অষ্টম পরিচ্ছেদ
এর প্রায় মিনিট দশেক পরে আমরা যে-ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পড়েছিলুম তার পাশ দিয়ে চারজন ঘোড়সওয়ার ঘোড়া ছুটিয়ে বেরিয়ে গেল।
চুবুক বলছিলেন, ‘জমিদার-বাড়ি চলল ওরা। মেঝেয় চট্টের থলি পাতা দেখেই অনুমান করেছিলাম ব্যাটা বুড়া একা ও-বাড়িতে থাকে না। কেমন বারে বারে বুড়া জানলার ধারে যাচ্ছিল নজর করেছিলে তো? আমরা যখন নিচির ঘরে ঢং মেরে বেড়াচ্ছিলাম, বুড়া তখনই শ্বেতরক্ষীদের তলব করতে নোক পাঠিয়েছিল। চারির বেলায়ও গণ্ডগোল করছিল।
ব্র্যান্ডিটা দেখে কেমন সন্দেহ হতি নাগল- কে জানে ওর মধ্যি ই’দুর-মারা বিষ মেশাল দিইছিল কিনা। যে-সব জমিদারের সম্বব লুট হয়ে গ্যাচে, তারা যখন আমাদের অতিথ বলে জামাই-আদর করে তখন আমার কেমন জানি ভালো মনে হয় না। ওদের বিশ্বেস করি নে আমি। ওরা মুখি যা খুশি বলে ভান করতি পারে, কিন্তু ভেতরে-ভেতরে ওরা যে আমার এক লম্বরের শশুর এতে সন্দেহ নেই।’
সে রাত্তিরটা আমরা একটা গাদা-করা খড়ের গোলায় কাটালুম। অনেক রাতে বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড় এল, তারপর প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হল। কিন্তু আমরা এতে খুশিই হলুম। কুড়ের চাল দিয়ে জল না-পড়ায়, বাইরে খারাপ আবহাওয়া সত্ত্বেও ঘরের নিরাপদ আশ্রয়ে আমরা আরামে ঘুমোতে পারলুম। ভোরের আলো দেখা দিতেই চুবুক আমাকে ডেকে তুললেন।
বললেন, ‘এখন আমাদের সাবধান হতি হবে। কিছুক্ষণ থেকি আমি জেগে বসি আচি। এখন আমি এটু ঘুমুব, তুমি জেগে বসি থাক। বলা তো যায় না, এ-পথে কেউ-না-কেউ এসে পড়তি পারে। তবে তোমারও ঘুম না এসি যায়, খেয়াল থাকে যেন।’
‘না, চুবুক, আমি ঘুমোব না।’
কাড়ের বাইরে মাথা বের করে দেখলুম। পাহাড়ের নিচেই একটা ছোট নদী, তা থেকে ভাপ উঠছে। আগের দিন কোমর-সমান গভীর কাদায় ভরা একটা ডোবা পার হতে হয়েছিল আমাদের। রাত্রে গায়ের জল শুকিয়ে গিয়েছিল বটে, কিন্তু কাদাটা শুকিয়ে সারা গায়ে চট্টচটে মামড়ি পড়ে গিয়েছিল।
ভাবলুম, ‘স্নান করলে বেশ হয়। নদী তো খুব কাছেই, এক ধাপ নিচে নামলেই হয়।’