০৩:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
মার্কিন শীতঝড়ে আকাশপথে অচলাবস্থা, বাতিল ও বিলম্বে ষোলো হাজারের বেশি ফ্লাইট নাইজেরিয়ায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা, আহত অ্যান্থনি জোশুয়া, নিহত ঘনিষ্ঠ দুই সতীর্থ সাংস্কৃতিক জাগরণে নতুন অধ্যায়: দুই হাজার পঁচিশে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশ্বমুখী অর্জন সিরিয়ায় ফেরার টান, অপেক্ষার বাস্তবতা চীনে বিরল পাখি রক্ষার লড়াই: ভোরের অন্ধকারে শিকারিদের পিছু ধাওয়া শহরের শ্বাসরোধ: আবর্জনা, দূষণ আর ভাঙা রাস্তায় কেন বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে ভারতের মহানগর সাবালেঙ্কা–কিরিওসের লড়াই নিয়ে বিতর্ক, তবু ইতিবাচক দিকই দেখছেন দুই তারকা যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার চাপে রাশিয়ার কারখানা ফিরিয়ে নিতে পারছে না হুন্ডাই আর্জেন্টিনায় স্বপ্নের গম মৌসুম শেষের পথে, রেকর্ড ফলনে কৃষকের মুখে হাসি চীনের রেকর্ড সামরিক মহড়া তাইওয়ান ঘিরে, উত্তেজনা কম বলে মন্তব্য ট্রাম্পের

সিরিয়ায় ফেরার টান, অপেক্ষার বাস্তবতা

তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব শহর গাজিয়ানতেপে বসবাসকারী অনেক তরুণ সিরীয় মনে করেন, ঘরে ফেরার ডাক উপেক্ষা করা কঠিন। যুদ্ধের সময় শিশু অবস্থায় দেশ ছাড়া তরুণ আহমেদ এখনো সিরিয়াকে নিজের ভবিষ্যতের ঠিকানা বলে ভাবছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, দেশ পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে আবার নতুন জীবন শুরু হবে। তবে কম মজুরি ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে এখনই ফেরার সাহস পাচ্ছেন না। তাঁর মতো অনেকেই মনে করছেন, সময় লাগবে, কিন্তু ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত একদিন নিতেই হবে।

তুরস্কে দীর্ঘ আশ্রয় ও বদলে যাওয়া পরিবেশ
দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের সময় তুরস্ক ছিল সিরীয়দের জন্য প্রধান আশ্রয়স্থল। এক সময় দেশটিতে সিরীয় শরণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় পঁয়ত্রিশ লাখ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক চাপ, সামাজিক উত্তেজনা ও বৈরী মনোভাব বাড়তে থাকে। যদিও সরকারি ভাবে বলা হচ্ছে, কাউকে জোর করে ফেরানো হবে না, তবু প্রশাসনিক নিয়মকানুনের পরিবর্তন ও সুযোগ-সুবিধা কমে যাওয়ায় অনেকের মনে হচ্ছে, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ঠেলে দিচ্ছে প্রত্যাবাসনের দিকে।

ফিরে যাওয়ার পথে চ্যালেঞ্জ
আলেপ্পো থেকে আসা আয়া মুস্তাফা মনে করেন, দেশে ফেরা সহজ সিদ্ধান্ত নয়। ধ্বংসস্তূপ, বিদ্যুৎ ও পানির সংকট, কর্মসংস্থানের অভাব—সব মিলিয়ে বাস্তবতা কঠিন। তাছাড়া তুরস্কে জন্ম নেওয়া অনেক শিশু এখনো আরবি ভাষায় সাবলীল নয়। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী স্বজনদের দেখভালের প্রশ্নও বড় বাধা। আয়ার মতে, সবাই ফিরবে ঠিকই, তবে তা হতে হবে ধীরে ও পরিকল্পিতভাবে।

Syrians in Turkey consider return after fall of Assad

নিরাপত্তা ও শাসন নিয়ে সংশয়
সবাই যে ফেরার পক্ষে, তা নয়। তুরস্কে বসবাসকারী এক সিরীয় মানবিক সহায়তা কর্মী স্পষ্ট করে বলেছেন, তাঁর পরিবার ও সংস্থা সিরিয়ায় ফিরে যাবে না। অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা তাঁকে ভাবিয়ে তুলছে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের অভিজ্ঞতার অভাব ও প্রতিদিনের সহিংসতার খবর তাঁর আস্থাকে আরও নড়বড়ে করেছে।

তুরস্কে থাকা কি সহজ
সিরীয়দের অস্থায়ী সুরক্ষা থাকলেও তা নানা বিধিনিষেধে ঘেরা। কাজের অনুমতি পাওয়া কঠিন, শহর বদলের স্বাধীনতা সীমিত। বিনা মূল্যে চিকিৎসা সুবিধা কমে যাওয়া ও নিয়োগে অতিরিক্ত খরচ আরোপ শরণার্থীদের জীবনে নতুন চাপ তৈরি করেছে। সামনে নির্বাচন এলে রাজনৈতিক হিসাব বদলাতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছেন বিশ্লেষকেরা।

