এক বছর পেরিয়ে গেলেও “বিচার মেলেনি”, তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর “পদত্যাগ করা উচিত”–– এই দাবি তুলে শনিবার রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর অভিমুখে মিছিল বা ‘নবান্ন অভিযানের’ ডাক দিয়েছিলেন আরজি কর হাসপাতালে নিহত ইন্টার্ন চিকিৎসকের বাবা-মা।
কিন্তু এই নবান্ন অভিযানের সময় শুধু পুলিশি বাধা নয়, তাদের মারধরের শিকার হওয়ারও অভিযোগ তুললেন সন্তানহারা ওই দম্পতি।
নিহত চিকিৎসকের মা বলেন, “এক বছর আগে আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছিল। আজ আমাদের মেরে ফেলা হচ্ছিল রাস্তায়।”
শনিবার মিছিলের শুরু থেকেই পুলিশ তাদের বার বার বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তারা।
কলকাতা রেসকোর্সের সামনে ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়াকে কেন্দ্র করে নিহত চিকিৎসকের বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকা আন্দোলনকারীদের একাংশের সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি হয়।
সেই সময় পুলিশ তাদের টানা-হেঁচড়া করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ করেন করেন ওই দম্পতি। মাথায় লেগেছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন নির্যাতিতার মা।
তরুণী পড়ুয়া-চিকিৎসকের বাবা-মা সেখানে বসেই অবস্থান বিক্ষোভ করেন। এরপর তার মা অসুস্থ বোধ করায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরজি করের ঘটনার এক বছর হলো আজ। কিন্তু বিচার মেলেনি বলেই মনে করেন সন্তানহারা এই দম্পতি।
নাগরিক সমাজের সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলকেও আজকের মিছিলে সামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন নিহত তরুণীর বাবা-মা।

নবান্ন অভিযানকে ঘিরে পুলিশি তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো
প্রসঙ্গত, আজকের এই কর্মসূচির কথা মাথায় রেখে শুক্রবার থেকেই পুলিশি তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
শনিবার দেখা যায় নবান্নগামী সব রাস্তাতেই বিশালাকৃতির ব্যারিকেড, গার্ডরেল এবং কন্টেনার বসানো হয়েছে। নজরদারির জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক বেশি পুলিশ সদস্য।
এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীসহ বিজেপি নেতারাও।
শুভেন্দু অধিকারী যে মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন, সেটা পার্কস্ট্রিটে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। মিছিল ব্যারিকেড সরিয়ে এগোনোর চেষ্টা করে, পরে পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পরেন কেউ কেউ। বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করতে এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছিলাম। পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে।”
অন্যদিকে, নবান্ন লাগোয়া সাঁতরাগাছিতেও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সামিলদের কেউ কেউ নবান্নমুখী রাস্তায় রাখা বিশাল ব্যারিকেড টপকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশের সঙ্গে তাদেরও সংঘর্ষ হয়।
প্রসঙ্গত, শুভেন্দু অধিকারী পুলিশি বল প্রয়োগের কারণে আন্দোলনকারীদের আহত হওয়ার অভিযোগ তুললেও তৃণমূল তা খারিজ করেছে।
বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে কুণাল ঘোষ বলেছেন, “নবান্ন চলো- একটা দ্বিচারিতা। কিছু মুখোশধারী নাটক করতে গিয়েছিল দুই অতিথি শিল্পীকে নিয়ে।”
“আরজি করের (ঘটনায়) অ্যারেস্ট হয়েছে কলকাতা পুলিশের হাতে। সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলেন আপনারা, তাহলে নবান্ন যাচ্ছেন কেন?”
তার আরও দাবি, পুলিশ সতর্ক ছিল।
শুধু নবান্ন নয়, শনিবার ‘মুখ্যমন্ত্রী কালীঘাট অভিযানের’ ডাক দিয়েছিলেন চিকিৎসকদের একাংশ। কালীঘাটেই মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন।
পাশাপাশি শহর ও রাজ্যজুড়ে একাধিক বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল শনিবার।

শুক্রবার রাতে নিহত চিকিৎসকের অভিভাবকের সঙ্গে রাস্তায় নেমেছিলেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ
‘কেন আমাদের মারা হলো?’
