০৪:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
কাম্বোডিয়ার নতুন ২ বিলিয়ন ডলারের বিমানবন্দর—পর্যটন বাড়াতে আধ্যাত্মিকতা, আধুনিকতা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার মিশ্রণ মিডিয়া জগতে বড় রদবদলের সম্ভাবনা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তব আলোচনার প্রতিফলন নয়: সালাহউদ্দিন ফখরুলের অভিযোগ: জনগণ ও রাজনৈতিক দলকে প্রতারণা করেছে সমন্বয় কমিশন, অভিযোগের তীর ইউনূসের দিকেও ট্রাম্পের এশিয়া সফরের শেষ গন্তব্য দক্ষিণ কোরিয়া—চীন ও বাণিজ্য আলোচনায় সমঝোতার ইঙ্গিত শতাব্দীর ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’ ধ্বংসস্তূপে জ্যামাইকা, বিপদের মুখে কিউবা আরব আমিরাতের পারফিউমশিল্প— রাতের সুবাসে আরবের ঐতিহ্যের ছোঁয়া মানসিক স্বাস্থ্য ও MAID বিতর্ক: কষ্টের অবসান কি মৃত্যুর অনুমোদন নাকি ভালো জীবনের সহায়তা? হোয়াইট হাউসের ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বলরুম ও অতিথি সুইট যুক্ত হচ্ছে ট্রাম্পের ‘নতুন’ ইস্ট উইং হামাসের হামলার পর বার্লিনের এক রেস্তোরাঁয় শান্তির স্বপ্ন ভেঙে গেল

ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিঃ আমেরিকা জেতার বদলে হারতে পারে

ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্যিক কৌশল

আমেরিকার বর্তমান বাণিজ্য পরিস্থিতি দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। পূর্বের মতো স্থিতিশীল নিয়ম, কম শুল্ক আর বহুপাক্ষিক চুক্তির বদলে এখন চলছে একধরনের ‘সম্রাজ্যবাদী পছন্দের’ ব্যবস্থা। শুল্ক শুধু বেশি নয়, প্রেসিডেন্টের ইচ্ছানুযায়ী নির্ধারিত হচ্ছে। কানাডা ও ভারতকে বিরক্ত করায় তাদের জন্য শুল্ক হতে পারে ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া দ্রুত চুক্তি করেছে আমেরিকার সঙ্গে, যাতে শুল্কের হুমকি এড়ানো যায়। ট্রাম্প বাণিজ্য ঘাটতিকে ‘চুরি’ মনে করেন এবং সে কারণেই তিনি ১০% থেকে ৪১% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন বহু বাণিজ্য অংশীদারের ওপর, যা ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে।

আমেরিকা জিতছে’ ভ্রান্ত ধারণা

অনেকে মনে করছেন, যেহেতু ট্রাম্প পুরো নিয়ন্ত্রণে, আমেরিকা জিতছে। বড় কোনো বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ হয়নি; কেবল কিছু দেশ, যেমন চীন, পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে, আর বাকি দেশগুলো উচ্চ শুল্ক মেনে নিয়েছে, বাজার খুলেছে এবং আমেরিকায় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শেয়ারবাজারও আপাত শান্ত—এপ্রিলের ‘লিবারেশন ডে’ শুল্ক ঘোষণার পর পতন হলেও এবার তা স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু এ ধারণা ভুল। ট্রাম্প এমন এক প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, যার ক্ষতি শেষ পর্যন্ত আমেরিকাকেই ভোগ করতে হবে।

শুল্কের আসল বোঝা কার ওপর

অনেকে মনে করেন উচ্চ শুল্ক কেবল বিদেশি বিক্রেতাদের ক্ষতি করে। কিন্তু ইয়েল বাজেট ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকার কার্যকর শুল্কহার এখন ১৮%—যা জানুয়ারির তুলনায় আট গুণ বেশি এবং মহামন্দার সময়ের কাছাকাছি। বাস্তবে, এই শুল্কের মূল বোঝা পড়ছে আমেরিকান ভোক্তা ও কোম্পানির ওপর। গোল্ডম্যান স্যাকসের হিসাবে, মোট শুল্কের প্রায় ৮০ শতাংশই বহন করছে আমেরিকার ভোক্তা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। উদাহরণস্বরূপ, শুধু ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ফোর্ডকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার এবং জেনারেল মোটরসকে ১.১ বিলিয়ন ডলার শুল্ক গুনতে হয়েছে।

বাজারের প্রতিক্রিয়া ও বাস্তবতা

এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক এখনো এপ্রিলের তুলনায় ১০% বেশি এবং ডলার সাম্প্রতিক সময়ে শক্তিশালী হয়েছে। তবে বাজারের এই শক্তি মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্পের প্রবল উত্থানের কারণে। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, কোম্পানিগুলো সরবরাহ ব্যবস্থা বদলে শুল্কের প্রভাব কমাবে। কিন্তু চুক্তির বিস্তারিত এখনো অস্পষ্ট, আর বাজারের এই নীরবতা ট্রাম্পকে আরও এগোতে উৎসাহিত করতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি অনিবার্য

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতাশাজনক ছিল এবং মুদ্রাস্ফীতি বেশি ছিল। কর্মসংস্থান তৈরির হারও কমছে। তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদে হবে। ট্রাম্প পূর্বের পূর্বাভাসযোগ্য বহুপাক্ষিক শুল্কব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে এমন এক দ্বিপাক্ষিক ব্যবস্থা গড়ে তুলছেন যেখানে শুল্কহার দেশের ওপর নির্ভর করবে এবং প্রতিনিয়ত দর কষাকষির মধ্যে থাকবে। এতে কোম্পানিগুলো উদ্ভাবনের বদলে ‘সিস্টেমে খাপ খাওয়াতে’ দক্ষ হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করবে। লবিংয়ে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে, বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়বে, এবং ভোক্তারা পণ্যের বৈচিত্র্য ও নতুনত্ব থেকে বঞ্চিত হবে।

পরিবর্তন কেন কঠিন হবে

ভবিষ্যতের কোনো প্রেসিডেন্ট শুল্ক কমাতে চাইলে বাধা পাবেন, কারণ অনেক কোম্পানি শুল্কের সুরক্ষায় অভ্যস্ত হয়ে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অযোগ্য হয়ে পড়বে। ভোক্তারা বুঝতেই পারবে না তারা কত বৈচিত্র্যময় পণ্য হারিয়েছে। আইনপ্রণেতারাও রাজস্ব হারানোর ভয়ে শুল্ক কমাতে অনাগ্রহী হবে। তাই এই ক্ষতিকর ব্যবস্থা ট্রাম্পের পরেও দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

কাম্বোডিয়ার নতুন ২ বিলিয়ন ডলারের বিমানবন্দর—পর্যটন বাড়াতে আধ্যাত্মিকতা, আধুনিকতা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার মিশ্রণ

ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিঃ আমেরিকা জেতার বদলে হারতে পারে

০৩:৩০:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্যিক কৌশল

আমেরিকার বর্তমান বাণিজ্য পরিস্থিতি দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। পূর্বের মতো স্থিতিশীল নিয়ম, কম শুল্ক আর বহুপাক্ষিক চুক্তির বদলে এখন চলছে একধরনের ‘সম্রাজ্যবাদী পছন্দের’ ব্যবস্থা। শুল্ক শুধু বেশি নয়, প্রেসিডেন্টের ইচ্ছানুযায়ী নির্ধারিত হচ্ছে। কানাডা ও ভারতকে বিরক্ত করায় তাদের জন্য শুল্ক হতে পারে ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া দ্রুত চুক্তি করেছে আমেরিকার সঙ্গে, যাতে শুল্কের হুমকি এড়ানো যায়। ট্রাম্প বাণিজ্য ঘাটতিকে ‘চুরি’ মনে করেন এবং সে কারণেই তিনি ১০% থেকে ৪১% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন বহু বাণিজ্য অংশীদারের ওপর, যা ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে।

