প্রতিবাদের ঢেউয়ে ভেসে গেল ভারত–পাকিস্তান মহারণ
ইংল্যান্ডে চলমান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডস (ডব্লিউসিএল)-এ বৃহস্পতিবারের নির্ধারিত সেমিফাইনালে পাকিস্তান দলের বিপক্ষে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইন্ডিয়া চ্যাম্পিয়ন্স। সাম্প্রতিক ভারতবিরোধী হামলা ও সীমান্তসংঘর্ষ ঘিরে দেশের ভেতরে চাঙা হওয়া পাকিস্তান-বিরোধী জনমতকে সমর্থন জানিয়েই এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
টুর্নামেন্ট কর্তৃপক্ষের অবস্থান
ডব্লিউসিএল এক বিবৃতিতে খেলাধুলার ঐক্যবদ্ধ শক্তি তুলে ধরলেও জনমতকে সম্মান জানানোর কথা বলেছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সর্বদিক বিবেচনায় ম্যাচটি বাতিল করা হলো; ফলত পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন্স সরাসরি ফাইনালে উঠবে।’ ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে দক্ষিণ আফ্রিকা বা অস্ট্রেলিয়া।
স্পনসর EaseMyTrip-এর সরে দাঁড়ানো
ভারতীয় স্পনসর ইজমাই ট্রিপ ম্যাচটিতে যুক্ত থাকতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিশান্ত পিট্টি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘সন্ত্রাস ও ক্রিকেট একসঙ্গে চলতে পারে না। দেশ আগে, ব্যবসা পরে।’
ডব্লিউসিএল: কাঠামো ও দর্শকপ্রভাব
ব্যক্তিগত উদ্যোগে আয়োজিত এই লিগে ছয় দল—ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তান—অবসরপ্রাপ্ত তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। গত বছরের প্রথম আসরে ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল ৩২৫ মিলিয়ন দর্শক টেনেছিল, যা লিগটির মূল আকর্ষণ।
ভারত–পাকিস্তান সম্পর্কের উত্তেজনা
চলতি বছরের এপ্রিলের কাশ্মীর হামলা ঘিরে দুই দেশের চার দিনের তীব্র সংঘর্ষে ৭০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়। এরপর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক টানাপড়েন চরমে ওঠে; পার্লামেন্ট অধিবেশনে ক্রিকেট ম্যাচ বন্ধের পক্ষে-বিপক্ষে হট্টগোল হয়। বহুজাতিক টুর্নামেন্টে দ্বিপক্ষীয় ম্যাচ খেলাতে ভারতীয় বোর্ডকে (বিসিসিআই) সরকারি অনুমতি নিতে হয়, যা এ মুহূর্তে অনিশ্চিত।
দলের ভেতরের প্রতিবাদ ও কথার লড়াই
লিগ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও ভারতীয়রা মাঠে নামেনি; দুই দল তখন পয়েন্ট ভাগ করে নেয়। সে সময় ওপেনার শিখর ধাওয়ান সরে দাঁড়ালে পাকিস্তানি তারকা শহীদ আফ্রিদি তাকে ‘পচা ডিম’ বলে কটাক্ষ করেন। দলের নেতা যুবরাজ সিংসহ হারভজন সিং (রাজ্যসভার এমপি) ও ইউসুফ পাঠান (লোকসভা এমপি)-রা সেমিফাইনাল বয়কটের সিদ্ধান্তে একমত হন। পাঠানের দল তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে একমাত্র সমঝোতা হতে পারে যুদ্ধক্ষেত্রে।’
খেলাধুলা যখন তীব্র কূটনীতির অস্ত্র
খেলাধুলাকে মানুষ ঐক্যের সেতু ভাবলেও, কূটনৈতিক উত্তাপ তাকে বারবার বিভাজনের রণক্ষেত্রে পরিণত করে। ডব্লিউসিএল-এ ভারতের বয়কট কেবল একটি ম্যাচের দখল বদলায়নি; এটি দেখিয়ে দিল যে ক্রিকেটের বাইরের যুদ্ধ-সংবাদই কখনো কখনো মাঠের লড়াইকে গ্রাস করে ফেলে।