১১:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের টেক জায়ান্টদের রক্ষায় শুল্ক হুমকি: ট্রাম্প প্রশাসনের বৈশ্বিক বাণিজ্য কৌশল

প্রযুক্তি খাতকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধকে কাজে লাগিয়ে দেশটির প্রযুক্তি খাত, বিশেষ করে ইন্টারনেটভিত্তিক বড় কোম্পানিগুলোকে রক্ষার কৌশল নিয়েছে। ট্রাম্প সরকার বিভিন্ন দেশকে হুমকি দিচ্ছে যে, তারা যদি মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নতুন কর, নিয়ন্ত্রণ বা শুল্ক আরোপ করে, তাহলে তাদের পণ্যের ওপরও ১৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে।

এই পদক্ষেপগুলো ১ আগস্টের মধ্যে কার্যকর হওয়ার কথা, যা নিজস্ব সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু: ইউরোপ, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল

ব্রাজিল, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা এখনও জটিল অবস্থায় রয়েছে। এসব দেশ মার্কিন টেক কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন কর আরোপে আগ্রহী। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট ও ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ জেমিসন গ্রিয়ার, যাঁদের দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে শুক্রবার ওয়াশিংটনে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

Trump cuts off US trade talks with Canada, shattering optimism over tariff  deals | The Business Standard

কানাডার সঙ্গে দ্বন্দ্ব: ডিজিটাল কর ও আলোচনার ভাঙন

গত মাসে ট্রাম্প হঠাৎ করেই কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বাতিল করেন, কারণ দেশটি একটি ডিজিটাল সার্ভিস কর চালু করতে যাচ্ছিল। মার্কিন চাপের মুখে কানাডা দ্রুত সেই করের সিদ্ধান্ত বাতিল করে, যাতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।

এটি একটি পরিষ্কার বার্তা দেয় যে, ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন প্রযুক্তি খাতকে বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

টেক কোম্পানির উদ্বেগ: বিদেশি নিয়ন্ত্রণে বিনিয়োগ ব্যাহত

বড় টেক কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, বিদেশি কর ও নিয়মকানুন তাদের যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের সক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যদিও দেশের অভ্যন্তরে তারা ট্রাম্প প্রশাসনের নানা চ্যালেঞ্জ, যেমন অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্ত ও শুল্ক বাড়ার প্রভাব মোকাবিলা করছে, বিদেশে তারা ট্রাম্পের কাছ থেকে অনেক সুবিধা পাচ্ছে।

Donald Trump teases Indonesia trade deal after tariff threats: 'Details to  follow' | Today News

প্রশাসনের মিত্ররা: লুটনিক, গ্রিয়ার ও বেসেন্ট

ট্রাম্পের বাণিজ্য টিম ইন্দোনেশিয়াকে রাজি করিয়েছে যেন তারা সিনেমা বা সফটওয়্যার ডাউনলোডের মতো ইলেকট্রনিক পণ্যে শুল্ক আরোপ না করে। ভিয়েতনামের সঙ্গেও এমন একটি চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে, যদিও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তা ঘোষণা হয়নি। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাই জানিয়েছেন, ট্রাম্প মার্কিন কোম্পানিগুলোর বৈদেশিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ইউরোপ, কানাডা ও ভারতের সঙ্গে চাপ ও দরকষাকষি

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডিজিটাল ট্যাক্স নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি, তবে অতীতে তারা গুগলের মতো বড় কোম্পানিকে বিশাল অঙ্কের জরিমানা করেছিল। ট্রাম্প তখন তাদের “ট্যাক্স লেডি” বলে কটাক্ষ করেছিলেন।

কানাডার ডিজিটাল কর বছরে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি করত মার্কিন কোম্পানিগুলোর, এবং করের মেয়াদ পেছনে নিয়ে ২০২২ সাল থেকে কার্যকর করার পরিকল্পনাও ছিল। শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প হস্তক্ষেপ করে তা আটকে দেন।

ভারতের ক্ষেত্রেও মার্চে দেশটি ডিজিটাল কর প্রত্যাহার করে নেয়। এখনো আলোচনায় আছে, তবে ট্রাম্প বলেছেন, চুক্তি খুব কাছাকাছি।

