০১:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
আধুনিক জীবন ও উদারচিন্তা ভয়ের পরিবেশে: বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি: গমজাত পণ্যের দামের ওপর প্রভাব শয়ে শয়ে মুসলমানকে বেআইনিভাবে বাংলাদেশে তাড়াচ্ছে ভারত, বলছে হিউমান রাইটস ওয়াচ প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৪২) রওশন জামিল — চলচ্চিত্র, মঞ্চ ও নৃত্যজগতের আলোকবর্তিকা ঢাকাসহ প্রধান জেলাগুলোতে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস ও সমুদ্র-বন্দরগুলোতে সতর্কতা বরিশালের পেয়ারা: আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হতে পারে গোপালগঞ্জের সহিংসতা: গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ও আসকের তদন্ত প্রতিবেদন বাংলাদেশের হারের বিশ্লেষণ: ঘরের মাঠে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের কাছে লজ্জাজনক পরাজয় আওয়ামী লীগ বিরোধিতাকে পুঁজি করেই কি রাজনীতি করতে চায় এনসিপি?

‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে হরিয়ানায় আটক করে অস্থায়ী শিবিরে রাখা হচ্ছে ভারতীয় বাঙালিদের

  • Sarakhon Report
  • ০৫:২৫:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
  • 13

কমিউনিটি হলে অস্থায়ী আটক শিবির বানিয়েছে গুরুগ্রাম পুলিশ - প্রতীকী ছবি

অন্যদিনের মতোই সেদিন কাগজ-ভাঙা বোতল কুড়োতে রাজধানী দিল্লি লাগোয়া গুরুগ্রামের রাস্তায় ঘুরছিলেন পাথর আলি শেখ।

আদতে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বাসিন্দা পাথর আলি শেখ অনেক বছর ধরেই গুরুগ্রামে ভাঙ্গারির কাজ করেন।

“হঠাৎই একটা পুলিশের গাড়ি থেকে আমাকে ডাকল, কাগজপত্র কী আছে দেখতে চাইল। আমরা তো নোংরা ঘাঁটাঘাঁটি করি, আধার, ভোটার কার্ডের মতো মূল্যবান জিনিষ কি আর সঙ্গে থাকে! আমরা তো ফোনও রাখি না কাজের সময়ে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. শেখ।

“কাগজ দেখাতে পারিনি বলে পুলিশের সাহেব আমাকে বলল গাড়িতে বোস। আমরা বললাম কেন স্যার গাড়িতে বসতে বলছেন? তো বলে থানায় চল, কাজ আছে,” জানাচ্ছিলেন পাথর আলি শেখ।

এই ঘটনা গত শনিবার, ১৯শে জুলাইয়ের।

তিনি বলছিলেন, “আমাদের নিয়ে গেল সেক্টর ৪৩ থানায়। সেখানে আমার মতো ১০ জনকে এনেছিল। আমাদের বলল পরিচয় যাচাই করা হবে আমাদের দেশ-বাড়ি যে থানায়, সেখান থেকে। সব নাম ঠিকানা নিয়ে রাতে আবার চালান করে দিল সেক্টর ১০এ-তে। একটা কমিনিউটি হলে রাখা হলো। সেখানে প্রচুর মানুষ – সবাইকে একইভাবে ধরে এনেছে।”

এই ভবনে আটক হওয়া অনেককে রাখা হয়েছে

অস্থায়ী শিবিরে বহু মানুষ

“আমরা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ছিলাম আর আসামের লোকও ছিল। সবাই বাঙালি। অনেক লোক গাড়িতে করে নিয়ে আসছিল পুলিশ। দেখে তো খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে বাঙালিদের এভাবে কেন অ্যারেস্ট করছে! আমরা মোট ৭৪ জন ছিলাম। দুই বেলা ভাত তরকারি খেতে দিত,” বলছিলেন মি. শেখ।

তার বাড়ি নদীয়া জেলার যে এলাকায়, সেই নবদ্বীপ থানার ওসি মি. শেখের সব পরিচয়পত্র যাচাই করে একটি চিঠি গুরুগ্রাম পুলিশের কাছে পাঠানোর পরে বুধবার দিবাগত রাত একটা নাগাদ পাথর আলি শেখ ছাড়া পেয়েছেন।

তার প্রশ্ন, “আমি তো ভারতীয়। সব কাগজ তো দেখিয়েছিলাম। তবুও আমাকে চারদিন আটকিয়ে রাখল!”

তার সঙ্গে মোট ২৬ জনকে ছাড়া হয়েছে, তবে এখনো কয়েকজন সেখানে আটক আছেন বলে বুধবার দুপুরে জানিয়েছেন পাথর আলি শেখ।

গুরুগ্রামের বহু বাংলাভাষীকেই এভাবে পুলিশ আটক করছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন সেখানকার এক শ্রমিক সংগঠক মুকুল হাসান শেখ।

তার কথায়, “আমি গুরুগ্রামের আট-দশটা সেক্টরে ঘুরে দেখছি আসাম আর পশ্চিমবঙ্গের বহু বাঙালি মানুষদের ধরা হচ্ছে। কাজের জায়গা থেকে তুলে আনছে অনেককে। কোনো কথাবার্তা কিছু নেই, তুলে নিয়ে যাচ্ছে নাকি ভেরিফিকেশন করবে! আমরা বলছি যে ভেরিফিকেশন করার তো সেটা কর। নেট দিয়ে ভেরিফাই করতে কতক্ষণ আর লাগে! কিন্তু কাউকে দুই-তিন এমনকি ছয়দিন পর্যন্ত আটক রাখবে কেন!

“এর মধ্যে আবার মুসলমানদের বেছে বেছে আটক করছে। একই জেলার বাসিন্দা হিন্দু পদবী শুনে তার আধার কার্ড দেখে ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু মুসলমান হলেই তাকে থানায় নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে ওই কমিউনিটি হলে আটকিয়ে রাখছে। আবার আসামের মানুষরা যখন এনআরসি-র নথি দেখাচ্ছে, সেগুলোকেও জাল নথি বলছে পুলিশ,” বলছিলেন মি. শেখ।

বিবিসি বাংলা এর আগে প্রতিবেদন করেছিল যে গুরুগ্রামে অন্তত ছয়জন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাকে বাংলাদেশি সন্দেহ করে আটক করে শারীরিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে তাদের পরিবার অভিযোগ করেছে।

মুকুল হাসান শেখ বলছিলেন, বহু মানুষকে এভাবে আটক করায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে গুরুগ্রামের পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে।

অস্থায়ী শিবিরের ভেতরে এই আটক হওয়া ব্যক্তিদের কয়েকদিন আগে দেখতে পেয়েছিলেন আইনজীবী সুপান্থ সিনহা

এধরনের ‘শিবির বেআইনি’

যেখানে পাথর আলি শেখকে আটকিয়ে রাখা হয়েছিল, গুরুগ্রামের সেক্টর ১০এ-র কমিনিউটি হলে অস্থায়ী আটক শিবিরে দিন কয়েক আগে প্রায় দুশোজনকে দেখতে পেয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুপান্থ সিনহা।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “ওই সেন্টারে শুধু গুরুগ্রামের ওয়েস্ট জোন থেকে যাদের আটক করেছে, তাদের রাখা হচ্ছে। এরকম অন্যান্য জোনেও অস্থায়ী শিবির করা হয়েছে বলে শুনেছি, কিন্তু আমি নিজে সেইসব জায়গায় যাইনি।”

“খুবই অমানবিক, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তিন-চারদিন ধরে আটক রাখা হয়েছে এদের। পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হচ্ছে না,” জানাচ্ছিলেন মি. সিনহা।

গত কয়েক মাস ধরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে।

রাজস্থান, গুজরাত, ছত্তিশগড়, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ ও ওড়িশায় অবৈধ বাংলাদেশি চিহ্নিত করতে গিয়ে ভারতের বাংলাভাষীদেরও আটক করা হচ্ছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই মুসলমান, তবে হিন্দুদেরও আটক করা হচ্ছে।

আবার এরকম ঘটনাও সামনে এসেছে যে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও তাকে বাংলাদেশে পুশ আউট করে দেওয়া হয়েছে।

পরিচয়পত্রের নথি যাচাইয়ের জন্য এভাবে কাউকে আটকিয়ে রাখা বেআইনি বলে জানাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুপান্থ সিনহা।

তিনি বলছিলেন, “প্রথমে তো আমাদেরও ওই কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকতে দেয়নি। তখন আমরা থানায় যাই। সেখানে পুলিশ আমাদের বলে যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কোনো নির্দেশ আছে যে পরিচয়পত্র যাচাই করতে হবে। এরকম কোনো লিখিত নির্দেশ প্রকাশিত হয়েছে বলে তো আমরা জানি না, পুলিশও দেখায়নি।”

“তবে মৌখিকভাবে তারা আমাদের বলেন যে ওই নির্দেশেই নাকি রয়েছে কাউকে বাংলাদেশি বলে সন্দেহ হলে তাকে নাকি ৩০ দিন পর্যন্ত আটক করে রাখা যাবে। এরকম নির্দেশ যদি সত্যিই দেওয়া হয়ে থাকে, তা যেমন বেআইনি, তেমনই সংবিধানের লঙ্ঘনও।”

অন্যদিকে আটক রাখার কথা গুরুগ্রাম পুলিশ অস্বীকার করেনি, তবে তারা জানিয়েছে পরিচয় যাচাই করে ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ পাওয়ার পরেও কাউকে আটক রাখা হয়েছে–– এমন ঘটনা তাদের জানা নেই।

গুরুগ্রাম পুলিশের জনসংযোগ অফিসার সন্দীপ তুরান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ হওয়ার পরেও কাউকে আটক করে রাখা হয়েছে, এরকম তথ্য আমার কাছে নেই। যদি আপনাদের কাছে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য থাকে যে পরিচয়পত্র যাচাই করে ভারতের নাগরিকত্বের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তবু আটকে রাখা হয়েছে, তাহলে আমাদের জানান। “

বিবিসি নিউজ বাংলা, কলকাতা

আধুনিক জীবন ও উদারচিন্তা ভয়ের পরিবেশে: বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা

‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে হরিয়ানায় আটক করে অস্থায়ী শিবিরে রাখা হচ্ছে ভারতীয় বাঙালিদের

০৫:২৫:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

অন্যদিনের মতোই সেদিন কাগজ-ভাঙা বোতল কুড়োতে রাজধানী দিল্লি লাগোয়া গুরুগ্রামের রাস্তায় ঘুরছিলেন পাথর আলি শেখ।

আদতে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বাসিন্দা পাথর আলি শেখ অনেক বছর ধরেই গুরুগ্রামে ভাঙ্গারির কাজ করেন।

“হঠাৎই একটা পুলিশের গাড়ি থেকে আমাকে ডাকল, কাগজপত্র কী আছে দেখতে চাইল। আমরা তো নোংরা ঘাঁটাঘাঁটি করি, আধার, ভোটার কার্ডের মতো মূল্যবান জিনিষ কি আর সঙ্গে থাকে! আমরা তো ফোনও রাখি না কাজের সময়ে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. শেখ।

“কাগজ দেখাতে পারিনি বলে পুলিশের সাহেব আমাকে বলল গাড়িতে বোস। আমরা বললাম কেন স্যার গাড়িতে বসতে বলছেন? তো বলে থানায় চল, কাজ আছে,” জানাচ্ছিলেন পাথর আলি শেখ।

এই ঘটনা গত শনিবার, ১৯শে জুলাইয়ের।

তিনি বলছিলেন, “আমাদের নিয়ে গেল সেক্টর ৪৩ থানায়। সেখানে আমার মতো ১০ জনকে এনেছিল। আমাদের বলল পরিচয় যাচাই করা হবে আমাদের দেশ-বাড়ি যে থানায়, সেখান থেকে। সব নাম ঠিকানা নিয়ে রাতে আবার চালান করে দিল সেক্টর ১০এ-তে। একটা কমিনিউটি হলে রাখা হলো। সেখানে প্রচুর মানুষ – সবাইকে একইভাবে ধরে এনেছে।”

এই ভবনে আটক হওয়া অনেককে রাখা হয়েছে

অস্থায়ী শিবিরে বহু মানুষ

“আমরা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ছিলাম আর আসামের লোকও ছিল। সবাই বাঙালি। অনেক লোক গাড়িতে করে নিয়ে আসছিল পুলিশ। দেখে তো খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে বাঙালিদের এভাবে কেন অ্যারেস্ট করছে! আমরা মোট ৭৪ জন ছিলাম। দুই বেলা ভাত তরকারি খেতে দিত,” বলছিলেন মি. শেখ।

তার বাড়ি নদীয়া জেলার যে এলাকায়, সেই নবদ্বীপ থানার ওসি মি. শেখের সব পরিচয়পত্র যাচাই করে একটি চিঠি গুরুগ্রাম পুলিশের কাছে পাঠানোর পরে বুধবার দিবাগত রাত একটা নাগাদ পাথর আলি শেখ ছাড়া পেয়েছেন।

তার প্রশ্ন, “আমি তো ভারতীয়। সব কাগজ তো দেখিয়েছিলাম। তবুও আমাকে চারদিন আটকিয়ে রাখল!”

তার সঙ্গে মোট ২৬ জনকে ছাড়া হয়েছে, তবে এখনো কয়েকজন সেখানে আটক আছেন বলে বুধবার দুপুরে জানিয়েছেন পাথর আলি শেখ।

গুরুগ্রামের বহু বাংলাভাষীকেই এভাবে পুলিশ আটক করছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন সেখানকার এক শ্রমিক সংগঠক মুকুল হাসান শেখ।

তার কথায়, “আমি গুরুগ্রামের আট-দশটা সেক্টরে ঘুরে দেখছি আসাম আর পশ্চিমবঙ্গের বহু বাঙালি মানুষদের ধরা হচ্ছে। কাজের জায়গা থেকে তুলে আনছে অনেককে। কোনো কথাবার্তা কিছু নেই, তুলে নিয়ে যাচ্ছে নাকি ভেরিফিকেশন করবে! আমরা বলছি যে ভেরিফিকেশন করার তো সেটা কর। নেট দিয়ে ভেরিফাই করতে কতক্ষণ আর লাগে! কিন্তু কাউকে দুই-তিন এমনকি ছয়দিন পর্যন্ত আটক রাখবে কেন!

