কোফতার টুকরো মিশিয়ে পোলাও রান্না হতো। এখানে কিছু নোনতা টকমিষ্টি উপাদানও থাকত। কোফতা নরম হতো।
চাল আধা কাঁচা আধা সেদ্ধ অবস্থা হচ্ছে কম্বি। চাল সেদ্ধ হয়ে ভাত হলে তা গলানোর পর প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে দম দিলে হয় পাশানো। যে পোলাও পাক করার পর যখন মাড় গলানো হয় তখন তা হয় লাপেটা।
ঢাকার পোলাও খানিকটা আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য লাভকরেছিল চালের ব্যবহারের জন্য। পোলাওর জন্য তখন সুগন্ধি কালিজিরা চাল ব্যবহৃত হতো। এখনও কালিজিরা চাল উৎপাদিত হয় তবে একই মানের বিভিন্ন চাল উৎপাদিত হতে থাকে। বর্তমানে সব ধরনের মিহি ও সুগন্ধি চালকেই পোলাওর চাল বলে উল্লেখ করা হয়।

সাদা পোলাও
‘লাপেটা’ পদ্ধতিতে তৈরি ঢাকার পোলাও পরিচিতি লাভ করেছিল খাস্তা পোলাও নামে। এ পোলাওয়ে আস্ত মোরগ দেয়া হতো। মোরগ আর চাল একসঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে (পরে তেল) রান্না হতো। কিন্তু দুটি উপাদানই খাস্তা থাকত। হাকিমের ভাষায়, ‘চালে তৈলাক্ততা এমনভাবে প্রবিষ্ট হতো যে চাল থেকে তৈলাক্ত রস বের হতো না বরং প্রত্যেকটা চালের পেট ঘি-এ পরিপূর্ণ থাকত”।
খাম্বা বা খুশাকা অর্থাৎ সাদা পোলাও। বড় ধরনের নেমস্তন্নে খাম্বা পোলাও রান্না হতো। তবে, ছোট বা মাঝারি ধরনের নেমন্তন্ত্রে বৈশিষ্ট্যময় পোলাও রান্না হতো। এগুলোকে হাকিম হাবিবুর একেবারে ঢাকাইয়া খাবার বলে উল্লেখ করেছেন। এর একটি হলো বুন্দিয়া পোলাও। খুব ছোট ছোট কোফতার টুকরো মিশিয়ে পোলাও রান্না হতো। এখানে কিছু নোনতা টকমিষ্টি উপাদানও থাকত। কোফতা নরম হতো। রুই আর ইলিশ দিয়ে তৈরি হতো মাহি পোলাও। মাহি হচ্ছে মাছ। হাকিম রুই মাছের পোলাও-কে গুরুত্ব দিয়েছেন, ইলিশ মাছের নয়।

ঢাকাই লাচ্ছা পরটা
বর্তমানে খাস্বা পোলাও পরিচিত মোরগ পোলাও নামে যা অপেক্ষাকৃত কম দামি উপাদান ব্যবহারের কারণে তেমন স্বাদের নয়। বুন্দিয়া পোলাও তৈরি হয়। রুই মাছের পোলাও চালু নেই।
ইলিশ মাছেরটি চালু আছে। পোলাওর সঙ্গে ঢাকার বাবুর্চিরা কিছু নতুন উপাদান যুক্ত করে তা বৈশিষ্ট্যময় করে তুলেছিলেন, যেমন, সোয়া পোলাও, মালগুবা পোলাও, নার্গিসি পোলাও প্রভৃতি। সোয়া পোলাওর সঙ্গে ঋতুর সম্পর্ক ছিল। আশ্বিনের শেষে শীতের প্রাক্কালে বাজারে আসত সোয়া শাক এবং তা মিশিয়ে যে পোলাও বা সোয়া পোলাও, আদি নাম যার শাবাত পোলাও। বছরে দু’একবার তা রান্না হতো এবং এখন তা লুপ্ত। মালগুবা পোলাও ছিল ফিউশন বা সংমিশ্রিত পোলাও।
(চলবে)
মুনতাসীর মামুন 



