Ex-Brazil President Bolsonaro charged over alleged coup that included plan  to poison Lula

ব্রাজিল ও বলসোনারো ইস্যু

গত সপ্তাহে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ব্রাজিল থেকে আসা পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক আরোপ করা হবে। এরপরই গ্রিয়ার ব্রাজিলের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত শুরু করেন, যা দেশটির ডিজিটাল ট্রেড ও ইলেকট্রনিক পেমেন্ট নীতিমালাকে কেন্দ্র করে। ট্রাম্প মনে করেন, ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তাঁর ঘনিষ্ঠ জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে নেওয়া আইনি পদক্ষেপ একটি রাজনৈতিক প্রতিশোধ।

প্রযুক্তি খাতের সমর্থন ও সমালোচনা

টেক খাতের নেতারা যেমন মেটার মার্ক জাকারবার্গ ও গুগলের সুন্দর পিচাই ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে ফ্লোরিডায় দেখা করতে গিয়েছিলেন। বৈঠকগুলোতে বিদেশি নীতিমালার বিরুদ্ধে নীতিগত সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে।

USA: description United States

তবে সমালোচকরা বলছেন, এই শিল্প আগে থেকেই সফল, তাই সরকারি সহায়তা দেওয়া যৌক্তিক নয়। বরং অন্য খাতগুলো যেগুলো শুল্কের প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের অবহেলা করা হচ্ছে।

এককাট্টা অবস্থান এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বিদেশি নিয়ন্ত্রণ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে দীর্ঘদিন লড়াই করে আসছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন কৌশল সেই লড়াইকে নতুন মাত্রা দিয়েছে, যেখানে শুল্ক হুমকি, কূটনৈতিক চাপ এবং বাণিজ্য আলোচনা মিলিয়ে টেক জায়ান্টদের বিশ্ববাজারে আধিপত্য বজায় রাখতে সহায়তা করা হচ্ছে।

কম্পিউটার অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ম্যাট শ্রুয়ার্স বলেন, “এটি এখন একটি খুবই তীক্ষ্ণ মনোযোগের কেন্দ্র।”

যুক্তরাষ্ট্রের টেক জায়ান্টদের রক্ষায় শুল্ক হুমকি: ট্রাম্প প্রশাসনের বৈশ্বিক বাণিজ্য কৌশল

১০:০০:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

প্রযুক্তি খাতকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধকে কাজে লাগিয়ে দেশটির প্রযুক্তি খাত, বিশেষ করে ইন্টারনেটভিত্তিক বড় কোম্পানিগুলোকে রক্ষার কৌশল নিয়েছে। ট্রাম্প সরকার বিভিন্ন দেশকে হুমকি দিচ্ছে যে, তারা যদি মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নতুন কর, নিয়ন্ত্রণ বা শুল্ক আরোপ করে, তাহলে তাদের পণ্যের ওপরও ১৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে।

এই পদক্ষেপগুলো ১ আগস্টের মধ্যে কার্যকর হওয়ার কথা, যা নিজস্ব সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু: ইউরোপ, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল

ব্রাজিল, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা এখনও জটিল অবস্থায় রয়েছে। এসব দেশ মার্কিন টেক কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন কর আরোপে আগ্রহী। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট ও ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ জেমিসন গ্রিয়ার, যাঁদের দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে শুক্রবার ওয়াশিংটনে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

Trump cuts off US trade talks with Canada, shattering optimism over tariff  deals | The Business Standard

কানাডার সঙ্গে দ্বন্দ্ব: ডিজিটাল কর ও আলোচনার ভাঙন

গত মাসে ট্রাম্প হঠাৎ করেই কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বাতিল করেন, কারণ দেশটি একটি ডিজিটাল সার্ভিস কর চালু করতে যাচ্ছিল। মার্কিন চাপের মুখে কানাডা দ্রুত সেই করের সিদ্ধান্ত বাতিল করে, যাতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।

এটি একটি পরিষ্কার বার্তা দেয় যে, ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন প্রযুক্তি খাতকে বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