আশা, অনিশ্চয়তা আর ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন
সীমান্ত এলাকায় অনেকেই যাচ্ছেন শুধু একবার দেখে আসতে। কারও কাছে এই যাত্রা একমুখী, কারও কাছে সাময়িক। শিক্ষক মাহমুদ সাত্তুফের মতো মানুষদের চোখে এখনো উজ্জ্বল স্বপ্ন—দেশকে নতুন করে গড়ার স্বপ্ন। তাঁর বিশ্বাস, অপেক্ষা শেষে একদিন ঘরে ফেরা মানেই হবে জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ।

জনপ্রিয় সংবাদ

মার্কিন শীতঝড়ে আকাশপথে অচলাবস্থা, বাতিল ও বিলম্বে ষোলো হাজারের বেশি ফ্লাইট

সিরিয়ায় ফেরার টান, অপেক্ষার বাস্তবতা

০১:২৯:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব শহর গাজিয়ানতেপে বসবাসকারী অনেক তরুণ সিরীয় মনে করেন, ঘরে ফেরার ডাক উপেক্ষা করা কঠিন। যুদ্ধের সময় শিশু অবস্থায় দেশ ছাড়া তরুণ আহমেদ এখনো সিরিয়াকে নিজের ভবিষ্যতের ঠিকানা বলে ভাবছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, দেশ পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে আবার নতুন জীবন শুরু হবে। তবে কম মজুরি ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে এখনই ফেরার সাহস পাচ্ছেন না। তাঁর মতো অনেকেই মনে করছেন, সময় লাগবে, কিন্তু ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত একদিন নিতেই হবে।

তুরস্কে দীর্ঘ আশ্রয় ও বদলে যাওয়া পরিবেশ
দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের সময় তুরস্ক ছিল সিরীয়দের জন্য প্রধান আশ্রয়স্থল। এক সময় দেশটিতে সিরীয় শরণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় পঁয়ত্রিশ লাখ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক চাপ, সামাজিক উত্তেজনা ও বৈরী মনোভাব বাড়তে থাকে। যদিও সরকারি ভাবে বলা হচ্ছে, কাউকে জোর করে ফেরানো হবে না, তবু প্রশাসনিক নিয়মকানুনের পরিবর্তন ও সুযোগ-সুবিধা কমে যাওয়ায় অনেকের মনে হচ্ছে, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ঠেলে দিচ্ছে প্রত্যাবাসনের দিকে।

ফিরে যাওয়ার পথে চ্যালেঞ্জ
আলেপ্পো থেকে আসা আয়া মুস্তাফা মনে করেন, দেশে ফেরা সহজ সিদ্ধান্ত নয়। ধ্বংসস্তূপ, বিদ্যুৎ ও পানির সংকট, কর্মসংস্থানের অভাব—সব মিলিয়ে বাস্তবতা কঠিন। তাছাড়া তুরস্কে জন্ম নেওয়া অনেক শিশু এখনো আরবি ভাষায় সাবলীল নয়। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী স্বজনদের দেখভালের প্রশ্নও বড় বাধা। আয়ার মতে, সবাই ফিরবে ঠিকই, তবে তা হতে হবে ধীরে ও পরিকল্পিতভাবে।

Syrians in Turkey consider return after fall of Assad

নিরাপত্তা ও শাসন নিয়ে সংশয়
সবাই যে ফেরার পক্ষে, তা নয়। তুরস্কে বসবাসকারী এক সিরীয় মানবিক সহায়তা কর্মী স্পষ্ট করে বলেছেন, তাঁর পরিবার ও সংস্থা সিরিয়ায় ফিরে যাবে না। অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা তাঁকে ভাবিয়ে তুলছে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের অভিজ্ঞতার অভাব ও প্রতিদিনের সহিংসতার খবর তাঁর আস্থাকে আরও নড়বড়ে করেছে।

তুরস্কে থাকা কি সহজ
সিরীয়দের অস্থায়ী সুরক্ষা থাকলেও তা নানা বিধিনিষেধে ঘেরা। কাজের অনুমতি পাওয়া কঠিন, শহর বদলের স্বাধীনতা সীমিত। বিনা মূল্যে চিকিৎসা সুবিধা কমে যাওয়া ও নিয়োগে অতিরিক্ত খরচ আরোপ শরণার্থীদের জীবনে নতুন চাপ তৈরি করেছে। সামনে নির্বাচন এলে রাজনৈতিক হিসাব বদলাতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছেন বিশ্লেষকেরা।

আশা, অনিশ্চয়তা আর ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন
সীমান্ত এলাকায় অনেকেই যাচ্ছেন শুধু একবার দেখে আসতে। কারও কাছে এই যাত্রা একমুখী, কারও কাছে সাময়িক। শিক্ষক মাহমুদ সাত্তুফের মতো মানুষদের চোখে এখনো উজ্জ্বল স্বপ্ন—দেশকে নতুন করে গড়ার স্বপ্ন। তাঁর বিশ্বাস, অপেক্ষা শেষে একদিন ঘরে ফেরা মানেই হবে জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ।