দীর্ঘদিনের উৎপাদন সীমিতকরণের নীতি পরিবর্তন
জাপান সরকার বহুদিন ধরে চাল উৎপাদন সীমিত করার যে নীতি অনুসরণ করে আসছিল, তা পরিবর্তন করে এবার উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের উৎসাহিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। তীব্র গরম ও পানির সংকট দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করায় এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে এই নতুন নীতি ঘোষণা করবেন।
অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি বাজারের জন্য উৎপাদন বৃদ্ধি
সরকার জানাবে যে এমন পরিবেশ তৈরি করা হবে যাতে কৃষকরা শুধু দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য নয়, বরং বিদেশে রপ্তানির জন্যও চাল উৎপাদন বাড়াতে পারেন। এর লক্ষ্য হলো চালের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং খারাপ মৌসুমে দ্রুত সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা তৈরি করা।

বর্তমান সংকট ও নীতির সীমাবদ্ধতা
সম্প্রতি চালের সংকটে দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তারা চাপে পড়েছেন। এতে সরকারের বর্তমান উৎপাদন সমন্বয় নীতির সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট হয়েছে, যা চাহিদা-সরবরাহের ভারসাম্য রেখে দাম স্থিতিশীল করার চেষ্টা করলেও উৎপাদন সীমাবদ্ধ করে।
নতুন চাল নীতি ঘোষণা
গত জুলাইয়ে চাল সরবরাহ নিয়ে বৈঠকে ইশিবা বলেছিলেন, এমন নীতি দরকার যা আগ্রহী উৎপাদকদের আয় নিশ্চিত করবে এবং অনিশ্চয়তা ছাড়াই উৎপাদন বাড়াবে। মঙ্গলবার তিনি উৎপাদন বৃদ্ধিকে মূল লক্ষ্য করে নতুন নীতির দিকনির্দেশনা দেবেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও কৃষি মন্ত্রীর বিশ্লেষণ
এটি হবে চাল নীতি নিয়ে তৃতীয় মন্ত্রী-পর্যায়ের বৈঠক এবং প্রথমবারের মতো এমন বৈঠক হবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও কোমেইতো জোট উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর। কেউ কেউ বলছেন, বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির মূল কারণ পর্যাপ্ত সরবরাহের অভাব। কৃষি মন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি মঙ্গলবার চালের দাম বৃদ্ধির কারণ বিশ্লেষণ করে উপস্থাপন করবেন।

জমি রক্ষা ও কৃষির প্রজন্মান্তর হস্তান্তর
ইশিবা জাপানের বয়স্ক কৃষকদের মুখোমুখি হওয়া অন্যান্য সমস্যাও তুলবেন—যেমন পরিত্যক্ত কৃষিজমি কমানো এবং কৃষি জমি পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়া। ২০২৭ অর্থবছরের ধানক্ষেতের নীতি পর্যালোচনার আগে ইশিবা বলবেন, এতদিন সরকারি নীতি কার্যত কৃষকদের ‘চাল ফলাবেন না’ বার্তা দিয়েছে। তিনি আগামমুখী উৎপাদনকে সমর্থনকারী নতুন ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলবেন।
বৃহৎ আকারের ও করপোরেট চাষের প্রসার
প্রধানমন্ত্রী উৎপাদন উন্নত করতে বৃহৎ-আকারের ও করপোরেট কৃষি ব্যবস্থার প্রসার চান। কৃষি মন্ত্রণালয় ২০২৬ সালের গ্রীষ্ম নাগাদ নতুন নীতির রূপরেখা তৈরি করবে। বর্তমানে কৃষকরা ভর্তুকি পেতে টেবিল চালের পরিবর্তে পশুখাদ্যের চাল বা গম ও সয়াবিন উৎপাদনে যেতে পারেন। চাহিদার পূর্বাভাস অনুযায়ী টেবিল চালের উৎপাদন সমন্বয় করা হয়, যা অনেকের কাছে কার্যত উৎপাদন হ্রাসের সমতুল্য।
ভর্তুকি পুনর্বিবেচনার আহ্বান
মন্ত্রণালয় ও এলডিপি—উভয় পক্ষ থেকে ফসল রোটেশন ভর্তুকি সংস্কারের দাবি উঠেছে, যাতে প্রতিটি ফসলের জন্য আলাদা সহায়তা নির্ধারণ করা যায়। তবে উৎপাদন হঠাৎ বাড়ালে দাম কমে যেতে পারে বলে সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে। এখন যেহেতু জোট উভয় কক্ষেই সংখ্যালঘু, কোইজুমি বলেছেন, “আমরা ভিন্নমত নয়, বরং মিল খুঁজে পেয়ে এগোতে চাই।”
![]()
পরিবেশবান্ধব চাষে সহায়তা
ইশিবা পাহাড়ি এলাকার মতো বড় পরিসরে চাষ করা কঠিন এমন স্থানে পরিবেশবান্ধব কৃষি সহায়তার জন্য নতুন ব্যবস্থার আহ্বান জানাবেন। এর মধ্যে সোপান-আকৃতির ধানক্ষেত সংরক্ষণ এবং ‘ড্রাই ডাইরেক্ট সিডিং’ প্রচার অন্তর্ভুক্ত থাকবে—যেখানে ধানচারা জলমগ্ন জমিতে রোপণ না করে সরাসরি শুকনো জমিতে বপন করা হয়। তীব্র গরম ও পানির সংকটের ঝুঁকি বাড়ায় কম পানি ব্যবহারের কৃষি পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
চাহিদা ও উৎপাদনের ব্যবধান
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে টেবিল চালের চাহিদা ছিল ৭১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, কিন্তু উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৬৭ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন—অর্থাৎ ৩ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টনের ঘাটতি। ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন।
দামের উত্থানের প্রকৃত কারণ
দামের বৃদ্ধি মূলত এই উৎপাদন ঘাটতির ফল, সরবরাহ ব্যবস্থা বা বিতরণ সমস্যার কারণে নয়। মঙ্গলবারের বৈঠকে কোইজুমি চালের মাড়াই ফলন হ্রাস ও সরকারি মজুত থেকে চাল ছাড়ার কার্যকারিতা সম্পর্কেও বিশ্লেষণ পেশ করবেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