শুক্রবার রাতে কলকাতা শহর ও পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ মিছিল দেখা গিয়েছিল। নিহত চিকিৎসকের বিচারের দাবিতে তার অভিভাবকের সঙ্গে রাত জেগেছেন জুনিয়র, সিনিয়র চিকিৎসকের একাংশ। সামিল হয়েছিলে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সন্তানহারা ওই অভিভাবক আগেই জানিয়েছিলেন, কোনো ব্যারিকেড তাদের রুখতে পারবে না।
নিহত চিকিৎসকের মা-কে বলতে শোনা গিয়েছিল, “কোনো ব্যারিকেড আমাদের আটকাতে পারবে না। নবান্ন আমরা যাবই।”
“আমাদের মতো কোনো বাবা-মাকে যেন সন্তানহারা না হতে হয়, কোনো মেয়ের যাতে স্বপ্ন এভাবে ভেঙে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে আমাদের।”
তবে এই অভিযান শান্তিপূর্ণ হবে সে কথাও বলেছিলেন, “পুলিশ যতদূর যেতে দেব তত দূর যাব। তারপর সেখানে বসে পড়ব। তদন্তের নামে যে প্রহসন হচ্ছে তা মেনে নেব না।”
নবান্নর উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর বার বার পুলিশের বাধার মুখে পড়ার অভিযোগ করেন তারা।
শনিবার রেসকোর্সের সামনে বাধার মুখে পড়ে নিহত চিকিৎসকের বাবা পুলিশের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের তো হাইকোর্ট অনুমতি দিয়েছে, আপনারা আটকাচ্ছেন কেন? আমরা তো শান্তিপূর্ণভাবেই যাচ্ছি। ছেড়ে দিন। আমাদের যেতে দিন।”
মিছিলের অনেকেই ব্যারিকেডের ওপর উঠে পড়েন। তাদের অভিযোগ, ব্যারিকেড সরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানালেও পুলিশ শোনেনি। পাল্টা পুলিশ টানা-হেঁচড়া করেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তারা। মারধরের শিকার হওয়ারও অভিযোগ করা হয়েছে।
চিকিৎসকের মা বলেন, “পুলিশ আমাদের বারে বারে বাধা দিয়েছে। টানা-হেঁচড়া করার সময় আমার শাঁখা ভেঙে গিয়েছে। আমাকে রাস্তায় ফেলে মারা হয়েছে। মাথা ফুলে গিয়েছে। আমার স্বামীকেও মারা হয়েছে। কেন আমাদের এভাবে মারা হলো?”
পুলিশের কাছে জবাব দাবি করে সেখানেই বসে পড়েন তারা। নিহত চিকিৎসকের মা অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মিছিলের শুরুতে নিহত চিকিৎসকের বাবা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমরা যে গাড়ি করে আসছিলাম, তার নম্বর সব জায়গায় দেওয়া হয়েছে। তারপরেও আমাদের গাড়ি বার বার আটকানো হয়েছে। বলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি করে এখানে পৌঁছেছি।”
“হাই কোর্ট শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অনুমতি দিয়েছে। তার পরেও বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড করেছে পুলিশ।”
নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচিকে ঘিরে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। তার জবাবে ওই তরুণী চিকিৎসকের বাবাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলছে বিচার পেয়ে গেছি, তাহলে কেন আন্দোলন করছি আমরা? তাদের একটাই কথা বলি–– সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মণ্ডল গ্রেফতার হলেও বেইল (জামিন) পেয়ে গিয়েছে। এরাও কিন্তু অপরাধী। সঞ্জয় রাই একা নয়।”
“আমার মেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির শিকার। সেই দুর্নীতি করেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন। এখানে কলেজ কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য দফতর, স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী সবাই রয়েছে।”
