১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

রোজী: সোনালি পর্দায় আবেগ ও দৃঢ়তার প্রতিমা

জীবনের শুরু ও চলচ্চিত্রে আগমন

লক্ষ্মীপুরের মাটিতে ২৩ এপ্রিল ১৯৪৬ সালে জন্ম নেন শামীমা আক্তার রোজী—যাকে বাংলা চলচ্চিত্রজগৎ চেনে রোজী আফসারী বা প্রথম জীবনের নাম রোজী সামাদ নামে। ষাটের দশকে ঢাকাই সিনেমা যখন শিল্প ও জনপ্রিয়তার সোনালি পথে হাঁটছে, ঠিক তখনই তিনি এইতো জীবন (১৯৬৪)–এর মাধ্যমে রূপালি পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন। একই বছরে জহির রায়হানের সঙ্গম–এ অভিনয় করে ইতিহাসের অংশ হয়ে যান—এটি ছিল তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম রঙিন পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি।

চার দশকের সোনালি যাত্রা

প্রায় ২০০টির বেশি বাংলা চলচ্চিত্র ২৫টি উর্দু ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। নায়িকা, মা, ভাবি, রাজবাড়ির বেগম, গ্রামীণ নারী—প্রতিটি চরিত্রে ছিল আলাদা রঙ ও গভীরতা। ‘ইতোতুকু আশা’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘প্রতিকার’, ‘ওরা ১১ জন’,‘রংবাজ’—সবগুলোতেই তার অভিনয় দর্শক–সমালোচক উভয়ের মন জয় করেছে।

সিগনেচার পারফরম্যান্স

জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০) – ভাষা ও স্বাধীনতার সংগ্রামের রূপকার্থে ‘সাথী’ চরিত্রে অনন্য অভিনয়।

সোনালী দিনের অভিনেত্রী রোজী আফসারীর প্রয়াণদিন | The Daily Star Bangla

তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৭৩) – বাসন্তী হয়ে নদীর সঙ্গে মানুষের নাড়ির টান ফুটিয়ে তোলা।

আলোর মিছিল’ (১৯৭৪) – বাচসাস শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর স্বীকৃতি।

লাঠিয়াল’ (১৯৭৫) – প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী।

গোলাপী এখন ট্রেনে’ (১৯৭৮) – সংক্ষিপ্ত উপস্থিতিতেও অনবদ্য আবেগময়তা।

আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের সুহাসিনী-সুঅভিনেত্রী রোজী - নিরাপদ নিউজ

দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার তাকে একাধিকবার “দর্শকের জন্য ছবির মূল আকর্ষণ” বলে উল্লেখ করেছে।

চরিত্রের ভেতরে প্রাণ

তার অভিনয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল সংযত অভিব্যক্তি—নাটকীয় সংলাপ নয়, বরং চোখের ভাষা ও মুখের সূক্ষ্ম পরিবর্তনে আবেগ প্রকাশ। মমতাময়ী মা, সংগ্রামী স্ত্রী, কিংবা দুঃখ–বিজড়িত প্রেমিকা—সব চরিত্রেই তিনি দর্শককে ডুবিয়ে দিতেন।

পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে পদচিহ্ন

১৯৮৬ সালে আশা নিরাশা পরিচালনা করে নারীনির্মাতাদের ধারায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রাখেন। নিজস্ব ব্যানার Rosy Films–এর মাধ্যমে প্রযোজনাও করেছেন। যদিও বাংলাদেশের প্রথম নারী পরিচালক ছিলেন রেবেকা (১৯৭০ সালের ‘বিন্দু থেকে ব্রিত্ত’), রোজী আফসারী ছিলেন তার পরবর্তী প্রজন্মের অন্যতম পথিকৃৎ।

ব্যক্তিজীবন

প্রথমে পরিচালক অব্দুস সামাদ, পরে ১৯৮১ সালে পরিচালক মালেক আফসারী–কে বিয়ে করেন। এখান থেকেই আসে “রোজী আফসারী” নামটি। দুই সন্তানের মা হয়েও শিল্প–সংগঠনে সক্রিয় ছিলেন; জিয়া সাংস্কৃতিক পরিষদ (জিসুস)–এর সভাপতি ছিলেন বহু বছর।

