ফুকুশিমার পর আরেক বড় মোড়
জাপানের নিগাতো প্রিফেকচারের গভর্নর বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কাশিওয়াজাকি-কারিওয়ার পুনরায় চালুতে সম্মতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পর দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে এবং কঠোর নিরাপত্তা মানদণ্ডের আওতায় নানা সংস্কার করা হয়েছে। জাপানের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বেশ আগে এসব নতুন মানদণ্ডে প্ল্যান্টটিকে অনুমোদন দিলেও স্থানীয় রাজনৈতিক আপত্তি আর জনমতের উদ্বেগের কারণে এতদিন চালু করা যায়নি। গভর্নরের অনুমোদন মানে জাপানের জ্বালানি নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন—পারমাণবিক শক্তিকে আবারও নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে দেখার ইঙ্গিত।
এখনই যে সব রিঅ্যাক্টর চালু হয়ে যাবে, তা নয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, পূর্ণাঙ্গ পুনরায় চালুর আগে আরও পরিদর্শন, টেস্ট ও স্থানীয় পর্যায়ে মতামত নেওয়ার ধাপ আছে। সমর্থকদের যুক্তি, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থিতিশীল এবং জীবাশ্ম জ্বালানির আমদানি কমাতে সহায়তা করে—যা বর্তমান বৈশ্বিক জ্বালানি দোলাচলের সময়ে গুরুত্ব পাচ্ছে। তাদের মতে, নবায়নযোগ্য শক্তি বাড়াতে হলেও বেসলোড হিসেবে নির্ভরযোগ্য উৎস থাকা দরকার, না হলে ঝড়-তাপপ্রবাহে গ্রিড ভেঙে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। সমালোচকেরা পাল্টা বলেন, এত বড় প্ল্যান্টে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতির মাত্রা কল্পনাতীত হবে; নিরাপদ সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ও উচ্চ–স্তরের তত্ত্বাবধান এখনো অনেক প্রশ্নের মুখে।
এশিয়ার জ্বালানি ভবিষ্যতের সাথে যোগসূত্র
এশিয়ার অনেক দেশই দ্রুত উন্নয়ন, জ্বালানি নিরাপত্তা আর জলবায়ু প্রতিশ্রুতির মধ্যে ভারসাম্য খুঁজছে। কেউ পারমাণবিক শক্তিকে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান ভাবছে, কেউ আবার সোলার–উইন্ড ও আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বাণিজ্যের দিকেই বেশি ঝুঁকছে। জাপানের নিগাতো সিদ্ধান্ত তাই পুরো অঞ্চলের জন্য এক ধরনের টেস্টকেস হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের ভেতরে জনমত, নিরাপত্তা সংস্কৃতি ও স্বচ্ছতা কীভাবে সামলে তারা পুনরায় চালু করে—সেই অভিজ্ঞতা থেকে অন্য রাষ্ট্রগুলো শিখতে চাইবে।
বাংলাদেশের মতো দেশে বড় জ্বালানি প্রকল্প—হোক তা পারমাণবিক বা কয়লাভিত্তিক—নিয়েও একই ধরনের প্রশ্ন উঠে: দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি, পরিবেশগত প্রভাব, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা। জাপানের এই পদক্ষেপ জলবায়ু লক্ষ্য পূরণের তাগিদ কতটা চাপ সৃষ্টি করছে, আর তার বিপরীতে নিরাপত্তা-আতঙ্ক কতটা প্রভাব ফেলছে, তা স্পষ্ট করে দেখাবে। শেষ পর্যন্ত, নিগাতোর এক উপকূলীয় প্রিফেকচারের সিদ্ধান্তই বৈশ্বিক জ্বালানি–আলোচনায় নতুন সুর যোগ করতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















