কোয়াডের নতুন কৌশল: ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্বের মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া—এই চার দেশের সমন্বয়ে গঠিত কোয়াড জোট বর্তমানে ত্রিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। যদিও জোটে নতুন সদস্য যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা এখনো সুদূরপরাহত, তবে তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে মিলিত উদ্যোগ নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে।
জাপানের দূতাবাসের রাজনৈতিক বিভাগের কর্মকর্তা নোরিয়াকি আবে ১০ জুলাই নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, “আমাদের অনেক ধরনের ধারণা আছে।” এর মধ্যে একটি হতে পারে ভারত-ফ্রান্স-ইন্দোনেশিয়ার ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা।
সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর সম্ভাবনা এখনো আলোচনার বাইরে
নয়াদিল্লিভিত্তিক ‘সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড অ্যান্ড হোলিস্টিক স্টাডিজ’ এবং জাপানি দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে আবে বলেন, ভবিষ্যতে মনোভাবপ্রসূত অন্যান্য দেশকে যুক্ত করার সম্ভাবনা অস্বীকার করা যাচ্ছে না, তবে কোয়াডের অভ্যন্তরে এখনো তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়নি। তিনি দক্ষিণ কোরিয়া ও ফিলিপাইনের মতো দেশকে জোটে যুক্ত করার সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন।
তবে তিনি উল্লেখ করেন, কোয়াডের সদস্য দেশগুলোর নিজস্ব উদ্যোগে যেমন যুক্তরাষ্ট্র বা জাপানের সঙ্গে ফিলিপাইন বা দক্ষিণ কোরিয়ার ত্রিপাক্ষিক অংশীদারিত্ব ইতোমধ্যে বিদ্যমান, এবং এ ধরনের সহযোগিতা সম্প্রসারণে জোট আগ্রহী।
আসন্ন সম্মেলন ও পূর্ববর্তী বৈঠক
জুলাই মাসের শুরুতে ওয়াশিংটনে কোয়াডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালের শেষভাগে ভারতে কোয়াড নেতৃবৃন্দের শীর্ষ সম্মেলনের পরিকল্পনা রয়েছে, যদিও তারিখ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি।
কোয়াডের কার্যকারিতা নিয়ে সমালোচনা
কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনের প্রভাব বৃদ্ধির মোকাবেলায় কোয়াডকে আরও কার্যকর ও দৃঢ় হতে হবে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার ব্রিজেশ পান্ডে বলেন, “কোয়াড এখন মূলত কথাবার্তার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। চীন এটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না বলেই মনে হয়।”
তিনি আরও বলেন, “এই সম্মেলনগুলো বরং সদস্য দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সুযোগ তৈরি করে, কিন্তু চীনকে কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক আইন কীভাবে কার্যকর করতে হবে—এসব বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান দেখা যায় না। এখানে কার্যকর বক্তব্য প্রয়োজন, এমনকি কিছুটা কঠোরও হওয়া যেতে পারে।”
ভারত সরকারের বক্তব্য: নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক আদেশে ভূমিকা
ভারত সরকারের একজন কর্মকর্তাও কোয়াডের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন, যদিও তিনি সরাসরি চীনের নাম উল্লেখ করেননি। তিনি জানান, এই জোট উপকূলবর্তী দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে সহযোগিতা এবং যে কোনো একক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কাজ করছে।
তিনি বলেন, “এটাই কোয়াডের উদ্দেশ্য—নৌ চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং একটি নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা কার্যকর রাখা।”
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কনীতি নিয়ে মতপার্থক্য
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের “পারস্পরিক” শুল্ক নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন আবে। ১০ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে অনেক মতানৈক্য রয়েছে। কিন্তু চাই বা না চাই, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। এ অঞ্চলে শক্তির শূন্যতা সৃষ্টি করা উচিত নয়।”
কোয়াড কি ‘এশিয়ান ন্যাটো’ হতে পারে?
এই প্রশ্নের জবাবে আবে বলেন, “সম্ভবত না। কারণ আমাদের নিরাপত্তা কাঠামো এক নয়। আমাদের নিজস্ব এজেন্ডা ও উদ্বেগ রয়েছে।”