স্বর্ণালি যুগের মায়াবী অভিনেত্রী রোজী আফসারী

পুরস্কার ও সম্মাননা

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৭৫) – লাঠিয়াল

বাচসাস পুরস্কার (১৯৭৪) – আলোর মিছিল

২০১৯ সালে গুগল ডুডল–এ স্মরণ

শীর্ষ ১০ পারফরম্যান্স (বক্স আইটেম)

১. জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০)
২. তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৭৩)
৩. আলোর মিছিল (১৯৭৪)
৪. লাঠিয়াল (১৯৭৫)
৫. গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮)
৬. নীল আকাশের নীচে (১৯৭৮)
৭. অশিক্ষিত (১৯৭৮)
৮. রংবাজ (১৯৭৮)
৯. ওরা ১১ জন (১৯৭২)
১০. এই ঘর এই সংসার (১৯৯৫)

Rosy Samad - IMDb

টাইমলাইন (বক্স আইটেম)

১৯৪৬ – জন্ম, লক্ষ্মীপুর

১৯৬৪ – ‘এইতো জীবন’–এ অভিনয় জীবন শুরু

১৯৭০ – ‘জীবন থেকে নেয়া’ মুক্তি

১৯৭৩ – ‘তিতাস একটি নদীর নাম’

১৯৭৪ – বাচসাস পুরস্কার

১৯৭৫ – জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

১৯৮৬ – ‘আশা নিরাশা’ পরিচালনা

২০০৭ – মৃত্যু, ঢাকা

২০১৯ – গুগল ডুডল সম্মাননা

অনন্য আবেগপ্রতিমা

২০০৭ সালের ৯ মার্চ বারডেম হাসপাতালে কিডনি জটিলতায় তার মৃত্যু হয়। জীবনের শেষ দিকে অশ্লীলতার বাড়াবাড়িতে আড়ালে চলে গেলেও, দর্শকের হৃদয়ে তিনি থেকে গেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক অনন্য আবেগপ্রতিমা হয়ে।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার গানের জগতে ফিরে আসা: ‘লাস্ট ক্রিসমাস’ ডেসি ভার্সন নিয়ে নেটিজেনদের কটাক্ষ

রোজী: সোনালি পর্দায় আবেগ ও দৃঢ়তার প্রতিমা

০৭:২৭:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫

জীবনের শুরু ও চলচ্চিত্রে আগমন

লক্ষ্মীপুরের মাটিতে ২৩ এপ্রিল ১৯৪৬ সালে জন্ম নেন শামীমা আক্তার রোজী—যাকে বাংলা চলচ্চিত্রজগৎ চেনে রোজী আফসারী বা প্রথম জীবনের নাম রোজী সামাদ নামে। ষাটের দশকে ঢাকাই সিনেমা যখন শিল্প ও জনপ্রিয়তার সোনালি পথে হাঁটছে, ঠিক তখনই তিনি এইতো জীবন (১৯৬৪)–এর মাধ্যমে রূপালি পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন। একই বছরে জহির রায়হানের সঙ্গম–এ অভিনয় করে ইতিহাসের অংশ হয়ে যান—এটি ছিল তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম রঙিন পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি।

চার দশকের সোনালি যাত্রা

প্রায় ২০০টির বেশি বাংলা চলচ্চিত্র ২৫টি উর্দু ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। নায়িকা, মা, ভাবি, রাজবাড়ির বেগম, গ্রামীণ নারী—প্রতিটি চরিত্রে ছিল আলাদা রঙ ও গভীরতা। ‘ইতোতুকু আশা’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘প্রতিকার’, ‘ওরা ১১ জন’,‘রংবাজ’—সবগুলোতেই তার অভিনয় দর্শক–সমালোচক উভয়ের মন জয় করেছে।

সিগনেচার পারফরম্যান্স

জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০) – ভাষা ও স্বাধীনতার সংগ্রামের রূপকার্থে ‘সাথী’ চরিত্রে অনন্য অভিনয়।

সোনালী দিনের অভিনেত্রী রোজী আফসারীর প্রয়াণদিন | The Daily Star Bangla

তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৭৩) – বাসন্তী হয়ে নদীর সঙ্গে মানুষের নাড়ির টান ফুটিয়ে তোলা।

