০১:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
আমাদের হঠাৎ ঘুম পেয়ে যায় কেন: মাইটোকন্ড্রিয়ার ভেতরের সতর্ক সংকেত অভিনেত্রী কবরীর জন্মদিন: স্মৃতির পর্দায় উজ্জ্বল কিছু অসাধারণ দৃশ্য উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের ক্যাম্পাসে মাঝরাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ – কী ঘটেছে? হিউএনচাঙ (পর্ব-১৫৩) হোলি আর্টিজান অভিযানে মেরিন কমান্ডো: একটি নির্ভীক অভিযানের পূর্ণচিত্র স্মার্টফোনের নোটিফিকেশন: মনোযোগের বড় বাধা নাকি প্রযুক্তির সঙ্গে সহাবস্থান? বিমান বিধ্বস্তের কারণ খুঁজতে উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের আদেশ শিক্ষার্থীর আইডি কার্ডে রক্তের গ্রুপ ও অভিভাবকের ফোন নাম্বার উল্লেখের নির্দেশ গোপালগঞ্জে দু’ উপদেষ্টার পরিদর্শন: বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের ঘোষণা হাসির রাজার জীবনগাঁথা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট প্রতিবেদন: বাংলাদেশে একটি স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট প্রতিবেদন: বাংলাদেশে একটি স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

সোমবার রাজধানী ঢাকায় একটি স্কুল ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি জেট বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ২০ জন মারা গেছেন বলে সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে। সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ীআহত হয়েছেন ১৬০ জনেরও বেশি। আহতদের মধ্যে অন্তত ৪৩ জনের বয়স ১৮ বছরের কমজানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি।

মিডিয়া অফিস জানায়অধিকাংশ নিহতই উত্তরা এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট অনুযায়ীপ্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সেখানে পড়াশোনা করে।

এক বিবৃতিতে সামরিক বিভাগের মিডিয়া অফিস জানায়উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রযুক্তিগত গোলযোগে” এফ৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হয়। যান্ত্রিক ত্রুটি”-র কারণে রুটিন প্রশিক্ষণ মিশনের সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে এবং বিষয়টি তদন্তাধীন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ীপাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তওকির ইসলাম দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।

দুর্ঘটনার পরপরই পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেউপস্থিত মানুষের বরাতে জানা গেছে। ঘটনাস্থলের ভিডিওতে দেখা যায়নিরাপত্তা বাহিনী শিক্ষার্থী ও কর্মীদের সরিয়ে নিতে গিয়ে হুড়াহুড়ির পরিস্থিতি তৈরি হয়। মাইলস্টোনের এক শিক্ষার্থীযিনি সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়ার ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেনসোমবার সন্ধ্যায় জানান যে তখনও অনেক শিক্ষার্থী নিখোঁজ।

তিনি বলেনপুলিশ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা পৌঁছানোর আগে তিনি অন্তত ৩০ জনকে উদ্ধার করেছেন। পরে বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে বাধা দেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

জেটটি প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির ভবনে আঘাত করে,” তিনি বলেন। চতুর্থ ও ষষ্ঠ শ্রেণির শ্রেণিকক্ষে আঘাত লেগেছেআর প্রতিটি কক্ষে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ জন করে শিক্ষার্থী ছিল।” আরেক শিক্ষার্থী১৮ বছর বয়সী আবদু রহমানযিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যবলেনলাঠি ব্যবহার করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেয়। এলাকা সুরক্ষিত করার পর ভারী যন্ত্র এনে মাটির স্তূপ সরানো হয়। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেনকিছু মরদেহ এখনো মাটির নিচে চাপা থাকতে পারে।

দুর্ঘটনাস্থলের ছবিতে দেখা যায়দমকলকর্মীরা কালো হয়ে যাওয়া একটি ভবনের মধ্যে আটকে থাকা একটি ইঞ্জিনসদৃশ ধ্বংসাবশেষে পানি ছিটাচ্ছেন। একই সময়ে স্ট্রেচারে করে আহতদের নিয়ে যেতে দেখা যায়বিস্তৃত এক উদ্ধার অভিযান চলছে।

এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা। ১৯৮৪ সালে ঢাকার বিমানবন্দরে তীব্র বৃষ্টির মধ্যে অবতরণের চেষ্টা করার সময় একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ৪৯ জন নিহত হনকেউ বেঁচে ছিলেন না।

গত বছরের মে মাসে চট্টগ্রামে (দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর) বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ নদীতে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। ওই দুর্ঘটনায় এক স্কোয়াড্রন লিডার নিহত হনস্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

২০১৮ সালের মার্চে ঢাকা থেকে উড্ডয়ন করা একটি ফ্লাইট নেপালের কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়ে ৫০ জন মারা যান। তদন্তকারীরা জানানফ্লাইট চলাকালে ক্যাপ্টেন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী২০১৩ সালে চীন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কাছে ১৬টি এফ৭ বিজিআই জেটজে৭ বিমানের একটি সংস্করণসরবরাহ করে।

সোমবারের ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেকেই বলেনতারা যা দেখেছেন তাতে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম টুটুল (৪৩)মিলস্টোনের বাংলা ভাষার সহযোগী অধ্যাপকবলেন তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। পরে আগুন ও ধোঁয়া দেখে তিনি কলেজের প্রিন্সিপাল ও ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করেন।

