রাজনৈতিক বিভাজনে নতুন চ্যালেঞ্জ প্রেমে
জেনারেশন জেড বা ‘জেন জি’ তরুণদের মধ্যে প্রেম বা সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাজনীতি একটি বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে তরুণ নারীরা যেখানে অধিকাংশই ডেমোক্র্যাটপন্থী, সেখানে অনেক তরুণ পুরুষ ডানপন্থায় ঝুঁকছেন। এনবিসি নিউজের এপ্রিল মাসের এক জরিপ অনুযায়ী, ৫৩ শতাংশ জেন জি নারী ডেমোক্র্যাট হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন, অথচ পুরুষদের মধ্যে এই সংখ্যা মাত্র ৩৫ শতাংশ।
এক তিক্ত প্রথম ডেটের অভিজ্ঞতা
২৩ বছর বয়সী কেলি শিয়া, যিনি ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন, একবার এক ছেলের সঙ্গে ডেটে গিয়েছিলেন। ডেট শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা পরে ছেলেটি উপস্থিত হয়। কেলি তাকে জিজ্ঞেস করেন, “তোমার সবচেয়ে বিতর্কিত মতামত কী?” উত্তর আসে—“আমি মনে করি সমকামিতা ভুল।” কেলি বলেন, “আমি রাজনীতিতে ভিন্নমত মেনে নিতে পারি, কিন্তু মানবাধিকার বিষয়ে আমি কোনো আপস করি না।”
তিনি বলেন, যদি কোনো ছেলের প্রোফাইলে ‘রক্ষণশীল’ লেখা থাকে, তাহলে তিনি তা সরাসরি বাদ দেন। ডানপন্থী বা মাঝামাঝি অবস্থান নেওয়া কাউকে কিছুটা সুযোগ দিলেও চরম ডানপন্থীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে আগ্রহী নন।
ডেটিং অ্যাপেও রাজনৈতিক বিভাজনের প্রতিফলন
অনলাইনভিত্তিক ডেটিং অ্যাপগুলোতেও এই রাজনৈতিক বিভাজন স্পষ্ট। কেলি শিয়া বলেন, এখন অনেক পুরুষ ডেটিং প্রোফাইলে নিজেদের রক্ষণশীল হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। এমনকি নিউইয়র্ক বা লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো উদারপন্থী শহরেও অনেক তরুণ পুরুষ গোপনে ডানপন্থী মতামত পোষণ করেন, যদিও সামাজিকভাবে তা প্রকাশ করেন না।
নির্বাচনে বিভক্তি আরও স্পষ্ট
২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেন জি পুরুষদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন, আর ৪৭ শতাংশ কামালা হ্যারিসকে। তবে নারীদের মধ্যে ৬১ শতাংশ হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন। পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭১ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ভোটার বলেছিলেন, তারা ট্রাম্প-ভোটারকে ডেট করবেন না। অন্যদিকে, ৪৭ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছিলেন, তারা বাইডেন-ভোটারকে ডেট করবেন না।
ডানপন্থী একজনের অভিজ্ঞতা
৩০ বছর বয়সী উইন হাওয়ার্ড, যিনি জর্জটাউন ইউনিভার্সিটিতে দ্বৈত মাস্টার্স করছেন এবং একসময় মেরিন কোরে অফিসার ছিলেন, বলেন, ডেটিং অ্যাপে অনেক নারীর প্রোফাইলে রাজনৈতিক মত প্রকাশ থাকে। যদিও তিনি নিজেকে মাঝারি ডানপন্থী হিসেবে দেখেন, তবে উদারপন্থী নারীদের সঙ্গে সম্পর্কে যেতে তার কোনো আপত্তি নেই। “আমি দ্বিদলীয় সংলাপ এবং সমঝোতার প্রবল সমর্থক,” বলেন হাওয়ার্ড।
সম্পর্ক কি ভিন্ন মতাদর্শে টিকে থাকতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও যদি মূল মূল্যবোধ এবং পারস্পরিক সম্মান থাকে, তবুও সম্পর্ক টিকে থাকতে পারে। পডকাস্ট হোস্ট কিম্বারলি বিজু বলেন, “যখন কেউ খুব অল্প সময়ে কোনো কট্টর মত দেয়, তখন সেটা সাধারণত চরমপন্থার ভাবনা থেকে আসে। তখন সেটা আর রাজনীতি নয়, বরং সহানুভূতির অভাব।”
জেনারেশন জেডের জন্য পরামর্শ
বিজু বলেন, “জেনারেশন জেড এখনো তরুণ। সময়ের সঙ্গে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারে। তাই ডেটিংয়ে খোলা মন থাকা জরুরি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের কর্মজীবন ও সামাজিক নেটওয়ার্ক গড়ার শুরুতে আছি। তাই সম্পর্ক গড়তে মন খুলে যেতে হবে—যদিওবা রাজনৈতিক মত কিছুটা ভিন্ন হয়।”
রাজনৈতিক মতাদর্শ এখন ডেটিংয়ের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখছে। তবে সম্পর্কের গভীরতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং মানসিক সামঞ্জস্যই টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি। মতভেদ থাকা স্বাভাবিক, তবে তা যেন ভালোবাসার পথে অন্তরায় না হয়—এই বার্তাই দিচ্ছেন আজকের তরুণরা।