সাময়িকীর স্বর্ণযুগ: দুটি নতুন বইয়ের আলোকে
দুটি নতুন বই প্রকাশের মাধ্যমে আলোচনায় এসেছে এক সময়ের প্রতাপশালী সাময়িকী জগত—বিশেষ করে কনডে ন্যাস্টের মতো প্রকাশনা সংস্থার ম্যাগাজিনগুলো, যারা এক সময় বিশ্বের ফ্যাশন, সংস্কৃতি এবং ক্ষমতার গতিপথ ঠিক করে দিত। মাইকেল গ্রিনবাউমের Empire of the Elite এবং গ্রেডন কার্টারের When the Going Was Good বই দুটিতে উঠে এসেছে সেই জাঁকজমকপূর্ণ যুগের নানা অন্তরালের গল্প।
নিষিদ্ধ শব্দ, নিয়ন্ত্রিত ভাষা
ভ্যানিটি ফেয়ার-এর মতো ঝলমলে ম্যাগাজিনেও এক ধরনের কঠোর শব্দনিয়ন্ত্রণ ছিল। “FUCKING”, “chortling”, “donning”, “penning”, এমনকি “passing away” – এসব শব্দ ব্যবহারে ছিল নিষেধাজ্ঞা। “glitzy”, “hookers”, “eatery” শব্দও বাদ। এসব ম্যাগাজিন বিলাসিতাকে তুলে ধরলেও তাদের ভাষা ছিল পরিষ্কার ও নির্ভুল।
যেখানে কিছু মানুষ বলত, অনেকেই শুনত
আজকের ইনস্টাগ্রাম যুগে যেখানে প্রভাবশালীরা তাদের অনুসারীদের বলছেন কী করতে হবে, সেখানে এক সময় ছিল উল্টো চিত্র—কিছু ম্যাগাজিনই বলত, আর সবাই শুনত। বিশেষ করে কনডে ন্যাস্টের সাময়িকীগুলো—GQ, ভ্যানিটি ফেয়ার, ভোগ—নির্ধারণ করত কারা ‘হট’, কারা ‘নট’।
“Have-yachts” দুনিয়ার দর্পণ
কনডে ন্যাস্টের ম্যাগাজিনগুলো ছিল অভিজাতদের জগতে উঁকি দেওয়ার একটি দর্পণ। শিল্পকলা থেকে সুপারমডেল, রাজনীতি থেকে বিলাসিতা—সবকিছুই ছিল এখানে। যদিও মাঝে মাঝে ম্যাগাজিনগুলো ম্লান হয়ে পড়েছিল, কিন্তু ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে নতুন সম্পাদকদের নেতৃত্বে আবার ফিরে আসে সেই চমকপ্রদ রূপ।
ফ্যাশনের রাজত্ব: কোনো বাজেটের সীমা নেই
গ্রেডন কার্টারের আত্মজীবনীতে এই যুগকে বলা হয়েছে “সাময়িকীর শেষ সোনালি যুগ”। এই সময়ে একেকটি ফিচার বা ফটোশুটের খরচ ছিল অভাবনীয়—জাপানে ডাইনিং নিয়ে GQ-এর একটি ফিচারের খরচ ১৪,০০০ ডলার; লয়েডস অফ লন্ডনের একটি প্রতিবেদন, যা শেষ পর্যন্ত ছাপা হয়নি, খরচ পড়ে ১,৮০,০০০ ডলার; আর অ্যানি লেইবোভিৎসের তোলা একটি কভার ফটোর পেছনে খরচ হয় ৪,৭৫,০০০ ডলার। কিন্তু সম্পাদক বলছেন, “দেখতেই লাগছে যে এটা ৪,৭৫,০০০ ডলারের কভার।”
লেখক-সম্পাদকরাও ছিলেন সেলিব্রিটি
ইন্টারনেট যুগ আসার আগেই লেখক-সম্পাদকরা হয়ে উঠেছিলেন আন্তর্জাতিক তারকা। ক্রিস্টোফার হিচেন্সের মতো লেখকরা ছিলেন ঘরের নাম। এমনকি এখন The Devil Wears Prada 2 নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণাধীন, যেখানে ডেম আনা উইন্টরের ক্যারিকেচার দেখা যাবে। তাকে নাকি সহকর্মীরা ডাকতেন “Nuclear Wintour” নামে।
গেটকিপিং এবং এলিট চেনার ধরণ
ভোগ-এ ১৯৯০-এর দশকে সহকারী পদে আবেদন করতে হলে ১৭৮টি নাম ও তথ্যের একটি তালিকা মুখস্থ করতে হতো—অ্যালমোডোভার থেকে শুরু করে প্রুস্তের প্রথম লাইন পর্যন্ত। কেউ যদি এসব চিনে নিতে পারত, তাহলেই সেই এলিট ক্লাবে প্রবেশাধিকার পেত। টিনা ব্রাউন বলতেন, “আমাদের ম্যাগাজিনকে যৌন আবেদনময় ও সিরিয়াস দুই-ই করতে হতো।”
বিক্রি হচ্ছিল বলে এসব চলছিল
একটি সংখ্যায় হিলারি ক্লিনটনের কভার থাকায় ভোগ বিক্রি হয় ৭ লক্ষ কপি। কার্টার বলছেন, “The Going Was Good”—তাই এসব সম্ভব হয়েছে। অনেক সময় সম্পাদকদের গুণের চেয়ে সময়ের দানই বেশি কার্যকর ছিল।
কম্পিউটারের আগমন এবং এক যুগের অবসান
১৯৮০-এর শেষ দিকে যখন কম্পিউটার আসতে শুরু করল, তখন ভোগ-এর একজন আর্ট ডিরেক্টর এটিকে “একটি ফেজ” বলেছিলেন। এখনকার সম্পাদকরা—ডেম আনা এবং কার্টারসহ—অবসর নিয়েছেন বা সরে গেছেন। ম্যাগাজিনগুলো এখনো টিকে আছে, কিন্তু সেই প্রভাবশালী যুগ আর নেই।
এক অদ্ভুত উত্তরাধিকার
১৯৮৪ সালে GQ-তে “SUCCESS—How Sweet It Is” শিরোনামে এক ব্যক্তিকে স্যুট পরা অবস্থায় কভার করা হয়। তা থেকে তৈরি হয় একটি বই, পরে টিভি সিরিজ। বইটির নাম ছিল The Art of the Deal, আর সিরিজটি ছিল The Apprentice। সেই ব্যক্তি পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন।
সাময়িকীর সেই সোনালি যুগ এখন ইতিহাস। এক সময় যেসব ম্যাগাজিন জানিয়ে দিত সমাজের গতি-প্রকৃতি, এখন তার জায়গা নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু সেই সময়ের প্রতিচ্ছবি ও প্রভাব—ভাষা, ফ্যাশন, এবং ক্ষমতার নির্মাণ—আজও অনুরণিত হয়।