০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫

কেনেডি পরিবারের উদার উত্তরাধিকার

ম্যাসাচুসেটসের সাবেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জো কেনেডি তৃতীয় (বয়স ৪৪) এবার মার্কিন দক্ষিণের গ্রামীণ, রিপাবলিকান‑প্রধান রাজ্যগুলোতে উদারপন্থী সংগঠন গড়ে তুলতে ময়দানে নেমেছেন। পরিবারগত আদর্শ রক্ষাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য।

ডেল্টায় ফিরে দেখা

গত মাসে জো কেনেডি মিসিসিপি ডেল্টার তুলনাহীন গরমে তুলা ও সয়াবিনের মাঠ পেরিয়ে বেরিয়েছিলেন—ঠিক সেখানেই ১৯৬৭‑তে তাঁর দাদা, সেনেটর রবার্ট এফ. কেনেডি চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সেদিনকার শিশুদের ফোলা পেট আর ক্ষতবিক্ষত শরীরের ছবি পরিবারের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেছিল। জো‑র উপলব্ধি, দুই বছর ধরে ফুটো পাইপলাইনের পানি ফুটিয়ে খেতে হওয়া—এটা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশে নিন্দনীয়।

পারিবারিক আদর্শ ও বর্তমান দ্বন্দ্ব

জো ক্ষুব্ধ যে তাঁর চাচা, বর্তমান স্বাস্থ্য ও মানবসেবা সচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র কর্মজীবী মেডিকেড প্রাপকদের কাজে বাধ্য করার পক্ষে সওয়াল করছেন, যা দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা থেকে ছিটকে দেয়। আবার খাদ্যের রঙ নিষিদ্ধে চাচার প্রচেষ্টা নিয়েও তাঁর সংশয়—“রঙ নয়, দারিদ্র্যই স্থূলতার কারণ।”

গ্রাউন্ডওয়ার্ক প্রজেক্ট: উদ্দেশ্য ও পরিসর

রাজনীতিতে না নেমে জো ‘গ্রাউন্ডওয়ার্ক প্রজেক্ট’ নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। লক্ষ্য—মিসিসিপি, আলাবামা, ওকলাহোমা ও পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় (সবই রক্ষণশীল) ঘাসমূল‑ভিত্তিক আন্দোলনের জাল বিস্তার। বার্ষিক বরাদ্দ মাত্র ২.৮ মিলিয়ন ডলার; প্রায় ৪০টি স্থানীয় সংগঠনকে বছরে ২৫ হাজার ডলার করে সহায়তা দেয়। পরিবেশ‑ন্যায়বিচার থেকে গর্ভপাত‑অধিকার—বিভিন্ন ইস্যুতেই তারা কাজ চালাচ্ছে।

কেনেডি পরিবারের ইতিহাস

জো‑র জন্ম ১৯৮২‑তে, দাদা রবার্ট এফ. কেনেডি হত্যার প্রায় ১৪ বছর পরে। পারিবারিক গল্পেই বড় হয়েছেন—‘জিডিপি আমাদের গর্বের কারণ নয়’‑জাতীয় বাণী শুনে। বস্টনে শৈশব, স্ট্যানফোর্ডে স্নাতক, ডমিনিকান রিপাবলিকে পিস কোর সেবা, হার্ভার্ড ল স্কুল, এরপর মিডলসেক্স কাউন্টিতে সহকারী জেলা অ্যাটর্নি—সবই পরিকল্পিত সেবামুখী পথ।

রাজনৈতিক উত্থান ও পরাজয়

২০১২‑তে বার্নি ফ্র্যাঙ্কের আসন থেকে কংগ্রেসে এসে দ্রুত জনপ্রিয় হন। কিন্তু ২০২০‑র ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে ৭৩ বছর বয়সী সিনেটর এড মার্কির কাছে ১১ পয়েন্টে হেরে যান—কেনেডি পরিবারের প্রথম সেনেট পরাজয়। এর পর থেকেই সংগঠন গড়ার কাজে মনোযোগ দেন।

গ্রামীণ রাজ্যগুলির চ্যালেঞ্জ

মিসিসিপি ডেল্টা, ওকলাহোমা, আলাবামা ও পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় ভোটার নিবন্ধনের ঘাটতি, আগাম ভোটের অভাব, শিক্ষা ও গর্ভপাত‑আইনের কঠিন শর্ত—সব মিলিয়ে সংগঠকেরা বিপাকে। তবু জো মনে করেন, “সরকার যখনই আপনাকে দমায়, তখনই সংগঠনই একমাত্র উত্তরের পথ।”

ব্যক্তিগত জীবন ও ভবিষ্যৎ ভাবনা

স্ত্রী লরেন, ছয় বছরের ছেলে ও নয় বছরের মেয়ের সঙ্গে সময় কাটান তিনি। আবার নির্বাচনে নামা পরিবারের জন্য বড় ত্যাগ দাবি করবে—সে কথা মাথায় রেখেই আপাতত সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছেন। তাঁর কথায়, “আমি ৪৪। ভবিষ্যতে কিছুই অসম্ভব নয়, তবে এখন সংগঠন নিয়েই ব্যস্ত।”

রক্ষণশীল আদি দুর্গে লড়াই করে উদারপন্থী শক্তিকে জোটবদ্ধ করা সহজ কাজ নয়; এতে বড় অর্থ বা তাৎক্ষণিক ফলও মেলে না। তবু জো কেনেডি তৃতীয় বিশ্বাস করেন, দীর্ঘমেয়াদি সাংগঠনিক শ্রমই দারিদ্র্য, স্বাস্থ্যসেবা ও নাগরিক অধিকার নিয়ে পারিবারিক আদর্শকে বাস্তবে রূপ দেবে।

