০৭:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
নতুন বন্যায় ডুবে ভিয়েতনাম, ঝুঁকিতে কফি ফসল ও গ্রামীণ জীবন লেবাননের শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় ১৩ নিহত, নতুন সহিংসতার আশঙ্কা ‘আমার কোনও দোষ ছিল না, কিন্তু আমাকে সব কিছু হারাতে হয়েছে’ ‘সুইম শেডি’ নাম নিয়ে আইনি লড়াইয়ে এমিনেম দক্ষিণ-পশ্চিম জাপানের উপকূলীয় শহর ওওইতায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, পুড়ল শতাধিক ঘর বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুতে এগোচ্ছে জাপান গ্রাহকদের ভোগান্তি কমছে না, এবার রবির বিরুদ্ধে অভিযোগ — জিপি ও বাংলালিংকের আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ইশতেহারে শিশু নিরাপত্তা জোরদারের প্রতিশ্রুতি ভারতের স্পষ্ট বার্তা: যেখানেই হোক, সন্ত্রাস দমনে অভিযান চালানোর পূর্ণ অধিকার আছে ইভি আর স্মার্ট গ্যাজেটের জোরে দ্বিগুণের বেশি মুনাফা দেখাল শাওমি

লেবাননের শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় ১৩ নিহত, নতুন সহিংসতার আশঙ্কা

শিবিরে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার পর লেবাননে ফের যুদ্ধের আতঙ্ক

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগর সাইদার আইনের এল-হিলওয়া ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে একযোগে ড্রোন হামলায় ১৩ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারি সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য, শিবিরের ভেতরে একটি মসজিদের পার্কিং এলাকায় দাঁড়ানো একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে আঘাত হানে ড্রোন, তখন আশপাশে নামাজের পর অনেকে চলাচল করছিলেন। এই হামলাকে গত বছরের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের পর লেবাননে সবচেয়ে মারাত্মক একক আঘাত হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।

ঘটনাস্থলের কাছের সরু গলিতে দ্রুত পৌঁছে যায় অ্যাম্বুলেন্স ও উদ্ধারকর্মীরা। স্থানীয়রা আহতদের কাঁধে করে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন, আর ধ্বংসস্তূপে খুঁজছেন নিখোঁজ প্রিয়জনদের। শিবিরের বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, যুদ্ধবিরতির পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে শুরু করেছিলেন, তাই হঠাৎ এই হামলা তাদের ভীত ও হতবিহ্বল করে দিয়েছে।

টার্গেট নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের ভিন্ন দাবি

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, হামাসের একটি প্রশিক্ষণ ঘাঁটি লক্ষ্য করেই এই আক্রমণ চালানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, ওই স্থানে ইসরায়েল ও তার সেনাদের বিরুদ্ধে নতুন হামলার প্রস্তুতি চলছিল, তাই ‘যেখানেই হামাস কাজ করবে, সেখানেই’ আঘাত হানা হবে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এটিকে আত্মরক্ষামূলক সামরিক পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়ে লেবাননে থাকা ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতিকে বড় হুমকি হিসেবে তুলে ধরছেন।

অন্যদিকে হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল শিবিরের একটি ক্রীড়াঙ্গন ও এর আশপাশের বেসামরিক এলাকা, কোনো সামরিক স্থাপনা নয়। স্থানীয়দের ভাষ্যেও নিহতদের অনেকে ছিলেন মসজিদের আশপাশে থাকা সাধারণ বাসিন্দা, দোকানপাটের কর্মী কিংবা পার্কিং এলাকায় গাড়ি রাখা চালক। হামলার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে চাইলেও সাংবাদিকদের পথরোধ করে সশস্ত্র হামাস সদস্যরা, ফলে আঘাতপ্রাপ্ত নির্দিষ্ট স্থান স্বাধীনভাবে দেখা সম্ভব হয়নি।