আলোর মিছিল’ (১৯৭৪) – বাচসাস শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর স্বীকৃতি।

লাঠিয়াল’ (১৯৭৫) – প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী।

গোলাপী এখন ট্রেনে’ (১৯৭৮) – সংক্ষিপ্ত উপস্থিতিতেও অনবদ্য আবেগময়তা।

আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের সুহাসিনী-সুঅভিনেত্রী রোজী - নিরাপদ নিউজ

দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার তাকে একাধিকবার “দর্শকের জন্য ছবির মূল আকর্ষণ” বলে উল্লেখ করেছে।

চরিত্রের ভেতরে প্রাণ

তার অভিনয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল সংযত অভিব্যক্তি—নাটকীয় সংলাপ নয়, বরং চোখের ভাষা ও মুখের সূক্ষ্ম পরিবর্তনে আবেগ প্রকাশ। মমতাময়ী মা, সংগ্রামী স্ত্রী, কিংবা দুঃখ–বিজড়িত প্রেমিকা—সব চরিত্রেই তিনি দর্শককে ডুবিয়ে দিতেন।

পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে পদচিহ্ন

১৯৮৬ সালে আশা নিরাশা পরিচালনা করে নারীনির্মাতাদের ধারায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রাখেন। নিজস্ব ব্যানার Rosy Films–এর মাধ্যমে প্রযোজনাও করেছেন। যদিও বাংলাদেশের প্রথম নারী পরিচালক ছিলেন রেবেকা (১৯৭০ সালের ‘বিন্দু থেকে ব্রিত্ত’), রোজী আফসারী ছিলেন তার পরবর্তী প্রজন্মের অন্যতম পথিকৃৎ।

ব্যক্তিজীবন

প্রথমে পরিচালক অব্দুস সামাদ, পরে ১৯৮১ সালে পরিচালক মালেক আফসারী–কে বিয়ে করেন। এখান থেকেই আসে “রোজী আফসারী” নামটি। দুই সন্তানের মা হয়েও শিল্প–সংগঠনে সক্রিয় ছিলেন; জিয়া সাংস্কৃতিক পরিষদ (জিসুস)–এর সভাপতি ছিলেন বহু বছর।

স্বর্ণালি যুগের মায়াবী অভিনেত্রী রোজী আফসারী

পুরস্কার ও সম্মাননা

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৭৫) – লাঠিয়াল

বাচসাস পুরস্কার (১৯৭৪) – আলোর মিছিল

২০১৯ সালে গুগল ডুডল–এ স্মরণ

শীর্ষ ১০ পারফরম্যান্স (বক্স আইটেম)

১. জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০)
২. তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৭৩)
৩. আলোর মিছিল (১৯৭৪)
৪. লাঠিয়াল (১৯৭৫)
৫. গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮)
৬. নীল আকাশের নীচে (১৯৭৮)
৭. অশিক্ষিত (১৯৭৮)
৮. রংবাজ (১৯৭৮)
৯. ওরা ১১ জন (১৯৭২)
১০. এই ঘর এই সংসার (১৯৯৫)

Rosy Samad - IMDb

টাইমলাইন (বক্স আইটেম)

১৯৪৬ – জন্ম, লক্ষ্মীপুর

১৯৬৪ – ‘এইতো জীবন’–এ অভিনয় জীবন শুরু

১৯৭০ – ‘জীবন থেকে নেয়া’ মুক্তি

১৯৭৩ – ‘তিতাস একটি নদীর নাম’

১৯৭৪ – বাচসাস পুরস্কার

১৯৭৫ – জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

১৯৮৬ – ‘আশা নিরাশা’ পরিচালনা

২০০৭ – মৃত্যু, ঢাকা

২০১৯ – গুগল ডুডল সম্মাননা

অনন্য আবেগপ্রতিমা

২০০৭ সালের ৯ মার্চ বারডেম হাসপাতালে কিডনি জটিলতায় তার মৃত্যু হয়। জীবনের শেষ দিকে অশ্লীলতার বাড়াবাড়িতে আড়ালে চলে গেলেও, দর্শকের হৃদয়ে তিনি থেকে গেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক অনন্য আবেগপ্রতিমা হয়ে।