স্টেট ডিপার্টমেন্টে রদবদল ও নতুন কৌশল
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, স্টেট ডিপার্টমেন্টে কাঠামোগত পরিবর্তন তিনি এনেছেন কেবল দক্ষতা বাড়াতে, কাউকে বাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়। তার ভাষায়, আগে একটি সিদ্ধান্ত মেমো ৩০ থেকে ৪০টি ডেস্কের অনুমোদন ছাড়া উপরে যেত না, যার ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া খুবই ধীরগতির ছিল। এখন সেই প্রক্রিয়া সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: ট্রাম্পের স্পষ্ট বার্তা
রুবিও জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়াকে ৫০ দিনের সময়সীমা দিয়েছেন একটি শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য। না হলে শতভাগ আমদানি শুল্ক আরোপের হুমকি রয়েছে। ট্রাম্পের বিশ্বাস, তিনি যুদ্ধ চান না, বরং শান্তি চান। পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে কিছু ইতিবাচক বার্তা এলেও তা বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
রুবিও আরও বলেন, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে রাশিয়ার এক লাখেরও বেশি সেনা নিহত হয়েছে। এই যুদ্ধকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। ট্রাম্প এখন আর “আলোচনার নামে আলোচনা” করতে রাজি নন।
চীন, রাশিয়া ও ইরানের অঘোষিত জোট
রুবিও সতর্ক করে বলেন, চীন গোপনে রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে তেল কিনে এই যুদ্ধে অর্থায়ন করছে। একইভাবে ইরানকেও তারা নিষিদ্ধ তেল ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করেছে।
তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গোপন সামরিক অভিযানে, বিশেষত বি-টু বোমারু বিমানের সফল মিশনের পর, অনেক দেশ ইরানকে সহায়তা দিতে আগ্রহ হারিয়েছে। এতে প্রমাণ হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি এখনো বিশ্বে অতুলনীয়।
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক: প্রতিযোগিতা ও সংলাপ পাশাপাশি
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে রুবিও বলেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা অবশ্যই সম্মানভিত্তিক হতে হবে। গত ৩০ বছরে চীন একতরফাভাবে মার্কিন বাজারে পণ্য রপ্তানি করেছে, অথচ নিজের বাজার সবসময়ই বন্ধ রেখেছে। ট্রাম্প অনেক আগে থেকেই এই বিষয়ে কথা বলে আসছেন, আর এখন সময় এসেছে এই অসাম্য দূর করার।
বন্দী বিনিময় ও গ্যাং দমন কৌশল
রুবিও জানান, সম্প্রতি এল সালভাদর ও ভেনেজুয়েলার সঙ্গে বন্দী বিনিময় কার্যক্রম হয়েছে। ভেনেজুয়েলার মাদকচক্র ‘ত্রেন দে আরাগুয়া’-এর ২৫০ সদস্যকে যুক্তরাষ্ট্রে না পাঠিয়ে এল সালভাদরে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, আগের প্রশাসন যেখানে মাদক পাচারকারীদের ফেরত পাঠাতো, ট্রাম্প প্রশাসন কোনোভাবেই তাদের দাবি মেনে নেয়নি।
তার মতে, এখন আর আমেরিকানদের জিম্মি বানিয়ে ‘বিনিময়ের কার্ড’ হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ নেই।
হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা
রুবিও বলেন, হামাসের হাতে থাকা সব আমেরিকান জিম্মিকে ইতোমধ্যেই উদ্ধার করা হয়েছে। আরও বড় একটি চুক্তির আওতায় ৬০ দিনের মধ্যে ধাপে ধাপে অন্যান্য জিম্মিদের মুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনায় স্টিভ উইটকফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
আমেরিকান স্বপ্ন ও পারিবারিক মূল্যবোধ
রুবিও জানান, তার কিউবান অভিবাসী বাবা-মা কখনোই মনে করেননি যে তাদের ছেলে কিছু করতে পারবে না। তার মতে, এটাই আমেরিকার শক্তি—যেখানে সবার জন্যই সুযোগ থাকে। তার জীবনের পথনির্দেশ ছিল পারিবারিক বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় অনুশাসন।
ব্যক্তিগত জীবন, সন্তানদের সময় ও কিউবান কফি
রুবিও বলেন, আগে কখনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক অনুষ্ঠান মিস করতেন না। এখন সন্তানরা বড় হয়ে নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত, তবুও তিনি চেষ্টা করেন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে পাশে থাকতে। সাক্ষাৎকারের হালকা মুহূর্তে তিনি তার কিউবান কফির প্রতি ভালোবাসার কথাও বলেন।
সেনেট থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে: নতুন অভিজ্ঞতা
১৪ বছর ধরে সেনেটে কাজ করার অভিজ্ঞতা রুবিওর মতে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত করেছে। যদিও সময়ের অভাবে পেছনে তাকানো হয়নি, তবুও নিজের অতীত অর্জন নিয়ে তিনি গর্ব অনুভব করেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদিনের কাজ: প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে সহযোগী
২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন রুবিও। তবে এখন তার সঙ্গে কাজ করে তিনি সন্তুষ্ট। ট্রাম্প দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে, দেরি নয়। রুবিওর মতে, তার মানবিকতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা অসাধারণ।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা: ২০২৮ সালের নির্বাচন?
অনেকেই রুবিওকে ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ভাবেন। তবে তিনি জানান, এখনই সে বিষয়ে তার কোনো পরিকল্পনা নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনে তিনি সন্তুষ্ট এবং যদি ২০২৮ সাল পর্যন্ত এই পদে থাকতে পারেন, সেটাই হবে তার জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন।