্তি: সিম, প্যাকেজ, চার্জ—সবখানেই অসংগতি
দেশে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তিনটি বেসরকারি মোবাইল টেলিফোন অপারেটর থাকলেও সিম পাওয়া যাচ্ছে চারটি। কোনো সাইনবোর্ড, বিজ্ঞাপন না থাকলেও এয়ারটেলের সিম বিক্রি হচ্ছে, মিলছে না প্যাকেজও। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের কোনো আপত্তি নেই। তারা বরং ইন্টারনেটের প্যাকেজ কিনে, মিনিটের প্যাকেজ কিনে নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছে। সব প্যাকেজেরই মেয়াদ শেষের সময় থাকে। কিন্তু ডাটার জিবি শেষ হচ্ছে না। পরবর্তী প্যাকেজে আগের অবশিষ্ট ডেটা যোগ হচ্ছে কি না তাও পরিষ্কার বোঝা যায় না।
ফি, চার্জ ও তথ্য আপডেট—নতুন অভিযোগের তালিকা
বেশ কিছুদিন আগেই বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো—হারিয়ে যাওয়া সিম রিপ্লেস করার জন্য কোনো ফি নেয়া হয় না। এ সপ্তাহে জিপির হারানো সিম রিপ্লেস নিতে গেলে ৩৫০ টাকা মাশুল গুণতে হয়েছে। আবার এনআইডি কার্ডের তথ্য আপডেট করারও আলাদা চার্জ নেওয়া হচ্ছে। এসব ব্যাপারে বিটিআরসির নির্দেশনার জোর প্রচার দরকার বলে গ্রাহকদের দাবি।
সেবা কেন্দ্র সংকুচিত—বাড়ছে গ্রাহক দুর্ভোগ
প্যাকেজ থেকে যাওয়া ডাটা কি হবে তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা মেলে না টেলিকর কল সেন্টারগুলো থেকে। আবার তিনটি টেলকোই তাদের গ্রাহক সেবা কেন্দ্র আগের চেয়ে সংখ্যায় কমিয়েছে অথবা খরচ কমানোর জন্য আকারে ছোট করেছে। ফলে সাধারণ গ্রাহকরা ভোগান্তির মধ্যেই আছেন।
#রবি #জিপি #বাংলালিংক #বিটিআরসি #টেলিযোগাযোগ #ভোক্তা_অধিকার
সারাক্ষণ প্রতিবেদন 
