টেক কোম্পানির উদ্বেগ: বিদেশি নিয়ন্ত্রণে বিনিয়োগ ব্যাহত

বড় টেক কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, বিদেশি কর ও নিয়মকানুন তাদের যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের সক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যদিও দেশের অভ্যন্তরে তারা ট্রাম্প প্রশাসনের নানা চ্যালেঞ্জ, যেমন অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্ত ও শুল্ক বাড়ার প্রভাব মোকাবিলা করছে, বিদেশে তারা ট্রাম্পের কাছ থেকে অনেক সুবিধা পাচ্ছে।

Donald Trump teases Indonesia trade deal after tariff threats: 'Details to  follow' | Today News

প্রশাসনের মিত্ররা: লুটনিক, গ্রিয়ার ও বেসেন্ট

ট্রাম্পের বাণিজ্য টিম ইন্দোনেশিয়াকে রাজি করিয়েছে যেন তারা সিনেমা বা সফটওয়্যার ডাউনলোডের মতো ইলেকট্রনিক পণ্যে শুল্ক আরোপ না করে। ভিয়েতনামের সঙ্গেও এমন একটি চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে, যদিও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তা ঘোষণা হয়নি। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাই জানিয়েছেন, ট্রাম্প মার্কিন কোম্পানিগুলোর বৈদেশিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ইউরোপ, কানাডা ও ভারতের সঙ্গে চাপ ও দরকষাকষি

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডিজিটাল ট্যাক্স নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি, তবে অতীতে তারা গুগলের মতো বড় কোম্পানিকে বিশাল অঙ্কের জরিমানা করেছিল। ট্রাম্প তখন তাদের “ট্যাক্স লেডি” বলে কটাক্ষ করেছিলেন।

কানাডার ডিজিটাল কর বছরে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি করত মার্কিন কোম্পানিগুলোর, এবং করের মেয়াদ পেছনে নিয়ে ২০২২ সাল থেকে কার্যকর করার পরিকল্পনাও ছিল। শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প হস্তক্ষেপ করে তা আটকে দেন।

ভারতের ক্ষেত্রেও মার্চে দেশটি ডিজিটাল কর প্রত্যাহার করে নেয়। এখনো আলোচনায় আছে, তবে ট্রাম্প বলেছেন, চুক্তি খুব কাছাকাছি।

Ex-Brazil President Bolsonaro charged over alleged coup that included plan  to poison Lula

ব্রাজিল ও বলসোনারো ইস্যু

গত সপ্তাহে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ব্রাজিল থেকে আসা পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক আরোপ করা হবে। এরপরই গ্রিয়ার ব্রাজিলের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত শুরু করেন, যা দেশটির ডিজিটাল ট্রেড ও ইলেকট্রনিক পেমেন্ট নীতিমালাকে কেন্দ্র করে। ট্রাম্প মনে করেন, ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তাঁর ঘনিষ্ঠ জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে নেওয়া আইনি পদক্ষেপ একটি রাজনৈতিক প্রতিশোধ।

প্রযুক্তি খাতের সমর্থন ও সমালোচনা

টেক খাতের নেতারা যেমন মেটার মার্ক জাকারবার্গ ও গুগলের সুন্দর পিচাই ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে ফ্লোরিডায় দেখা করতে গিয়েছিলেন। বৈঠকগুলোতে বিদেশি নীতিমালার বিরুদ্ধে নীতিগত সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে।

USA: description United States

তবে সমালোচকরা বলছেন, এই শিল্প আগে থেকেই সফল, তাই সরকারি সহায়তা দেওয়া যৌক্তিক নয়। বরং অন্য খাতগুলো যেগুলো শুল্কের প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের অবহেলা করা হচ্ছে।

এককাট্টা অবস্থান এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বিদেশি নিয়ন্ত্রণ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে দীর্ঘদিন লড়াই করে আসছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন কৌশল সেই লড়াইকে নতুন মাত্রা দিয়েছে, যেখানে শুল্ক হুমকি, কূটনৈতিক চাপ এবং বাণিজ্য আলোচনা মিলিয়ে টেক জায়ান্টদের বিশ্ববাজারে আধিপত্য বজায় রাখতে সহায়তা করা হচ্ছে।

কম্পিউটার অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ম্যাট শ্রুয়ার্স বলেন, “এটি এখন একটি খুবই তীক্ষ্ণ মনোযোগের কেন্দ্র।”