আমি চোখের সামনে সঙ্গে সঙ্গে দুইটি মৃতদেহ দেখেছি,” টুটুল বলেন। এই জেট এসে আমাদের স্বপ্ন পুড়িয়ে দিলএটাই আমাকে মেরে ফেলবেআমাকে তাড়া করে বেড়াবেআমার সামনে মানবিক বিপর্যয়।” তিনি আরও বলেন, “সব শিক্ষার্থীই আমার সন্তানের মতো ছিল।

আমাদের হঠাৎ ঘুম পেয়ে যায় কেন: মাইটোকন্ড্রিয়ার ভেতরের সতর্ক সংকেত

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট প্রতিবেদন: বাংলাদেশে একটি স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

০৬:৫৯:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

সোমবার রাজধানী ঢাকায় একটি স্কুল ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি জেট বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ২০ জন মারা গেছেন বলে সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে। সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ীআহত হয়েছেন ১৬০ জনেরও বেশি। আহতদের মধ্যে অন্তত ৪৩ জনের বয়স ১৮ বছরের কমজানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি।

মিডিয়া অফিস জানায়অধিকাংশ নিহতই উত্তরা এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট অনুযায়ীপ্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সেখানে পড়াশোনা করে।

এক বিবৃতিতে সামরিক বিভাগের মিডিয়া অফিস জানায়উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রযুক্তিগত গোলযোগে” এফ৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হয়। যান্ত্রিক ত্রুটি”-র কারণে রুটিন প্রশিক্ষণ মিশনের সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে এবং বিষয়টি তদন্তাধীন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ীপাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তওকির ইসলাম দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।

দুর্ঘটনার পরপরই পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেউপস্থিত মানুষের বরাতে জানা গেছে। ঘটনাস্থলের ভিডিওতে দেখা যায়নিরাপত্তা বাহিনী শিক্ষার্থী ও কর্মীদের সরিয়ে নিতে গিয়ে হুড়াহুড়ির পরিস্থিতি তৈরি হয়। মাইলস্টোনের এক শিক্ষার্থীযিনি সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়ার ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেনসোমবার সন্ধ্যায় জানান যে তখনও অনেক শিক্ষার্থী নিখোঁজ।

তিনি বলেনপুলিশ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা পৌঁছানোর আগে তিনি অন্তত ৩০ জনকে উদ্ধার করেছেন। পরে বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে বাধা দেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

জেটটি প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির ভবনে আঘাত করে,” তিনি বলেন। চতুর্থ ও ষষ্ঠ শ্রেণির শ্রেণিকক্ষে আঘাত লেগেছেআর প্রতিটি কক্ষে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ জন করে শিক্ষার্থী ছিল।” আরেক শিক্ষার্থী১৮ বছর বয়সী আবদু রহমানযিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যবলেনলাঠি ব্যবহার করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেয়। এলাকা সুরক্ষিত করার পর ভারী যন্ত্র এনে মাটির স্তূপ সরানো হয়। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেনকিছু মরদেহ এখনো মাটির নিচে চাপা থাকতে পারে।

দুর্ঘটনাস্থলের ছবিতে দেখা যায়দমকলকর্মীরা কালো হয়ে যাওয়া একটি ভবনের মধ্যে আটকে থাকা একটি ইঞ্জিনসদৃশ ধ্বংসাবশেষে পানি ছিটাচ্ছেন। একই সময়ে স্ট্রেচারে করে আহতদের নিয়ে যেতে দেখা যায়বিস্তৃত এক উদ্ধার অভিযান চলছে।

এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা। ১৯৮৪ সালে ঢাকার বিমানবন্দরে তীব্র বৃষ্টির মধ্যে অবতরণের চেষ্টা করার সময় একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ৪৯ জন নিহত হনকেউ বেঁচে ছিলেন না।

গত বছরের মে মাসে চট্টগ্রামে (দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর) বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ নদীতে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। ওই দুর্ঘটনায় এক স্কোয়াড্রন লিডার নিহত হনস্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

২০১৮ সালের মার্চে ঢাকা থেকে উড্ডয়ন করা একটি ফ্লাইট নেপালের কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়ে ৫০ জন মারা যান। তদন্তকারীরা জানানফ্লাইট চলাকালে ক্যাপ্টেন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী২০১৩ সালে চীন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কাছে ১৬টি এফ৭ বিজিআই জেটজে৭ বিমানের একটি সংস্করণসরবরাহ করে।

সোমবারের ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেকেই বলেনতারা যা দেখেছেন তাতে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম টুটুল (৪৩)মিলস্টোনের বাংলা ভাষার সহযোগী অধ্যাপকবলেন তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। পরে আগুন ও ধোঁয়া দেখে তিনি কলেজের প্রিন্সিপাল ও ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করেন।

আমি চোখের সামনে সঙ্গে সঙ্গে দুইটি মৃতদেহ দেখেছি,” টুটুল বলেন। এই জেট এসে আমাদের স্বপ্ন পুড়িয়ে দিলএটাই আমাকে মেরে ফেলবেআমাকে তাড়া করে বেড়াবেআমার সামনে মানবিক বিপর্যয়।” তিনি আরও বলেন, “সব শিক্ষার্থীই আমার সন্তানের মতো ছিল।