আজ সোমবার বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস ২০২৫। ২০০৮ সালের ২৮ জুলাই ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স’ বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে হেপাটাইটিস দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়। এর পর থেকে প্রতিবছর ২৮ জুলাই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এ বছর হেপাটাইটিস দিবসের প্রতিপাদ্য ‘হেপাটাইটিস: আসুন এটি ভেঙে ফেলি, হেপাটাইটিস নির্মূল এবং লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো আর্থিক, সামাজিক এবং পদ্ধতিগত বাধা – কলঙ্ক সহ – দূর করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।’
২০১১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিবসটির স্বীকৃতি দেয়। আর ভাইরাল হেপাটাইটিস বর্তমান বিশ্বের একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতি বছর ২৮ জুলাই হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আবিষ্কারক নোবেল বিজয়ী আমেরিকান চিকিৎসক প্রফেসর ব্লম বার্গ এর জন্ম তারিখকে সম্মান জানিয়ে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালিত হয়। চারদিকে ডেঙ্গু ও কভিডের ভয়াল থাবায় জনজীবন বিপর্যস্ত। আরও কোনো রোগব্যাধি আছে কিনা, তা যেন আমরা ভুলতে বসেছি। কিন্তু সচেতন না হলে ডেঙ্গু,চিকনগুনিয়া ও করোনা তো বটেই, অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধির শিকার আপনি যে কোনো মুহূর্তে হতে পারেন।
এমনই এক ভয়ানক ব্যাধি হেপাটাইটিস। সাধারণ কথায় লিভার তথা যকৃতের প্রদাহকে বলা হয় হেপাটাইটিস। কোনো ব্যক্তির হেপাটাইটিস হওয়ার অসংখ্য কারণ থাকতে পারে। তবে এর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো-বিভিন্ন ধরনের হেপাটোট্রপিক ভাইরাস। এ ধরনের ভাইরাস সরাসরি যকৃতকে সংক্রমিত করে এবং যকৃতেই বংশবৃদ্ধি করে। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি, ই, জি ইত্যাদি হলো বিভিন্ন ধরনের হেপাটোট্রপিক ভাইরাস; যা বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিসের অন্যতম কারণ।
হেপাটাইটিস শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রীক শব্দ “হিপার ” যার অর্থ লিভার এবং ল্যাটিন শব্দ আইটিস যার অর্থ প্রদাহ, অর্থাৎ হেপাটাইটিস বলতে বুঝায় লিভার কোষের গঠনগত পরিবর্তন ও প্রদাহ । আমেরিকান হেরিটেইজ ডিকশনারী অনুসারে হেপাটাইটিস হল লিভারের প্রদাহ যার কারণ সংক্রামক বা বিষক্রিয়ার দ্বারা জন্ডিস, জ্বর, লিভার ইনলার্জ এবং পেটের বেদনা প্রভৃতি ।
প্রতিবছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশেই কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট কিছু দিনের অতীতের কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণকরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরী করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। তেমনই বিশ্বব্যাপী পালনীয় সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার মানুষ ও প্রতি ৩০ সেকেন্ডে ১ জন হেপাটাইটিস বি ও সি এই দুই ভাইরাসের কারণে মৃত্যুবরণ করে।আর আমাদের দেশে প্রতি বছর ২০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে এই রোগে।
তবে আশার কথা, এই দুই নীরব প্রাণঘাতী ভাইরাস প্রতিরোধযোগ্য। আমাদের দেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ এই দুই ভাইরাসে আক্রান্ত। চিকিৎসক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার জন্য তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে আত্মনিয়োগ করা। ’আর অ্যাকিউট হেপাটাইটিসের ৩৫ শতাংশ, ক্রনিক হেপাটাইটিসের ৭৫ শতাংশ, লিভার সিরোসিসের ৬০ শতাংশ ও লিভার ক্যানসারের ৬৫ শতাংশের জন্য হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দায়ী।
পুরুষেরা নারীদের তুলনায় বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত। এদের মধ্য শিশু রয়েছে ৪ লাখ। আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা ৫৭ লাখ এবং নারীর সংখ্যা ২৮ লাখ। ১৮ লাখ প্রজনন সক্ষম নারী হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। চাকরিপ্রার্থী ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের নাগরিকদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষ বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত।
বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্তের হার শূন্য দশমিক ২ থেকে ১ শতাংশ।আর এই ভাইরাসগুলো ধীরে ধীরে লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা মানুষ প্রথম পর্যায়ে বুঝতে পারে না।আশঙ্কার বিষয় হলো, হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং ‘সি’-কে জনস্বাস্থ্যের হুমকি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সাল নাগাদ তা নির্মূল করার পরিকল্পনা নিয়েছে। লক্ষ্য হচ্ছে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ রোগীর সংখ্যা ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনা এবং মৃত্যুহার ৬৫ শতাংশে নামিয়ে আনা।সারা পৃথিবীতে ৩৫ কোটিরও বেশি মানুষ কোনো না কোনো হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বসবাস করছে। এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে সাধারণ জন্ডিস থেকে শুরু করে লিভার ফেইলিওর, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল ও দুরারোগ্য অসুখ হতে পারে।আর প্রতি ১০ জনের নয়জন জানেই না তারা হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাসে আক্রান্ত।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত জনসংখ্যা ৫ দশমিক ১ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের বাস। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা ৫৭ লাখ। নারীর সংখ্যা ২৮ লাখ ও শিশু রয়েছে ৪ লাখ। আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। লিভারের জন্য আরেকটি ক্ষতিকর ভাইরাস হলো হেপাটাইটিস সি। লিভার সিরোসিসের ৩০ শতাংশ ও লিভার ক্যানসারের জন্য ১৭ শতাংশ দায়ী হেপাটাইটিস সি ভাইরাস। আর হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্য দশমিক ২ থেকে ১ শতাংশ। তাঁদের বেশির ভাগের বয়স ২৮ বছরের বেশি।
লিভার ক্যান্সারে মারা যাওয়া প্রতি ৩ জনের ২ জনই হেপাটাইটিস ‘বি’ বা ‘সি’-তে আক্রান্ত থাকেন। আমাদের দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’তে আক্রান্ত। তাদের কারো কারো বিভিন্ন সময়ে ক্যান্সারসহ লিভারের অন্যান্য জটিল রোগ হচ্ছে।সারা বিশ্বে প্রতি ১০ জনে ৯ জন ব্যক্তি জানে না তারা হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের জীবাণু বহন করছে। ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স ২০৩০ সাল নাগাদ ৯৫ শতাংশ অনির্ণীত রোগীকে রোগনির্ণয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অধিকন্তু, ২০৩০ সাল নাগাদ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য দেশের প্রায় ৬৬ লাখ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ লাখ ৬০ হাজারে নামিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
> হেপাটাইটিস প্রথম আক্রান্তের সময়: হেপাটাইটিসের বড় শিকার সেনাবাহিনীর সদস্যেরা। ১৮৬১ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধে হেপাটাইটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেপাটাইটিসের বলি হন এক কোটি ষাট লক্ষ মানুষ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত হেপাটাইটিসের কারণ বিজ্ঞানের কাছে ছিল এক প্রহেলিকা। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে এর কারণগুলি বোঝা সম্ভব হয়। ১৯৬৩ সালে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আবিষ্কার করলেন জেনেটিক বিজ্ঞানী বারুচ স্যামুয়েল ব্লুমবার্গ। তিনি বিভিন্ন অসুখের জিনগত সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করছিলেন। কাকতালীয় ভাবে এক অস্ট্রেলীয় আদিবাসীর রক্ত পরীক্ষার সূত্রে আবিষ্কার করলেন হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসকে। তাই নাম দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান অ্যান্টিজেন। দু’বছর পরে মাইক্রোবায়োলজিস্ট মিলম্যান-এর সঙ্গে আবিষ্কার করলেন হেপাটাইটিস বি-এর ভ্যাকসিন। হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-ডি, হেপাটাইটিস-সি এবং হেপাটাইটিস-ই ভাইরাস আবিষ্কৃত হল যথাক্রমে ১৯৭০, ১৯৭৭, ১৯৮৯ এবং ১৯৯০ সালে। ব্লুমবার্গ তাঁর আবিষ্কারের জন্য ১৯৭৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান।