আমেরিকা জিতছে’ ভ্রান্ত ধারণা

অনেকে মনে করছেন, যেহেতু ট্রাম্প পুরো নিয়ন্ত্রণে, আমেরিকা জিতছে। বড় কোনো বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ হয়নি; কেবল কিছু দেশ, যেমন চীন, পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে, আর বাকি দেশগুলো উচ্চ শুল্ক মেনে নিয়েছে, বাজার খুলেছে এবং আমেরিকায় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শেয়ারবাজারও আপাত শান্ত—এপ্রিলের ‘লিবারেশন ডে’ শুল্ক ঘোষণার পর পতন হলেও এবার তা স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু এ ধারণা ভুল। ট্রাম্প এমন এক প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, যার ক্ষতি শেষ পর্যন্ত আমেরিকাকেই ভোগ করতে হবে।

শুল্কের আসল বোঝা কার ওপর

অনেকে মনে করেন উচ্চ শুল্ক কেবল বিদেশি বিক্রেতাদের ক্ষতি করে। কিন্তু ইয়েল বাজেট ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকার কার্যকর শুল্কহার এখন ১৮%—যা জানুয়ারির তুলনায় আট গুণ বেশি এবং মহামন্দার সময়ের কাছাকাছি। বাস্তবে, এই শুল্কের মূল বোঝা পড়ছে আমেরিকান ভোক্তা ও কোম্পানির ওপর। গোল্ডম্যান স্যাকসের হিসাবে, মোট শুল্কের প্রায় ৮০ শতাংশই বহন করছে আমেরিকার ভোক্তা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। উদাহরণস্বরূপ, শুধু ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ফোর্ডকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার এবং জেনারেল মোটরসকে ১.১ বিলিয়ন ডলার শুল্ক গুনতে হয়েছে।

বাজারের প্রতিক্রিয়া ও বাস্তবতা

এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক এখনো এপ্রিলের তুলনায় ১০% বেশি এবং ডলার সাম্প্রতিক সময়ে শক্তিশালী হয়েছে। তবে বাজারের এই শক্তি মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্পের প্রবল উত্থানের কারণে। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, কোম্পানিগুলো সরবরাহ ব্যবস্থা বদলে শুল্কের প্রভাব কমাবে। কিন্তু চুক্তির বিস্তারিত এখনো অস্পষ্ট, আর বাজারের এই নীরবতা ট্রাম্পকে আরও এগোতে উৎসাহিত করতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি অনিবার্য

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতাশাজনক ছিল এবং মুদ্রাস্ফীতি বেশি ছিল। কর্মসংস্থান তৈরির হারও কমছে। তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদে হবে। ট্রাম্প পূর্বের পূর্বাভাসযোগ্য বহুপাক্ষিক শুল্কব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে এমন এক দ্বিপাক্ষিক ব্যবস্থা গড়ে তুলছেন যেখানে শুল্কহার দেশের ওপর নির্ভর করবে এবং প্রতিনিয়ত দর কষাকষির মধ্যে থাকবে। এতে কোম্পানিগুলো উদ্ভাবনের বদলে ‘সিস্টেমে খাপ খাওয়াতে’ দক্ষ হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করবে। লবিংয়ে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে, বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়বে, এবং ভোক্তারা পণ্যের বৈচিত্র্য ও নতুনত্ব থেকে বঞ্চিত হবে।

পরিবর্তন কেন কঠিন হবে

ভবিষ্যতের কোনো প্রেসিডেন্ট শুল্ক কমাতে চাইলে বাধা পাবেন, কারণ অনেক কোম্পানি শুল্কের সুরক্ষায় অভ্যস্ত হয়ে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অযোগ্য হয়ে পড়বে। ভোক্তারা বুঝতেই পারবে না তারা কত বৈচিত্র্যময় পণ্য হারিয়েছে। আইনপ্রণেতারাও রাজস্ব হারানোর ভয়ে শুল্ক কমাতে অনাগ্রহী হবে। তাই এই ক্ষতিকর ব্যবস্থা ট্রাম্পের পরেও দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে।