সত্য-যাচাইয়ে নতুন পরীক্ষা
২০২৫-এর শুরুতে মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও থ্রেডস-এ পেশাদার ফ্যাক্ট-চেকারদের বাদ দিয়ে ‘কমিউনিটি নোটস’ চালু করেন। উদ্দেশ্য : ব্যবহারকারীদের অংশগ্রহণে ভুয়া খবর থামানো। কিন্তু কয়েক মাসের অভিজ্ঞতা বলছে—এই পদ্ধতি এখনও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না।
স্বেচ্ছাসেবী অভিজ্ঞতা : ৬৫-এর মধ্যে মাত্র ৩টি নোট প্রকাশ
এক স্বেচ্ছাসেবী চার মাসে মোট ৬৫টি নোট লিখেছেন—পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘুমিয়ে পড়ার ভুয়া ছবি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক দাবি পর্যন্ত। তবে ‘সহায়ক’ ভোট না মেলায় মাত্র ৩টি নোটই প্রকাশ পেয়েছে, সাফল্যের হার ৫ শতাংশেরও কম। এ সত্ত্বেও এগুলো এমন সব বিষয় ছিল, যেগুলো নিয়ে ইতিমধ্যে স্নোপস, ব্লুমবার্গ বা নিউসগার্ডের মতো সংস্থা যাচাই-রিপোর্ট ছাপিয়েছে।

কীভাবে কাজ করে কমিউনিটি নোটস
- • যে-কোনো পোস্টে কয়েকটি ট্যাপ করেই নোটের খসড়া জমা দেওয়া যায়।
• নোট প্রকাশের আগে ‘ব্রিজিং অ্যালগরিদম’ নিশ্চিত করে যে বিপরীতমুখী মতের অন্তত দুই দল ব্যবহারকারী সেটিকে সহায়ক হিসেবে ভোট দিয়েছেন।
• যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তৈরি পোস্টে এখনো নোট লেখা যায় না, ফলে বহু ভাইরাল তথ্য ধরা ছুটে যায়।
বড় বাধাগুলো
কম ভোটার, কম প্রকাশ : পর্যাপ্ত সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবী না থাকায় দরকারি সমর্থন মেলে না।
ব্রেকিং নিউজে ধীরগতি : দ্রুত ছড়ানো গুজব ঠেকাতে ভোট-ভিত্তিক পদ্ধতি যথেষ্ট তৎপর নয়।
গুণগত অসঙ্গতি : অনেক নোটে তথ্যসূত্র দুর্বল বা মতামতप्रधान—‘গুগল করে দেখুন’-ধরনের পরামর্শ পর্যন্ত দেখা যায়।
স্বচ্ছতার ঘাটতি : মেটা এখনও কয়টি নোট প্রকাশ পেয়েছে, কতজন অংশ নিচ্ছেন বা প্রকৃত প্রভাব কী—এসব তথ্য প্রকাশ করেনি।

গবেষণাগারের মূল্যায়ন : ‘প্রাইম টাইমে’ উপযুক্ত নয়
কর্নেল টেক-এর সিকিউরিটি, ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটি ইনিশিয়েটিভের পরিচালক আলেক্সিওস মান্টজার্লিস জুন মাসে স্বাধীন মূল্যায়ন করে জানিয়েছেন, কমিউনিটি নোটস “এখনো প্রধান মঞ্চের জন্য প্রস্তুত নয়”—স্বল্পসংখ্যক নোটই সত্যিকার অর্থে মূল্যবান প্রেক্ষাপট দেয়, কিছুতে আবার তথ্যভুলও রয়েছে।
সম্ভাব্য উন্নয়নপথ
- • বৈশ্বিক পোস্টেও নোট খসড়া জমা দেওয়ার সুযোগ খুলে দেওয়া।
• ক্ষতিকর বা সংবেদনশীল বিষয়ে দ্রুত অগ্রাধিকারভিত্তিক ‘ট্রায়াজ’ পদ্ধতি চালু করা।
• ধারাবাহিক অবদানের জন্য স্বেচ্ছাসেবীদের শনাক্তযোগ্য মর্যাদা বা ব্যাজ প্রদান।
• পেশাদার সত্য-যাচাইকারীদের পুনরায় যুক্ত করে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের জন্য আলাদা প্রোফাইল ও সম্মানী চালু করা, যাতে জনতা ও পেশাদার মিলিয়ে যৌথভাবে কাজ চালানো যায়।

ভরসা শুধু ভলান্টিয়ারে নয়
স্বেচ্ছাসেবীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও, একা তাঁদের ওপর ভরসা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া খবর রুখে দেওয়া সম্ভব নয়। টুইটার-এর (এক্স) অভিজ্ঞতাও দেখিয়েছে—পেশাদার ও জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই সবচেয়ে কার্যকর। তাই মেটাকে স্বচ্ছতা বাড়িয়ে, প্রযুক্তিগত কাঠামো উন্নত করে এবং পেশাদার-জনতা মডেলকে পুনরুজ্জীবিত করে কমিউনিটি নোটস-কে সত্য-যাচাইয়ের নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থায় পরিণত করতে হবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