ভিকটিমের মা বলেছিলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। সেই দাবি নিয়েই আমরা নবান্ন অভিযান করব। এটা রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, এটা আমাদের সবার প্রতিবাদ। আপনারাও আসুন, আমাদের সঙ্গে পা মেলান।”

পুলিশ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের বাধা দেয় বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি
‘নবান্ন অভিযান’
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী ‘নবান্ন অভিযানে’ সমর্থন জানিয়ে বলেছিলেন, দলীয় পতাকা ছাড়াই তিনি যোগ দেবেন, সঙ্গে থাকবেন বিজেপির সমর্থকরা।
পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরসহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুক্রবার থেকে বিজেপিকর্মীরা এসে পৌঁছান হাওড়া ও সাঁতরাগাছিতে। তাদের জন্য সাঁতরাগাছিতে ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রতিবাদ কর্মসূচিকে প্রতিরোধ করতে ব্যাপক পুলিশি তৎপরতাও দেখা দেয়। কড়া নিরাপত্তা বলয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল কলকাতা ও সাঁতরাগাছি থেকে নবান্নগামী সমস্ত রাস্তা।
বিক্ষোভের কথা মাথায় রেখে শনিবার ভোর থেকেই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। নবান্ন সংলগ্ন হাওড়া ময়দান, মন্দিরতলা, সাঁতরাগাছি-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছিল বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য। সকালে সাঁতরাগাছিতে মক ড্রিলও করতে দেখা যায় পুলিশকে।
বেলা ১২টা নাগাদ এই অভিযানের ডাক দেওয়া হলেও সকাল থেকেই পুলিশি তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো ছিল। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ হাওড়া ব্রিজ এবং দ্বিতীয় হুগলি সেতুও বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার জেরে যানজটের পাশাপাশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় নিত্যযাত্রীদের।
সকালে হাওড়া স্টেশনে এক যাত্রী বলেন, “কলকাতায় জরুরি কাজ নিয়ে এসেছিলাম। জায়গায় জায়গায় রাস্তা বন্ধ। কী করব বুঝতে পারছি না।”
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমায়েত বাড়তে থাকে। তবে নবান্নমুখী সব রাস্তাতেই ব্যারিকেড ছিল।
পুলিশি ব্যারিকেড টপকে এগিয়ে যেতে গিয়ে বাধা পান অভিযানে সামিলরা, কোথাও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় কাউকে কাউকে।
সাঁতরাগাছি, হাওড়া ময়দান, পার্কস্ট্রিটসহ একাধিক অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

নবান্নগামী সমস্ত রাস্তায় এভাবেই ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল
প্রত্যক্ষদর্শীরা কী বললেন?
নবান্নের উদ্দেশে রওনা হওয়া বেশিরভাগ মিছিলের চিত্র একইরকম ছিল।
ব্যারিকেডের অপর প্রান্তে থাকা পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিতে দেখা গিয়েছে মিছিলে সামিল ব্যক্তিদের।
পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে আসা এক নারী পুলিশি ব্যারিকেডের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, “শুধুমাত্র আরজি করের ঘটনাই তো নয়। তারপর কি মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধ বন্ধ হয়েছে? একের পর এক ধর্ষণ, খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে।”
“রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু আছে? পুলিশ কী করছে? অথচ নবান্ন অভিযানের সময় এদের এত তৎপরতা। অন্য সময় কোথায় থাকে এরা?”
কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়াতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের একাংশকে।
প্রসঙ্গত, সমস্ত রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানালেও মূলত গেরুয়া শিবিরের নেতাদেরই রাস্তায় দেখা গেছে বলেই জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
সৌম্য গাঙ্গুলি নামে হাওড়ার এক বাসিন্দা বলেন, “নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা সব রাজনৈতিক দলের মানুষকে সামিল হতে বললেও মূলত বিজেপির সমর্থকদেরই মিছিলে দেখা গিয়েছে। আম জনতাও রয়েছে। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার মানুষ সামিল হয়েছেন আজ।”
“তবে পরিস্থিতি যাতে গতবারের মতো বিশৃঙ্খল না হয়ে ওঠে, তার জন্য পুলিশ আরও বেশি তৎপর।”
নিহত চিকিৎসকের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়ে গত বছর অগাস্ট মাসে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ডাকা নবান্ন অভিযানের সময় চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা দেখা গিয়েছিল। সেই অভিযানে অংশ নিয়েছিল বিজেপি।
সেই সময়েও অভিযান আটকাতে বিশালকারের ব্যারিকেড বসানো হয়। ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর সময় পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে জল কামান এবং কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোঁড়ে বলে অভিযোগ। আন্দোলনকারী এবং পুলিশের মধ্যে জায়গায় জায়গায় সংঘর্ষ বাঁধে যাতে দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন আহত হন।
প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সকলের মৌলিক অধিকার।’ তাই এই অভিযান রোখা যাবে না। তবে আইন শৃঙ্খলা যাতে ব্যহত না হয় তাও লক্ষ্য রাখতে হবে।
‘কালীঘাট চলো’ কর্মসূচি
গত বছর নয়ই আগস্ট আরজি করের পড়ুয়া- চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর প্রথম আন্দোলন শুরু করেন ওই চিকিৎসকের সতীর্থ, জুনিয়র চিকিৎসকরা। একে একে অন্যান্য কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকরাও তাতে সামিল হন। সামিল হন সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। নাগরিক সমাজও প্রতিবাদে রাস্তায় নামে।
সেই চিকিৎসকদের একাংশ বিচারের দাবি জানিয়ে শনিবার ‘কালীঘাট চলো’ কর্মসূচির ডাক দেন।
কিন্তু নবান্ন অভিমুখে মিছিলকে বাধা দিতে রাস্তায় রাস্তায় যেমন ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল, সেই একই ছবি দেখা যায় কালীঘাট লাগোয়া অঞ্চলেও।
বিকেল থেকেই হাজরার কাছে জমায়েত শুরু হয়। মঞ্চও বাঁধা হয়। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
তাদের মধ্যে এক নারী বলেন, “কালীঘাট যেতে পারব কি না জানি না, কারণ জায়গায় জায়গায় ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। এখানেই অবস্থান বিক্ষোভ করব।”
“আজ অভয়ার মায়ের (নিহত চিকিৎসকের মা) সঙ্গে যা হয়েছে, তা ন্যাক্কারজনক। বিচার চাইতে গিয়ে যদি মার খেতে হয়, তাহলে আর কী বলার থাকতে পারে!”
আরেকজন বলেন, “আজ পুলিশে পুলিশে সয়লাব। এত পুলিশ সেদিন কোথায় ছিল, যেদিন আমাদের দিদিকে হাসপাতালে নির্যাতনের পর খুন করা হয়?”

ব্যারিকেড টপকে যাওয়ার চেষ্টা করেন কর্মসূচিতে সামিলদের একাংশ
পুলিশ কী বলেছে?
কলকাতা পুলিশর তরফে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করা হয়, ‘নবান্ন অভিযানের’ জন্য কোনো আবেদন জানানোই হয়নি।
রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর নবান্ন এবং ওই ভবন সংলগ্ন এলাকায় জমায়েত করা যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
কালীঘাটেও বিক্ষোভ দেখানো যাবে না বলে জানানো হয়।
তবে পুলিশের তরফে জানানো হয় শান্তিপূর্ণ ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচির জন্য আন্দোলনকারীরা হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের অন্তর্গত সাঁতরাগাছি বাসস্ট্যান্ড এবং কলকাতা পুলিশের এলাকার রানী রাসমণি অ্যাভিনিউতে জমায়েত করতে পারেন।
তবে প্রতিবাদ মিছিলে যেন বিশৃঙ্খলা না দেখা যায়, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে ‘হুঁশিয়ার’ করা হয়।
নির্দেশ অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
পুলিশের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের অভিযোগ উঠলেও, পাল্টা অভিযোগ করেছে কলকাতা পুলিশ। তাদের অভিযোগ, নবান্নমুখী মিছিলে সামিল ব্যক্তিদের একাংশ পুলিশকে নিশানা করায় কয়েকজন পুলিশকর্মী আঘাত পেয়েছেন।
বিবিসি নিউজ বাংলা
Sarakhon Report 


















