অষ্টম পরিচ্ছেদ
‘না-না, ও নিয়ে ব্যস্ত হয়ো না,’ বৃদ্ধও জিদ ধরে বলতে লাগল। আর হাঁকুপাঁকু করে গেলাসটা ঠেলে সরিয়ে দিতে গিয়ে উলটে ফেলল।
আমি আবার আগের জায়গায় গিয়ে বসলুম। বৃদ্ধ গিয়ে জানলার কাছে দাঁড়ালেন। তারপর জানলার ময়লা পরদাটা টেনে দিলেন।
‘কী হল?’ চুবুক বললেন।
গৃহকর্তা বলল, ‘ডাঁশমশা। জালিয়ে মারলে একেবারে। বাড়িটা নাবাল জমির ওপর কিনা। তাই ডাঁশমশায় থিকথিক করে।’
‘আপনে একাই থাকেন এখেনে?’ হঠাৎ প্রশ্ন করলেন চুবুক। ‘তাইলে ঘরের কোণে ওই আরেকটা বিছানা কী জন্যে?’ আঙুল দিয়ে মেঝের ওপর পাতা চটটা দেখিয়ে দিলেন এবার।
উত্তরের জন্যে অপেক্ষা না করেই পরক্ষণে উঠে পড়লেন চুবুক। তারপর জানলার পরদাটা টেনে সরিয়ে দিয়ে বাইরে মাথাটা ঝুঁকিয়ে দিলেন। আমিও উঠে পড়ে জানলার কাছে এলুম।
জানলা দিয়ে টিলা আর জঙ্গলের অনেকখানি দৃশ্য চোখে পড়ল। বাড়ি থেকে রাস্তাটা ঢেউ-খেলিয়ে উ’চুনিচু হতে-হতে দূরে চলে গেছে। আর সেই উ’চু-হয়ে-ওঠা দিগন্তে লাল-হয়ে-আসা আকাশের পটভূমিতে চার-চারটে ছুটন্ত বিন্দু আমাদের নজরে পড়ল।
‘ডাঁশমশা? না?’ রুক্ষভাবে চিৎকার করে চুবুক বৃদ্ধকে বললেন। তারপর লোকটার চুপসে-যাওয়া চেহারাটার দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে যোগ করে দিলেন, ‘যা দেখছি তাতে বোঝা যাচ্ছে বুড়া নিজেই এটা ডাঁশমশা। চলি এস, বরিস!’
ছুটে নিচে নেমে চুবুক এক মুহূর্তের জন্যে থেমে একটা জঞ্জালের স্তূপে জ্বলন্ত দেশালাই-কাঠি একটা ছুড়ে দিলেন। জঞ্জালের স্তূপে পড়ে থাকা কাগজটায় আগুন ধরে উঠল, আর সেই আগুন ঘরের মেঝেয় ছড়ানো খড়ের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আর মিনিট-খানেকের মধ্যেই জঞ্জালে-ভরা ঘরখানা দাউদাউ করে জ্বলে উঠত, যদি-না চুবুক হঠাৎ অন্যরকম মনস্থ করে পা দিয়ে মাড়িয়ে আগুনটা নিবিয়ে দিতেন। আমাকে টেনে নিয়ে দরজার দিকে এগোতে-এগোতে ত্রুটিস্বীকারের ভঙ্গিতে উনি বললেন:
‘আগুন না-দেয়াই ভালো। এ-সব তো পরে আমাদেরই সম্পত্তি হবে।’