মঙ্গলবার বিকেলে গেট নং–১ ভেঙে সচিবালয়ে প্রবেশের পর পুলিশের টিয়ারগ্যাস ও লাঠিচার্জে উত্তেজনা চরমে। আন্দোলনে যুক্ত এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা এবং মাইলস্টোন স্কুল–কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের সহপাঠীরা। সোমবারের বিমান দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত, ১৬৫ জন আহত বলে জানিয়েছে—আইএসপিআর।
হাইলাইটস
- বিকেল ২টা ১৫ মিনিটে গেট নং–১–এর সামনে স্লোগান দিয়ে সমাবেশ শুরু; প্রায় ৩টা ৪০ মিনিটে শিক্ষার্থীরা গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
- পুলিশ টিয়ারগ্যাস, লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে; কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর হয়।
- স্লোগান: “ভূয়া, ভূয়া!”, “আমার ভাই কেন মরল? প্রশাসন জবাব দাও!”, “অ্যাকশন, অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন!”
- আন্দোলনে যুক্ত—এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিদার শিক্ষার্থীরা এবং দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন কলেজ–সংলগ্ন বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
- বিএএফ এফ–৭ বিগিআই প্রশিক্ষণ জেট দুর্ঘটনায় ৩১ জনের মৃত্যু, ১৬৫ জন আহত; সরকার জাতীয় শোক ঘোষণা ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
- শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে নিহতদের পরিচয় ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ, শিক্ষকদের ওপর কথিত হামলার জন্য দুঃখপ্রকাশ, পুরোনো/ঝুঁকিপূর্ণ বিমান ব্যবহার বন্ধ ও প্রশিক্ষণ জোন পুনর্বিন্যাস।
ঘটনাস্থলের চিত্র: গেট ভাঙা, টিয়ারগ্যাস, যানজট
মঙ্গলবার বিকেল ২টা ১৫ মিনিটে সচিবালয়ের গেট নং–১–এর সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর তারা গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়লে পুলিশ ও সচিবালয়কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ টিয়ারগ্যাস শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
সচিবালয়ের ভেতরে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এটি রাজধানীর একটি ‘কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই)’ এলাকা হওয়ায় নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়।
গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় সচিবালয়ের ভেতরের গাড়িগুলো বের হতে না পেরে দীর্ঘ যানজট ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
কারা আন্দোলনে, কী দাবি
উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল–কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত–আহতদের জন্য ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের দিকে মিছিল নিয়ে আসে। একই সঙ্গে এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত হয়; ঢাকা শিক্ষা বোর্ড অফিস থেকেও আরেকটি মিছিল এসে একত্রিত হয়।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—
১. নিহতদের সঠিক পরিচয় দ্রুত প্রকাশ
২. আহতদের সম্পূর্ণ তালিকা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা
৩. প্রত্যেক নিহতের পরিবারের জন্য সমুচিত ক্ষতিপূরণ
৪. শিক্ষকদের ওপর কথিত হামলার জন্য দুঃখপ্রকাশ ও দায় নিরূপণ
৫. ঝুঁকিপূর্ণ/পুরোনো বিমান ব্যবহার বন্ধ
৬. প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া ও জোন মানবিক ও নিরাপদভাবে পুনর্গঠন
দুর্ঘটনার পটভূমি: কী ঘটেছিল সোমবার
২১ জুলাই (সোমবার) দুপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চীনা নির্মিত এফ–৭ বিগিআই (FT–7 BGI) প্রশিক্ষণ জেট মাইলস্টোন স্কুল–কলেজের ভবনে আছড়ে পড়ে। আইএসপিআর জানায়, দুপুর ১টা ০৬ মিনিটে কুর্মিটোলা এয়ারবেস থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হয়; ১টা ১৮ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস খবর পায়। এতে ৩১ জন নিহত হন—এর মধ্যে ২৫ জন শিশু, একজন শিক্ষক ও পাইলট; আহত ১৬৫ জন। সরকার জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে।
বর্তমান অবস্থা
সচিবালয় ও আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত মোতায়েন করা আছে। শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও স্লোগান চালিয়ে গেলেও ভেতরের কর্মকর্তারা ধীরে ধীরে বেরিয়ে যেতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ধাপে ধাপে টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করছে।