> হেপাটাইটিস কি: ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের এ সময়ে আমরা প্রায় ভুলেই গেছি অন্যান্য মরণব্যধির কথা।হেপাটাইটিস বলতে যকৃতের প্রদাহ (ফুলে যাওয়া) বোঝায়। ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ বা অ্যালকোহলের মত ক্ষতিকারক পদার্থের কারণে ঘটা যকৃতের একটি রোগ। হেপাটাইটিস অল্প কিছু উপসর্গসহ বা কোনো উপসর্গ ছাড়াই ঘটতে পারে। তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে জন্ডিস, এনরেক্সিয়া (ক্ষুধমান্দ্য) ও অসুস্থতাবোধ এর লক্ষণ বা উপসর্গ। দুধরণের হেপাটাইটিস দেখা যায় : তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী। তীব্র হেপাটাইটিস ৬ মাসেরও কম স্থায়ী হয়, অন্য দিকে দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকে। মূলত হেপাটাইটিস ভাইরাসের কারণে এই রোগটির সূত্রপাত, তাছাড়া অ্যালকোহল, নির্দিষ্ট কতগুলো ওষুধ, শিল্প-জৈব দ্রাবক এবং উদ্ভিদের টক্সিক জাতীয় পদার্থের কারণে এই রোগটি ঘটে।
> হেপাটাইটিসের প্রকারভেদ – ১. হেপাটাইটিস ‘ এ ‘ ভাইরাস ২. হেপাটাইটিস ‘ বি ‘ ভাইরাস ৩. হেপাটাইটিস ‘ সি’ ভাইরাস ৪. হেপাটাইটিস ‘ ডি’ ভাইরাস এবং ৫. হেপাটাইটিস ‘ ই ‘ ভাইরাস , নিম্মে হেপাটাইটিস ৫ ধরনের ভাইরাস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. হেপাটাইটিস এ: হেপাটাইটিস্ এ রোগটির কারণ হল হেপাটাইটিস্ এ ভাইরাস। এটি সবচেয়ে পরিচিত হেপাটাইটিস্ রোগ। এটি সাধারণত সেইসব জায়গায় দেখা যায় যেখানে স্যানিটেশন ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা খুব খারাপ। সাধারণত দূষিত খাদ্য ও জল-আহারের মাধ্যমে এর সংক্রমণ ঘটে। এটি স্বল্পমেয়াদি রোগ, যার উপসর্গগুলো সাধারণত তিন মাসের মধ্যে চলে যায়। হেপাটাইটিস এ রোগ হলে ইবুপ্রোফেন জাতীয় পেনকিলার দেওয়া ছাড়া নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। টিকাকরনের মাধ্যমে হেপাটাইটিস এ প্রতিরোধ করা যায়। সংক্রমণের সম্ভাব্য স্থানগুলোতে যেমন; ভারতীয় উপমহাদেশ, আফ্রিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, দূরপ্রাচ্য এবং পূর্ব ইউরোপ যাঁরা ভ্রমন করেন তাঁদেরকে হেপাটাইটিস রোগের টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।
২.হেপাটাইটিস বি: হেপাটাইটিস বি রোগটির কারণ হল হেপাটাইটিস্ বি ভাইরাস। রক্ত ও বীর্য এবং যোনি তরলের মত শরীরের তরলে এটি সংক্রমিত হয়। এটি সাধারণত অসুরক্ষিত যৌন মিলন বা ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্তের মধ্যে সংক্রমিত হয়। ড্রাগ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সাধারানত এটি ঘটে। এই রোগটি সাধারণত ভারতবর্ষ ও চীন, মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও উপ-সাহারান আফ্রিকায় হয়ে থাকে। হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজে থেকে এই সংক্রমণটিকে প্রতিরোধ করতে পারে ও প্রায় দু-মাসের মধ্যে সংক্রমণমুক্ত হয়ে যায়। তবে, সংক্রমিত ব্যক্তি সংক্রমণের সময় অত্যন্ত অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে, কিন্তু এটি সাধারণত সুদূরপ্রসারী কোনো ক্ষতি করে না। অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে অবশ্য এর সংক্রমণ দীর্ঘমেয়াদী হয়, যাকে বলা হয় দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস বি। হেপাটাইটিস বি’র টিকা পাওয়া যায়। ড্রাগ ব্যবহারকারী ও উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন অঞ্চলে যাঁরা বসবাস করেন তাঁদেরকে এই টিকাকরণের পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।