Israeli strike on Lebanon refugee camp raises fears of new offensive

গত বছরের যুদ্ধের স্মৃতি, নতুন উত্তেজনার আশঙ্কা

প্রায় এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে থেমেছিল ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর কয়েক মাসের বিধ্বংসী যুদ্ধ, যাতে লেবাননে চার হাজারের বেশি এবং ইসরায়েলে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। সে সময় ইসরায়েল শুধু হিজবুল্লাহ নয়, লেবাননে সক্রিয় ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর স্থাপনাগুলোকেও লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালায়। যুদ্ধবিরতির পরও ছিটেফোটা আক্রমণ বন্ধ হয়নি; লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় দেশটিতে ২৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

আইনের এল-হিলওয়া শিবির বহু বছর ধরে ঘনবসতিপূর্ণ ও রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে পরিচিত; এখানে শত সহস্র ফিলিস্তিনি শরণার্থীর পাশাপাশি বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীও উপস্থিত। সাম্প্রতিক হামলার পর বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, শিবিরটি আবারও সামনের সারির যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে। অনেক পরিবার ভাবছে, ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়াই কি এখন নিরাপদ বিকল্প, নাকি অনিশ্চয়তার মাঝেই এখানেই থেকে যেতে হবে।

গাজা ও সীমান্ত উত্তেজনার বিস্তৃত প্রেক্ষাপট

লেবাননে এই আঘাতকে অনেকেই দেখছেন গাজা যুদ্ধ ও গত কয়েক বছরের সীমান্ত উত্তেজনার ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালায়, আর এর পরপরই লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের গোলাগুলিও তীব্র হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের শেষ দিকে যুদ্ধবিরতি হলেও ইসরায়েলি বাহিনী মাঝে মাঝেই লেবাননে হামাস ও অন্য গোষ্ঠীর নেতাদের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে।

ডিপ্লোম্যাটিক মহলে আশঙ্কা, এমন প্রতিটি হামলাই নতুন করে প্রতিশোধ ও পাল্টা প্রতিশোধের চক্রকে উসকে দিতে পারে, যা দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। লেবাননের সরকার হামলাকে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন ইসরায়েলকে সীমান্তের ভেতরে এমন অভিযানে নিরুৎসাহিত করা হয়।

শিবিরের সাধারণ মানুষের কাছে এখন রাজনীতির চেয়ে জরুরি হলো বাস্তব জীবনসংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। কেউ প্রিয়জন হারিয়ে শোকের মধ্যে আছে, কেউ হাসপাতালের বাইরে খবরের জন্য অপেক্ষা করছে। অনেকে ভাবছে, যে স্থানে দশকের পর দশক আশ্রয় নিয়ে আছে, সেখানে থাকার নিরাপত্তা আদৌ কতটা আছে, আর কোথাও যাওয়ার বিকল্প আদৌ আছে কি না।

জনপ্রিয় সংবাদ

নতুন বন্যায় ডুবে ভিয়েতনাম, ঝুঁকিতে কফি ফসল ও গ্রামীণ জীবন

লেবাননের শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় ১৩ নিহত, নতুন সহিংসতার আশঙ্কা

০৫:৪৫:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

শিবিরে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার পর লেবাননে ফের যুদ্ধের আতঙ্ক

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগর সাইদার আইনের এল-হিলওয়া ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে একযোগে ড্রোন হামলায় ১৩ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারি সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য, শিবিরের ভেতরে একটি মসজিদের পার্কিং এলাকায় দাঁড়ানো একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে আঘাত হানে ড্রোন, তখন আশপাশে নামাজের পর অনেকে চলাচল করছিলেন। এই হামলাকে গত বছরের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের পর লেবাননে সবচেয়ে মারাত্মক একক আঘাত হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।

ঘটনাস্থলের কাছের সরু গলিতে দ্রুত পৌঁছে যায় অ্যাম্বুলেন্স ও উদ্ধারকর্মীরা। স্থানীয়রা আহতদের কাঁধে করে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন, আর ধ্বংসস্তূপে খুঁজছেন নিখোঁজ প্রিয়জনদের। শিবিরের বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, যুদ্ধবিরতির পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে শুরু করেছিলেন, তাই হঠাৎ এই হামলা তাদের ভীত ও হতবিহ্বল করে দিয়েছে।

