দীর্ঘ ১৪ বছরের কর্মজীবনের সমাপ্তি
ঢাকার একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় টানা ১৪ বছর ধরে কাজ করেছেন কামরুল হাসান (ছদ্মনাম)। শুরু করেছিলেন একজন জুনিয়র রিপোর্টার হিসেবে, ধীরে ধীরে উঠে এসেছেন সিনিয়র প্রতিবেদকের আসনে। রাজনীতি থেকে শুরু করে অর্থনীতি, এমনকি পরিবেশ ও মানবাধিকার নিয়ে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করেই গত মাসে পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়ে দেয়—অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানটি কর্মী ছাঁটাই করছে, এবং সেই তালিকায় তার নামও রয়েছে।
হঠাৎ চাকরি হারানোর ধাক্কা
চাকরি হারানোর খবর শোনার মুহূর্তটি আজও ভোলেননি কামরুল। “আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল,” বললেন তিনি। “যে প্রতিষ্ঠানে জীবনের সেরা বছরগুলো দিয়েছি, সেখানে হঠাৎ করেই আমার প্রয়োজন শেষ হয়ে গেল—এটা মেনে নেওয়া ভীষণ কঠিন।” তার মতো আরও কয়েকজন সাংবাদিক ও কারিগরি বিভাগের কর্মীকেও একই কারণে বিদায় নিতে হয়েছে।

অর্থনৈতিক সংকটে গণমাধ্যম
বাংলাদেশের গণমাধ্যম খাত এখন কঠিন সময় পার করছে। বিজ্ঞাপন আয়ের প্রবাহ কমে যাওয়া, কাগজ ও মুদ্রণ খরচ বৃদ্ধি এবং অনলাইন মিডিয়ার প্রতিযোগিতা—সব মিলিয়ে অনেক পত্রিকাই আর্থিক চাপে পড়েছে। বড় বড় দৈনিকও খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছে, যার অংশ হিসেবে অভিজ্ঞ কর্মীদের বিদায় দেওয়া হচ্ছে।
সংসার চালানোর সংগ্রাম
কামরুলের সংসারে স্ত্রী ও দুই সন্তান। বড় ছেলে কলেজে পড়ে, ছোট মেয়ে স্কুলে। বাড়িভাড়া, সন্তানের পড়াশোনার খরচ, সংসারের দৈনন্দিন ব্যয়—সবকিছুই এখন তার মাথাব্যথার কারণ। “চাকরি থাকাকালীন হয়তো তেমন বুঝিনি, কিন্তু এখন বুঝছি সংসার চালানো কত কঠিন,” বললেন তিনি। চাকরি হারানোর পর থেকে তিনি সঞ্চয়ের ওপর নির্ভর করছেন, কিন্তু সেটি দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
বিকল্প আয়ের চেষ্টা
চাকরি হারানোর পর তিনি বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও ফ্রিল্যান্স লেখালেখির সুযোগ খুঁজছেন। কিন্তু সেখানে পারিশ্রমিক কম এবং কাজও অনিয়মিত। কিছু সহকর্মী তাকে জনসংযোগ বা করপোরেট কমিউনিকেশনে চেষ্টা করতে পরামর্শ দিয়েছেন। তবে সাংবাদিকতা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে তার মন এখনও প্রস্তুত নয়।

মানসিক চাপে ভরা দিন
কামরুল শুধু অর্থনৈতিক সংকটেই ভুগছেন না, মানসিক চাপও বাড়ছে প্রতিদিন। ১৪ বছরের অভ্যাস হঠাৎ বদলে গেছে—ভোরে অফিসে যাওয়ার তাড়া নেই, নেই রিপোর্টিংয়ের ব্যস্ততা। “একটা শূন্যতা আমাকে গ্রাস করছে,” বললেন তিনি। বন্ধু-সহকর্মীদের ফোন পেলেও অফিসের পরিবেশ আর সংবাদ কক্ষের কোলাহল ভীষণভাবে মিস করছেন তিনি।
ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা
বাংলাদেশের গণমাধ্যম খাতের এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে নতুন চাকরি পাওয়া সহজ হবে না—এটা কামরুল ভালো করেই জানেন। তবুও তিনি হাল ছাড়তে চান না। “আমি এখনও বিশ্বাস করি, ভালো লেখালেখি ও নিরপেক্ষ সংবাদ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া জরুরি। যদি সুযোগ পাই, আবার কলম হাতে তুলে নেব,” বললেন তিনি দৃঢ় কণ্ঠে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