“এর মধ্যে আবার মুসলমানদের বেছে বেছে আটক করছে। একই জেলার বাসিন্দা হিন্দু পদবী শুনে তার আধার কার্ড দেখে ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু মুসলমান হলেই তাকে থানায় নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে ওই কমিউনিটি হলে আটকিয়ে রাখছে। আবার আসামের মানুষরা যখন এনআরসি-র নথি দেখাচ্ছে, সেগুলোকেও জাল নথি বলছে পুলিশ,” বলছিলেন মি. শেখ।

বিবিসি বাংলা এর আগে প্রতিবেদন করেছিল যে গুরুগ্রামে অন্তত ছয়জন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাকে বাংলাদেশি সন্দেহ করে আটক করে শারীরিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে তাদের পরিবার অভিযোগ করেছে।

মুকুল হাসান শেখ বলছিলেন, বহু মানুষকে এভাবে আটক করায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে গুরুগ্রামের পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে।

অস্থায়ী শিবিরের ভেতরে এই আটক হওয়া ব্যক্তিদের কয়েকদিন আগে দেখতে পেয়েছিলেন আইনজীবী সুপান্থ সিনহা

এধরনের ‘শিবির বেআইনি’

যেখানে পাথর আলি শেখকে আটকিয়ে রাখা হয়েছিল, গুরুগ্রামের সেক্টর ১০এ-র কমিনিউটি হলে অস্থায়ী আটক শিবিরে দিন কয়েক আগে প্রায় দুশোজনকে দেখতে পেয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুপান্থ সিনহা।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “ওই সেন্টারে শুধু গুরুগ্রামের ওয়েস্ট জোন থেকে যাদের আটক করেছে, তাদের রাখা হচ্ছে। এরকম অন্যান্য জোনেও অস্থায়ী শিবির করা হয়েছে বলে শুনেছি, কিন্তু আমি নিজে সেইসব জায়গায় যাইনি।”

“খুবই অমানবিক, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তিন-চারদিন ধরে আটক রাখা হয়েছে এদের। পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হচ্ছে না,” জানাচ্ছিলেন মি. সিনহা।

গত কয়েক মাস ধরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে।

রাজস্থান, গুজরাত, ছত্তিশগড়, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ ও ওড়িশায় অবৈধ বাংলাদেশি চিহ্নিত করতে গিয়ে ভারতের বাংলাভাষীদেরও আটক করা হচ্ছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই মুসলমান, তবে হিন্দুদেরও আটক করা হচ্ছে।

আবার এরকম ঘটনাও সামনে এসেছে যে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও তাকে বাংলাদেশে পুশ আউট করে দেওয়া হয়েছে।

পরিচয়পত্রের নথি যাচাইয়ের জন্য এভাবে কাউকে আটকিয়ে রাখা বেআইনি বলে জানাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুপান্থ সিনহা।

তিনি বলছিলেন, “প্রথমে তো আমাদেরও ওই কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকতে দেয়নি। তখন আমরা থানায় যাই। সেখানে পুলিশ আমাদের বলে যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কোনো নির্দেশ আছে যে পরিচয়পত্র যাচাই করতে হবে। এরকম কোনো লিখিত নির্দেশ প্রকাশিত হয়েছে বলে তো আমরা জানি না, পুলিশও দেখায়নি।”

“তবে মৌখিকভাবে তারা আমাদের বলেন যে ওই নির্দেশেই নাকি রয়েছে কাউকে বাংলাদেশি বলে সন্দেহ হলে তাকে নাকি ৩০ দিন পর্যন্ত আটক করে রাখা যাবে। এরকম নির্দেশ যদি সত্যিই দেওয়া হয়ে থাকে, তা যেমন বেআইনি, তেমনই সংবিধানের লঙ্ঘনও।”

অন্যদিকে আটক রাখার কথা গুরুগ্রাম পুলিশ অস্বীকার করেনি, তবে তারা জানিয়েছে পরিচয় যাচাই করে ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ পাওয়ার পরেও কাউকে আটক রাখা হয়েছে–– এমন ঘটনা তাদের জানা নেই।

গুরুগ্রাম পুলিশের জনসংযোগ অফিসার সন্দীপ তুরান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ হওয়ার পরেও কাউকে আটক করে রাখা হয়েছে, এরকম তথ্য আমার কাছে নেই। যদি আপনাদের কাছে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য থাকে যে পরিচয়পত্র যাচাই করে ভারতের নাগরিকত্বের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তবু আটকে রাখা হয়েছে, তাহলে আমাদের জানান। “

বিবিসি নিউজ বাংলা, কলকাতা