২০২০ সালের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ (এনইপি) প্রণয়ন করে শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন। এই দূরদর্শী নীতিতে প্রথমবারের মতো শিক্ষার আন্তর্জাতিকীকরণকে জাতীয় অগ্রাধিকারে পরিণত করা হয় এবং ভারতের সমৃদ্ধ উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে বিশ্বকে সহযোগিতা ও সহ‑সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, যৌথ ও দ্বৈত ডিগ্রি, ক্রেডিট স্থানান্তর, গবেষণা ও উদ্ভাবনে জোর— এসব পদক্ষেপ ভারতের লক্ষ্যকে এগিয়ে নিচ্ছে, যাতে দেশটি বিশ্বের শীর্ষ জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিগুলোর মধ্যে নিজেদের স্থান করে নিতে পারে।
প্রায় ঠিক পাঁচ বছর পর, ভারত এনইপি‑র বাস্তবায়নের পাঁচ বছর উদযাপন করছে এবং ভারত‑যুক্তরাজ্য আমাদের নবায়ন করা ও ভবিষ্যতমুখী বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারত্বে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও নরেন্দ্র মোদি ২০৩৫ সাল পর্যন্ত একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ঘোষণা করেছেন, যা ইতিমধ্যেই শক্তিশালী শিক্ষা ও দক্ষতা সহযোগিতাকে আরও গভীর করবে, বৈশ্বিক প্রতিভার আগামী প্রজন্ম গড়ে তুলবে, সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং একটি বার্ষিক কৌশলগত শিক্ষা সংলাপের মাধ্যমে সহযোগিতা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়াবে। যুক্তরাজ্যের বিশ্বমানের শিক্ষার সুযোগ এখন ভারতে থেকেই পাওয়া যাচ্ছে— এটাই এই অংশীদারত্বের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা।
এই জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অনুদান কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী ইউনিভার্সিটি অব সাউথ্যাম্পটন গুরগাঁওয়ে (গুরুগ্রাম) প্রথম পূর্ণাঙ্গ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস চালু করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের সরকারি কর্মকর্তা ও সাউথ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের উপস্থিত থাকতে পেরে আমরা আনন্দিত। তবে সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বাস ছিল শিক্ষার্থীদের মধ্যে— এক ছাত্রী জানালেন, পরিবারের কাছ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে না গিয়েই তিনি একটি যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে দারুণ খুশি হয়েছেন।
এই ধরনের শিক্ষার্থীরাই এই অংশীদারত্বের সবচেয়ে বড় উপকারভোগী।
এটি যুক্তরাজ্য‑ভারত সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা সম্ভব হয়েছে এনইপি, ইউজিসি‑র বিধিমালা এবং উভয় দেশের আন্তর্জাতিকীকরণ, অন্তর্ভুক্তি ও উদ্ভাবনের প্রতি তাঁদের যৌথ অঙ্গীকারের ফলে। সাউথ্যাম্পটনের পথ ধরে আগামী বছর আরও চারটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় ভারতে ক্যাম্পাস খুলতে যাচ্ছে এবং গিফট সিটিতে আরও দুটি শিগগিরই যাত্রা শুরু করবে— ফলে এই উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।
যুক্তরাজ্যের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের উপস্থিতি বাড়ালে হাজারো মেধাবী ভারতীয় ছাত্রছাত্রী বৈশ্বিক দক্ষতা অর্জনের নতুন সুযোগ পাবে, যা ভারতের দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয়। এঁরাই হবেন ভারতের জ্ঞান‑ভিত্তিক অর্থনীতির স্তম্ভ এবং ‘বিকশিত ভারত’ গড়ার স্বপ্নসাধনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস চালু হওয়া এই সোনালি মানবিক বন্ধনের কেবল একটি সূচনাবিন্দু মাত্র।
দশকের পর দশক ধরে ব্রিটিশ ও ভারতীয় শিক্ষার্থীরা পরস্পরের দেশে পড়াশোনা করে আমাদের ‘লিভিং ব্রিজ’ সমৃদ্ধ করেছে এবং গবেষণা, শিক্ষা ও দক্ষতা সহযোগিতা উজ্জীবিত রেখেছে। যুক্তরাজ্যে আমরা ১৯ লাখ ভারতীয় প্রবাসীর সাফল্য উদ্যাপন করি; তাঁদের অবদান শিল্প‑সংস্কৃতি, ভাষা, খাদ্য, ক্রীড়া— সর্বত্রই দৃশ্যমান।
ট্রান্সন্যাশনাল শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা এক পরিবর্তনসূচক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। উভয় দেশ মিলিতভাবে এমন এক আগামীর, ন্যায়সঙ্গত ও উদ্ভাবনী মডেল গড়ে তুলছে, যা প্রবেশাধিকার, মান ও সাংস্কৃতিক বিনিময়কে প্রাধান্য দেবে। যুক্তরাজ্যের ক্যাম্পাস ছাড়াও আরও ভারত‑যুক্তরাজ্য যৌথ ও দ্বৈত ডিগ্রি, শিল্প‑সহযোগিতার কেন্দ্র, বিজ্ঞান ও গবেষণা হাব ভারতের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করছে। এর ফলে ব্রিটিশ শিক্ষার্থীরাও ভারতে এসে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে।
বিশেষায়িত ইয়ং প্রফেশনালস স্কিম— ওয়াইপিএস— যেটি একটি ভিসা উদ্যোগ, এর মাধ্যমে ভারতীয় ও ব্রিটিশ স্নাতকরা অপর দেশের মাটিতে দু’বছর পর্যন্ত বসবাস, পড়াশোনা, ভ্রমণ ও কাজ করার সুযোগ পান— এ অংশীদারত্বকে আরও শক্তিশালী করছে।
আমাদের শিক্ষাগত অংশীদারিত্ব গভীর করার এ প্রতিশ্রুতি সময়োচিত। ভূরাজনৈতিক, ভূ‑অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত দ্রুত পরিবর্তনের সময়ে এবং উচ্চশিক্ষার বাড়তে থাকা চাহিদার প্রেক্ষাপটে উদ্ভাবনের গতি বাড়ানো ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ, ভবিষ্যতমুখী মানবসম্পদ তৈরি করতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশ অপরিহার্য।
সেজন্যই যুক্তরাজ্য ও ভারতের বুদ্ধিবৃত্তিক অংশীদারিত্ব এনইপি‑র প্রথম পাঁচ বছরে যে শক্ত ভিত্তি গড়ে উঠেছে, তার ওপর ভিত্তি করে আরও এগোবে। আমরা উদীয়মান সুযোগকে কাজে লাগাব, প্রযুক্তির গতির সঙ্গে সমন্বয় করব এবং সহযোগিতা জোরদার করব।
আমরা আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক আকাঙ্ক্ষা পূরণে তাদের পাঠ্যক্রম, প্রক্রিয়া ও সহায়তা ব্যবস্থাকে সমন্বয় করতে পারস্পরিক অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখবে। এনইপি দেখিয়েছে, বিচক্ষণভাবে প্রণীত ও ধারাবাহিকভাবে প্রয়োগ করা নিয়মকানুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার শক্তিশালী সহায়ক হতে পারে।
ভারত ও যুক্তরাজ্য এমন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করছে, যা বৈশ্বিক চিন্তাসম্পন্ন, সামাজিকভাবে সচেতন নেতাদের নতুন প্রজন্ম তৈরি করবে— যাঁরা জটিল আন্তর্জাতিক সমস্যা মোকাবিলায় সক্ষম হবেন। শিক্ষা হলো সেই ভিত্তি, যার ওপর অর্থনীতি বিকশিত হয় এবং যেখান থেকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার উদ্ভাবন জন্ম নেয়। আমাদের বৈশ্বিক শিক্ষা ও দক্ষতা অংশীদারত্বের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ও ভারত ভবিষ্যৎ প্রতিভা গড়ে তোলা অব্যাহত রাখবে— এবং এনইপি‑র পরবর্তী পাঁচ বছর আমাদের সামনে কী আনবে তা দেখার জন্য আমরা উদ্গ্রীব।
লেখক: লিন্ডি ক্যামেরন ভারতে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার এবং অ্যালিসন ব্যারেট ব্রিটিশ কাউন্সিল ইন্ডিয়ার কান্ট্রি ডিরেক্টর। এখানে উপস্থাপিত মতামত সম্পূর্ণভাবে তাঁদের ব্যক্তিগত।