টার্গেট নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের ভিন্ন দাবি

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, হামাসের একটি প্রশিক্ষণ ঘাঁটি লক্ষ্য করেই এই আক্রমণ চালানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, ওই স্থানে ইসরায়েল ও তার সেনাদের বিরুদ্ধে নতুন হামলার প্রস্তুতি চলছিল, তাই ‘যেখানেই হামাস কাজ করবে, সেখানেই’ আঘাত হানা হবে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এটিকে আত্মরক্ষামূলক সামরিক পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়ে লেবাননে থাকা ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতিকে বড় হুমকি হিসেবে তুলে ধরছেন।

অন্যদিকে হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল শিবিরের একটি ক্রীড়াঙ্গন ও এর আশপাশের বেসামরিক এলাকা, কোনো সামরিক স্থাপনা নয়। স্থানীয়দের ভাষ্যেও নিহতদের অনেকে ছিলেন মসজিদের আশপাশে থাকা সাধারণ বাসিন্দা, দোকানপাটের কর্মী কিংবা পার্কিং এলাকায় গাড়ি রাখা চালক। হামলার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে চাইলেও সাংবাদিকদের পথরোধ করে সশস্ত্র হামাস সদস্যরা, ফলে আঘাতপ্রাপ্ত নির্দিষ্ট স্থান স্বাধীনভাবে দেখা সম্ভব হয়নি।

Israeli strike on Lebanon refugee camp raises fears of new offensive

গত বছরের যুদ্ধের স্মৃতি, নতুন উত্তেজনার আশঙ্কা

প্রায় এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে থেমেছিল ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর কয়েক মাসের বিধ্বংসী যুদ্ধ, যাতে লেবাননে চার হাজারের বেশি এবং ইসরায়েলে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। সে সময় ইসরায়েল শুধু হিজবুল্লাহ নয়, লেবাননে সক্রিয় ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর স্থাপনাগুলোকেও লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালায়। যুদ্ধবিরতির পরও ছিটেফোটা আক্রমণ বন্ধ হয়নি; লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় দেশটিতে ২৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

আইনের এল-হিলওয়া শিবির বহু বছর ধরে ঘনবসতিপূর্ণ ও রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে পরিচিত; এখানে শত সহস্র ফিলিস্তিনি শরণার্থীর পাশাপাশি বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীও উপস্থিত। সাম্প্রতিক হামলার পর বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, শিবিরটি আবারও সামনের সারির যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে। অনেক পরিবার ভাবছে, ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়াই কি এখন নিরাপদ বিকল্প, নাকি অনিশ্চয়তার মাঝেই এখানেই থেকে যেতে হবে।

গাজা ও সীমান্ত উত্তেজনার বিস্তৃত প্রেক্ষাপট

লেবাননে এই আঘাতকে অনেকেই দেখছেন গাজা যুদ্ধ ও গত কয়েক বছরের সীমান্ত উত্তেজনার ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালায়, আর এর পরপরই লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের গোলাগুলিও তীব্র হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের শেষ দিকে যুদ্ধবিরতি হলেও ইসরায়েলি বাহিনী মাঝে মাঝেই লেবাননে হামাস ও অন্য গোষ্ঠীর নেতাদের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে।

ডিপ্লোম্যাটিক মহলে আশঙ্কা, এমন প্রতিটি হামলাই নতুন করে প্রতিশোধ ও পাল্টা প্রতিশোধের চক্রকে উসকে দিতে পারে, যা দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। লেবাননের সরকার হামলাকে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন ইসরায়েলকে সীমান্তের ভেতরে এমন অভিযানে নিরুৎসাহিত করা হয়।

শিবিরের সাধারণ মানুষের কাছে এখন রাজনীতির চেয়ে জরুরি হলো বাস্তব জীবনসংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। কেউ প্রিয়জন হারিয়ে শোকের মধ্যে আছে, কেউ হাসপাতালের বাইরে খবরের জন্য অপেক্ষা করছে। অনেকে ভাবছে, যে স্থানে দশকের পর দশক আশ্রয় নিয়ে আছে, সেখানে থাকার নিরাপত্তা আদৌ কতটা আছে, আর কোথাও যাওয়ার বিকল্প আদৌ আছে কি না।