ঢাকায় তিন দিনের আবহাওয়া: ভারী বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার শঙ্কা
ঢাকায় আগামী তিন দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মৌসুমি বায়ুর প্রভাব এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের ফলে রাজধানীতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
সোমবার (২২ জুলাই) থেকেই শুরু হওয়া এই বৃষ্টিপাত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে বজ্রসহ ভারী বর্ষণ এবং কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।
ঢাকার মিরপুর, খিলগাঁও, মগবাজার, নিকেতনের মতো এলাকায় জলজটের আশঙ্কা থাকায় নগরবাসীকে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।

চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা: সমুদ্রবন্দর ও নদীবন্দরগুলোর জন্য সতর্কতা সংকেত
বঙ্গোপসাগরের ওপর সক্রিয় লঘুচাপের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের আগামী তিন দিন অতিরিক্ত সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ৪০–৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।
পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও ঝালকাঠির নদীবন্দর এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ: বৃষ্টিপাতের প্রবণতা ও সম্ভাব্য ফসল ক্ষয়
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে আগামী তিন দিন মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। রংপুরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকতে পারে, যার ফলে নিম্নাঞ্চলে পানি জমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এতে বীজতলা ও পাটের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ময়মনসিংহ অঞ্চলেও প্রতিদিন বিকেলের দিকে মেঘ জমে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। ধানচাষ ও সবজি খেতে পানি জমে যাওয়ায় ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।

সিলেট ও চট্টগ্রাম: পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সতর্কতা
সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায়—বিশেষ করে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে—বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, ফটিকছড়ি এবং বান্দরবানেও একই ধরনের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
পাহাড়ি বাসিন্দাদের নিচু এলাকা ত্যাগ করে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও প্লাবনের ঝুঁকি
বৃষ্টিপাতের কারণে যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, কুশিয়ারা, সুরমা ও গোমতী নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। আগামী তিন দিন এসব নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।
এই নদীগুলোর মধ্যে বিশেষত গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও শরীয়তপুর অঞ্চলে নদী প্লাবনের ঝুঁকি রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

বিমান ও নৌ যোগাযোগে সম্ভাব্য বিঘ্ন
আগামী তিন দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত এবং সমুদ্র-নদীতে উত্তাল পরিস্থিতির কারণে অভ্যন্তরীণ বিমান ও নৌ চলাচলে কিছু বিঘ্ন ঘটতে পারে। বিমানবন্দরে দৃষ্টিসীমা কমে যেতে পারে। এতে উড়োজাহাজ ওঠানামায় সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং নৌরুটে দমকা হাওয়ায় ফেরি চলাচল সীমিত হতে পারে।
ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-ভোলা এবং ঢাকা-চাঁদপুর নৌরুটে যাত্রীদের আগেভাগে তথ্য জেনে ভ্রমণ করতে বলা হয়েছে।
নাগরিকদের জন্য সতর্কতা ও প্রস্তুতির আহ্বান
সার্বিকভাবে আগামী তিন দিন বাংলাদেশে বৃষ্টিপ্রবণ, ঝোড়ো হাওয়াপূর্ণ এবং নদী-সাগর উত্তাল থাকবে। তাই নগরবাসীকে বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা ও রেইনকোট সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে নদী ও খালপারের বাসিন্দাদের নিরাপদে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘনিষ্ঠ নজরদারিতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে ৩৩৩ অথবা স্থানীয় প্রশাসনের হটলাইনের নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