৩.হেপাটাইটিস সি: হেপাটাইটিস্ সি রোগটির কারণ হল হেপাটাইটিস্ সি ভাইরাস। এটি সাধারণত রক্তে ও খুব অল্প ক্ষেত্রে সংক্রামিত ব্যক্তির লালা, বীর্য বা যোনি তরলে পাওয়া যায়। এটি সাধারণত যেহেতু রক্তে পাওয়া যায় তাই রক্ত থেকে রক্তের সংস্পর্শে এই রোগটি ছড়ায়। এই রোগের লক্ষণগুলো অনেকটা ফ্লুয়ের মত, তাই অনেকে সাধারণ ফ্লুয়ের সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেলেন। অনেক রোগীই নিজে থেকে এই সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারেন ও ভাইরাসমুক্ত হয়ে ওঠেন। আবার অনেকের ক্ষেত্রে ভাইরাসটি দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর থেকে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে একে বলা হয় দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস সি। দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস সি’তে যাঁরা ভুগছেন তাঁরা এন্টিভাইরাল কতগুলো ওষুধ নিতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে কতগুলো অপ্রীতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও দিতে পারে। হেপাটাইটিস সি’র নির্দিষ্ট কোন টিকা এখনও পাওয়া যায় না।
অ্যালকোহলজনিত হেপাটাইটিস: প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করলে এটি দেখা যায়। প্রচুর পরিমাণে মদ্যপানে যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে এটি ক্রমশ হেপাটাইটিস রোগ ডেকে আনে। এটির সাধারণত কোনো উপসর্গ দেখা যায় না, একমাত্র রক্ত পরীক্ষা করলে ধরা পড়ে। অ্যালকোহলজনিত হেপাটাইটিসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি মদ্যপান চালিয়ে যায় তবে তা অত্যন্ত ঝুঁকির হতে পারে। সেক্ষেত্রে , অন্ত্রের কঠিনীভবন (সিরোসিস) ও যকৃতের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৪.হেপাটাইটিস ডি : হেপাটাইটিস্ ডি রোগটির কারণ হল হেপাটাইটিস্ ডি ভাইরাস। একমাত্র যাঁদের হেপাটাইটিস্ বি হয়েছে তাঁদের মধ্যে এটি দেখা দিতে পারে। একমাত্র হেপাটাইটিস্ বি’র সঙ্গে হেপাটাইটিস্ ডি বাঁচতে পারে।

৫ . হেপাটাইটিস ই: হেপাটাইটিস্ ই রোগটির কারণ হল হেপাটাইটিস্ ই ভাইরাস। এটি হল স্বল্পস্থায়ী ও এর তীব্রতা কম। এক্ষেত্রে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির সংক্রমণ কম।
অটোইমিউন হেপাটাইটিস: এটি কোনো দীর্ঘমেয়াদী রোগ নয়। এক্ষেত্রে শ্বেত রক্ত কণিকা যকৃতের মধ্যে আক্রমনণ ঘটায়। এরফলে যকৃতের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত সাংঘাতিক কিছু ঘটতে পারে। এই রোগটির সঠিক কারণ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। এর উপসর্গগুলোর মধ্যে পড়ে ক্লান্তি, তলপেটে ব্যথা, গাঁটের ব্যথা, জন্ডিস (চোখ ও চামড়ায় হলুদাভ বর্ণ) ও সিরোসিস। .স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ (প্রিডনিসোলন ) ক্রমশ: কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফোলা ভাব কমাতে পারে ও রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
> মায়াজমেটিককারণঃ *সোরা *সিফিলিস *সাইকোসিস *টিউবারকুলার।
> সচেতনতা বাড়ানোর উপায়:
• পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হেপাটাইটিসের লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করা।
• শিশুদের হেপাটাইটিস টিকা সম্পর্কে সচেতন করা এবং সময়মতো টিকা দেওয়া নিশ্চিত করা।
• সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পর করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা।
• সবার সাথে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার গুরুত্ব তুলে ধরা।
স্বাস্থ্যবিধি ও জীবনযাত্রার উন্নতি:
• পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন হেপাটাইটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
• হাত ধোয়া, নিরাপদ পানি পান করা, এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাবার গ্রহণ করার গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা।
• নিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপন এবং ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা।
জনগণের জন্য করণীয়:
• হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি, এবং ই ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা।
• নিজেদের এবং পরিবারের সদস্যদের হেপাটাইটিস পরীক্ষার জন্য উৎসাহিত করা।
• সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে কী করণীয়, তা জানা।
• হেপাটাইটিস প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা। তাই হেপাটাইটিস নির্মূলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই রোগ প্রতিরোধে কাজ করি এবং একটি সুস্থ সমাজ গঠনে সহায়তা করি।