০৯:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
১৬ বছর পর মঞ্চে ‘জিগসো’, ইউরোপীয় ট্যুরে রেডিওহেডের চমক ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি হারাচ্ছে স্বাধীন ভোটারদের সমর্থন সুর আর মজায় ভরপুর জাপানের নতুন অ্যানিমে ‘দ্য অবসেসড’ ডিজনিতে ফিরছেন বিটিএসের জিমিন ও জাংকুক, আসছে ‘আর ইউ শিওর?!’ সিজন–২ স্নেক সাও-স্কেলড ভিপার: এক ভয়ঙ্কর সাপের জীবন এবং বৈশিষ্ট্য টেইলর শেরিডান কীভাবে টেলিভিশনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হিট–কারখানায় পরিণত হলেন মোবাইলে ক্রোমে এআই মোড আরও সহজ করল গুগল রোলিং স্টোন স্পেশাল ও ডিজে স্নেকের গানে একদিনেই তিন ফ্রন্ট খুলল স্ট্রে কিডস হরর-কমেডি ‘মেকিং আ ব্রাইডসমেইড’ শেষ, এখন স্ট্রিমিং বিক্রির পথে কেক বানানোর কৌশল: ঘরে বসেই নিখুঁত বেকিংয়ের গাইড

মালয়েশিয়ায় একজন বাংলাদেশি শ্রমিকের জীবনসংগ্রাম: ঘামে গড়ে ওঠা ভবিষ্যৎ

বিদেশ যাত্রার স্বপ্ন ও বাস্তবতা

রাজবাড়ী জেলার এক গ্রামের তরুণ মাহমুদুল হাসান ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান জীবনের গতি পাল্টানোর আশায়। স্থানীয় একটি এনজিওর সহায়তায় ও দালালের মাধ্যমে প্রচুর টাকা ঋণ নিয়ে তিনি এই বিদেশযাত্রা করেন। উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচানো, মায়ের চিকিৎসা ও ছোট ভাই-বোনদের পড়াশোনার খরচ চালানো। কিন্তু মালয়েশিয়ায় পৌঁছে সেই স্বপ্নের জায়গাটা হয়ে দাঁড়ায় কঠিন বাস্তবতার নাম।

নির্মাণ সাইটে সূর্য ও ঘামে গড়ে ওঠা দিন

কুয়ালালামপুরের একটি নির্মাণ প্রকল্পে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন মাহমুদুল। প্রতিদিন ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠে, নাস্তা ছাড়াই কাজে বেরিয়ে পড়েন। কাজ চলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত, মাঝে এক ঘণ্টার বিরতি। তীব্র গরম, ধুলা ও ভারী মেশিনের শব্দের মধ্যে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়। দিনে প্রায় ৩০-৩৫ রিংগিত (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৫০ টাকা) আয় করেন। অথচ তার থাকার জায়গা একটি ছোট্ট ডরমিটরি যেখানে ৮ জন মিলে ঘুমান, কোনো জানালা নেই, বাথরুম শেয়ার করতে হয় সবাইকে।

প্রবাসে নিঃসঙ্গতা ও মানসিক চাপ

কাজের চাপে পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্ট, ভাষাগত সমস্যা ও মালিকদের খারাপ ব্যবহার মাহমুদুলের মানসিক অবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। প্রতিদিন রাতে ফোনে মা-বাবার কণ্ঠ শুনে চোখ ভিজে যায়। ঈদ, পূজো বা জাতীয় দিবস—সবই কেটে যায় একাকিত্বের মধ্যে। মালিকপক্ষের দমন-পীড়ন ও কিছু মালয় শ্রমিকের বৈষম্যমূলক আচরণে আত্মবিশ্বাস অনেক সময় ভেঙে পড়ে। তবু দেশের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে সব সহ্য করেন।

অর্থ পাঠানোর গল্প ও ঋণ শোধ

মাহমুদুল মাসে গড়ে ৪০-৫০ হাজার টাকা দেশে পাঠান। এতে কিছুটা করে ঋণ শোধ হয়েছে, মায়ের চিকিৎসা হয়েছে, ভাইয়ের কলেজে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু নিজের জন্য তেমন কিছুই রাখতে পারেন না। কখনও কখনও ওভারটাইম করে টাকা বাড়ানোর চেষ্টা করেন। দেশে ফিরে কিছু জমি কেনা কিংবা ছোটখাটো ব্যবসা করার স্বপ্ন দেখেন, যদিও এখনও অনেক পথ বাকি।

শ্রমিকদের অধিকার ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

মালয়েশিয়ায় এখনও অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই কাজ করেন, ফলে অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকেন। মাহমুদুল নিজে বৈধ হলেও পরিচয়পত্র নবায়ন, স্বাস্থ্যসেবা বা ছুটির বিষয়ে ন্যায্য অধিকার পান না। মাঝেমধ্যে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকেন। সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা পাওয়াও প্রায় অসম্ভব।

শেষ কথায়

মাহমুদুল হাসান শুধু একজন শ্রমিক নন, তিনি একজন সংগ্রামী মানুষ—যিনি ঘাম, ত্যাগ ও কষ্ট দিয়ে একটি পরিবারের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করছেন। তার জীবন গল্প আমাদের চোখে আনে সেই অসংখ্য অদৃশ্য নায়কের ছবি, যারা দেশের বাইরে থেকেও দেশের ভিত গড়ে তোলে। রাষ্ট্র ও সমাজের উচিত এই প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য যথাযথ সম্মান, ন্যায্য অধিকার ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা।

(এই প্রতিবেদনটি একজন বাস্তব প্রবাসী শ্রমিকের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তৈরি। নাম পরিবর্তন করা হয়েছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য।)

জনপ্রিয় সংবাদ

১৬ বছর পর মঞ্চে ‘জিগসো’, ইউরোপীয় ট্যুরে রেডিওহেডের চমক

মালয়েশিয়ায় একজন বাংলাদেশি শ্রমিকের জীবনসংগ্রাম: ঘামে গড়ে ওঠা ভবিষ্যৎ

০৩:৪৮:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

বিদেশ যাত্রার স্বপ্ন ও বাস্তবতা

রাজবাড়ী জেলার এক গ্রামের তরুণ মাহমুদুল হাসান ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান জীবনের গতি পাল্টানোর আশায়। স্থানীয় একটি এনজিওর সহায়তায় ও দালালের মাধ্যমে প্রচুর টাকা ঋণ নিয়ে তিনি এই বিদেশযাত্রা করেন। উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচানো, মায়ের চিকিৎসা ও ছোট ভাই-বোনদের পড়াশোনার খরচ চালানো। কিন্তু মালয়েশিয়ায় পৌঁছে সেই স্বপ্নের জায়গাটা হয়ে দাঁড়ায় কঠিন বাস্তবতার নাম।

নির্মাণ সাইটে সূর্য ও ঘামে গড়ে ওঠা দিন

কুয়ালালামপুরের একটি নির্মাণ প্রকল্পে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন মাহমুদুল। প্রতিদিন ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠে, নাস্তা ছাড়াই কাজে বেরিয়ে পড়েন। কাজ চলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত, মাঝে এক ঘণ্টার বিরতি। তীব্র গরম, ধুলা ও ভারী মেশিনের শব্দের মধ্যে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়। দিনে প্রায় ৩০-৩৫ রিংগিত (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৫০ টাকা) আয় করেন। অথচ তার থাকার জায়গা একটি ছোট্ট ডরমিটরি যেখানে ৮ জন মিলে ঘুমান, কোনো জানালা নেই, বাথরুম শেয়ার করতে হয় সবাইকে।

প্রবাসে নিঃসঙ্গতা ও মানসিক চাপ

কাজের চাপে পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্ট, ভাষাগত সমস্যা ও মালিকদের খারাপ ব্যবহার মাহমুদুলের মানসিক অবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। প্রতিদিন রাতে ফোনে মা-বাবার কণ্ঠ শুনে চোখ ভিজে যায়। ঈদ, পূজো বা জাতীয় দিবস—সবই কেটে যায় একাকিত্বের মধ্যে। মালিকপক্ষের দমন-পীড়ন ও কিছু মালয় শ্রমিকের বৈষম্যমূলক আচরণে আত্মবিশ্বাস অনেক সময় ভেঙে পড়ে। তবু দেশের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে সব সহ্য করেন।

অর্থ পাঠানোর গল্প ও ঋণ শোধ

মাহমুদুল মাসে গড়ে ৪০-৫০ হাজার টাকা দেশে পাঠান। এতে কিছুটা করে ঋণ শোধ হয়েছে, মায়ের চিকিৎসা হয়েছে, ভাইয়ের কলেজে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু নিজের জন্য তেমন কিছুই রাখতে পারেন না। কখনও কখনও ওভারটাইম করে টাকা বাড়ানোর চেষ্টা করেন। দেশে ফিরে কিছু জমি কেনা কিংবা ছোটখাটো ব্যবসা করার স্বপ্ন দেখেন, যদিও এখনও অনেক পথ বাকি।

শ্রমিকদের অধিকার ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

মালয়েশিয়ায় এখনও অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই কাজ করেন, ফলে অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকেন। মাহমুদুল নিজে বৈধ হলেও পরিচয়পত্র নবায়ন, স্বাস্থ্যসেবা বা ছুটির বিষয়ে ন্যায্য অধিকার পান না। মাঝেমধ্যে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকেন। সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা পাওয়াও প্রায় অসম্ভব।

শেষ কথায়

মাহমুদুল হাসান শুধু একজন শ্রমিক নন, তিনি একজন সংগ্রামী মানুষ—যিনি ঘাম, ত্যাগ ও কষ্ট দিয়ে একটি পরিবারের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করছেন। তার জীবন গল্প আমাদের চোখে আনে সেই অসংখ্য অদৃশ্য নায়কের ছবি, যারা দেশের বাইরে থেকেও দেশের ভিত গড়ে তোলে। রাষ্ট্র ও সমাজের উচিত এই প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য যথাযথ সম্মান, ন্যায্য অধিকার ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা।

(এই প্রতিবেদনটি একজন বাস্তব প্রবাসী শ্রমিকের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তৈরি। নাম পরিবর্তন করা হয়েছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য।)