৮.৮ মাত্রার কম্পনে কাঁপল রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপ
মঙ্গলবার গভীর রাতে রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে ৮.৮ মাত্রার একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। মিনিটের পর মিনিট ধরে মাটি কেঁপে ওঠে, জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ে এবং কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এত শক্তিশালী কম্পন ইতিহাসে হাতে গোনা; যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, এটি রেকর্ড করা মাত্র ছয়টি শক্তিশালী ভূমিকম্পের একটি।
সতর্কতা ও সুনামি পরিস্থিতি
কম্পনের পরই জাপান, হাওয়াই এবং যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে সুনামি সতর্কতা জারি হয়। অতীতে এত বড় ভূমিকম্পের পর প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে ধ্বংসাত্মক ঢেউ আছড়ে পড়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এবার ঢেউ তুলনামূলকভাবে ছোট ছিল। তবু দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি উপকূলীয় এলাকায় বুধবার রাত পর্যন্ত সতর্কতা বজায় রাখা হয়।
ঢেউ কম হওয়ার সম্ভাব্য কারণ
প্রাথমিক বিশ্লেষণে জানা যাচ্ছে, শক্তি বিপুল হলেও ভূমিকম্পের গভীরতা, ভাঙনের ধরন এবং আধুনিক সতর্কতা ব্যবস্থাই ঢেউকে সীমিত রেখেছে। উন্নত পর্যবেক্ষণ ও দ্রুত বার্তা পৌঁছে দেওয়ার সুবিধা মানুষকে আগে থেকেই নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সহায়তা করেছে।
ক্ষয়ক্ষতি ও আহতদের খবর
কামচাটকা ও আশপাশের জনবিরল এলাকায় কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আহত হয়েছেন কিছু বাসিন্দা। এখনো কোনো মৃত্যুর খবর মেলেনি। পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে কয়েক দিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
অতীতের রেকর্ডধারী কয়েকটি বড় ভূমিকম্প
- • চিলি, ১৯৬০ (৯.৫ মাত্রা)
ভালদিভিয়া বা ‘গ্রেট চিলি’ ভূমিকম্প হিসেবে পরিচিত। প্রাথমিক ধাক্কা ও সুনামিতে চিলিতে ৪৯০–৫,৭০০ জনের মৃত্যু, হাওয়াইয়ে ৬১ জন, ফিলিপাইনে ২১ জন এবং জাপানে ১২২ জনের প্রাণহানি ঘটে। - • আলাস্কা, যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৬৪ (৯.২ মাত্রা)
‘গ্রেট আলাস্কা’ ভূমিকম্প ও পরবর্তী সুনামিতে ১৩৯ জনের মৃত্যু হয়; ব্যাপক বন্যা ও ধ্বংস দেখা দেয়।
- • সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ২০০৪ (৯.১ মাত্রা)
১০০ ফুট উঁচু ঢেউ দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার উপকূল ভাসিয়ে দেয়। আনুমানিক ২,৩০,০০০ মানুষ মারা যায় বা নিখোঁজ হয়; ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার। - • তোহোকু, জাপান, ২০১১ (৯.১ মাত্রা)
সুনামিতে ১৮,০০০–এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়; ফুকুশিমা দাইইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিকল হয়ে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। - • কামচাটকা, রাশিয়া, ১৯৫২ (৯.০ মাত্রা)
২৩ ফুট উঁচু ঢেউ কামচাটকা ও কুরিল দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হানে; সুনামি হাওয়াইয়েও পৌঁছে যায়।
বর্তমান কামচাটকা ভূমিকম্প শক্তিতে ঐতিহাসিক হলেও, উন্নত প্রযুক্তি ও সতর্কতা ব্যবস্থার ফলে এখন পর্যন্ত প্রাণহানি সীমিত রাখা সম্ভব হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি সম্পূর্ণভাবে নিরূপণে সময় লাগবে। বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতেও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূমিকম্প ও সুনামি সতর্কতায় নিবিড় নজর রাখার তাগিদ দিয়েছেন।