কেনেডি পরিবারের উদার উত্তরাধিকার

১০:০০:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

ম্যাসাচুসেটসের সাবেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জো কেনেডি তৃতীয় (বয়স ৪৪) এবার মার্কিন দক্ষিণের গ্রামীণ, রিপাবলিকান‑প্রধান রাজ্যগুলোতে উদারপন্থী সংগঠন গড়ে তুলতে ময়দানে নেমেছেন। পরিবারগত আদর্শ রক্ষাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য।

ডেল্টায় ফিরে দেখা

গত মাসে জো কেনেডি মিসিসিপি ডেল্টার তুলনাহীন গরমে তুলা ও সয়াবিনের মাঠ পেরিয়ে বেরিয়েছিলেন—ঠিক সেখানেই ১৯৬৭‑তে তাঁর দাদা, সেনেটর রবার্ট এফ. কেনেডি চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সেদিনকার শিশুদের ফোলা পেট আর ক্ষতবিক্ষত শরীরের ছবি পরিবারের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেছিল। জো‑র উপলব্ধি, দুই বছর ধরে ফুটো পাইপলাইনের পানি ফুটিয়ে খেতে হওয়া—এটা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশে নিন্দনীয়।

পারিবারিক আদর্শ ও বর্তমান দ্বন্দ্ব

জো ক্ষুব্ধ যে তাঁর চাচা, বর্তমান স্বাস্থ্য ও মানবসেবা সচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র কর্মজীবী মেডিকেড প্রাপকদের কাজে বাধ্য করার পক্ষে সওয়াল করছেন, যা দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা থেকে ছিটকে দেয়। আবার খাদ্যের রঙ নিষিদ্ধে চাচার প্রচেষ্টা নিয়েও তাঁর সংশয়—“রঙ নয়, দারিদ্র্যই স্থূলতার কারণ।”

গ্রাউন্ডওয়ার্ক প্রজেক্ট: উদ্দেশ্য ও পরিসর

রাজনীতিতে না নেমে জো ‘গ্রাউন্ডওয়ার্ক প্রজেক্ট’ নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। লক্ষ্য—মিসিসিপি, আলাবামা, ওকলাহোমা ও পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় (সবই রক্ষণশীল) ঘাসমূল‑ভিত্তিক আন্দোলনের জাল বিস্তার। বার্ষিক বরাদ্দ মাত্র ২.৮ মিলিয়ন ডলার; প্রায় ৪০টি স্থানীয় সংগঠনকে বছরে ২৫ হাজার ডলার করে সহায়তা দেয়। পরিবেশ‑ন্যায়বিচার থেকে গর্ভপাত‑অধিকার—বিভিন্ন ইস্যুতেই তারা কাজ চালাচ্ছে।

কেনেডি পরিবারের ইতিহাস

জো‑র জন্ম ১৯৮২‑তে, দাদা রবার্ট এফ. কেনেডি হত্যার প্রায় ১৪ বছর পরে। পারিবারিক গল্পেই বড় হয়েছেন—‘জিডিপি আমাদের গর্বের কারণ নয়’‑জাতীয় বাণী শুনে। বস্টনে শৈশব, স্ট্যানফোর্ডে স্নাতক, ডমিনিকান রিপাবলিকে পিস কোর সেবা, হার্ভার্ড ল স্কুল, এরপর মিডলসেক্স কাউন্টিতে সহকারী জেলা অ্যাটর্নি—সবই পরিকল্পিত সেবামুখী পথ।

রাজনৈতিক উত্থান ও পরাজয়

২০১২‑তে বার্নি ফ্র্যাঙ্কের আসন থেকে কংগ্রেসে এসে দ্রুত জনপ্রিয় হন। কিন্তু ২০২০‑র ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে ৭৩ বছর বয়সী সিনেটর এড মার্কির কাছে ১১ পয়েন্টে হেরে যান—কেনেডি পরিবারের প্রথম সেনেট পরাজয়। এর পর থেকেই সংগঠন গড়ার কাজে মনোযোগ দেন।

গ্রামীণ রাজ্যগুলির চ্যালেঞ্জ

মিসিসিপি ডেল্টা, ওকলাহোমা, আলাবামা ও পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় ভোটার নিবন্ধনের ঘাটতি, আগাম ভোটের অভাব, শিক্ষা ও গর্ভপাত‑আইনের কঠিন শর্ত—সব মিলিয়ে সংগঠকেরা বিপাকে। তবু জো মনে করেন, “সরকার যখনই আপনাকে দমায়, তখনই সংগঠনই একমাত্র উত্তরের পথ।”

ব্যক্তিগত জীবন ও ভবিষ্যৎ ভাবনা

স্ত্রী লরেন, ছয় বছরের ছেলে ও নয় বছরের মেয়ের সঙ্গে সময় কাটান তিনি। আবার নির্বাচনে নামা পরিবারের জন্য বড় ত্যাগ দাবি করবে—সে কথা মাথায় রেখেই আপাতত সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছেন। তাঁর কথায়, “আমি ৪৪। ভবিষ্যতে কিছুই অসম্ভব নয়, তবে এখন সংগঠন নিয়েই ব্যস্ত।”

রক্ষণশীল আদি দুর্গে লড়াই করে উদারপন্থী শক্তিকে জোটবদ্ধ করা সহজ কাজ নয়; এতে বড় অর্থ বা তাৎক্ষণিক ফলও মেলে না। তবু জো কেনেডি তৃতীয় বিশ্বাস করেন, দীর্ঘমেয়াদি সাংগঠনিক শ্রমই দারিদ্র্য, স্বাস্থ্যসেবা ও নাগরিক অধিকার নিয়ে পারিবারিক আদর্শকে বাস্তবে রূপ দেবে।