ভূমিকা
আফগানিস্তানে সিআইএ পরিচালিত একটি অভিযানে আল-কায়েদা নেতা আইমান আল-জাওয়াহিরির হত্যাকাণ্ডের পরপরই মার্কিন নাগরিক মাহমুদ হাবিবি তালেবানের হাতে আটক হন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও তালেবান দাবি করছে, তারা হাবিবিকে আটক করেনি এবং তার অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানে না। এই ঘটনার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও হাবিবির মুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে জটিলতা অব্যাহত রয়েছে।
আটক ও তালেবানের অস্বীকার
২০২২ সালের ১০ আগস্ট, কাবুলের শেরপুর এলাকায় নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হওয়ার পর হাবিবিকে তালেবানের জেনারেল ডিরেক্টরেট অব ইন্টেলিজেন্স (জিডিআই) বাহিনীর সদস্যরা আটক করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। তারা হাবিবির গাড়ি ঘিরে ধরে, অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে ল্যাপটপ ও কাগজপত্র নিয়ে যায়।
তালেবান তিন বছর পরও দাবি করছে, তারা তাকে আটক করেনি। কিন্তু মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান ও মোবাইল ফোনের ডেটা এ দাবির বিপরীত তথ্য দিচ্ছে।

সিআইএ সংযোগের সূত্র
মার্কিন সূত্র জানায়, হাবিবির কর্মস্থল এশিয়া কনসালটেন্সি গ্রুপ (এএসজি)-এ সিআইএ অনুপ্রবেশ করে নিরাপত্তা ক্যামেরা ব্যবহার করে জাওয়াহিরির অবস্থান শনাক্ত করেছিল। ২০২২ সালের ৩১ জুলাই ড্রোন হামলায় জাওয়াহিরি নিহত হন। মাত্র ১০ দিন পর হাবিবি দুবাই থেকে কাবুলে ফিরে আসেন এবং আটক হন।
মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারণা, হাবিবি সিআইএ-র পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না, তবুও তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে ধরা হয়।
মার্কিন প্রচেষ্টা ও পুরস্কার ঘোষণা
মার্কিন প্রশাসন হাবিবির মুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। তার মুক্তির জন্য ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এফবিআই আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে ‘জিম্মি’ হিসেবে বিবেচনা করছে।
তালেবানকে প্রমাণসহ জানানো হলেও তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছে এবং প্রস্তাবিত বন্দি বিনিময়ও প্রত্যাখ্যান করেছে।

আটক প্রক্রিয়ার বিবরণ
হাবিবি গ্রেপ্তারের দিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। দুপুরে ফোনে অফিসে তালেবান হানা দেওয়ার খবর পান এবং তৎক্ষণাৎ বের হন। গাড়িতে ওঠার সাথে সাথেই আটক হন।
পরে তালেবান বাহিনী অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে তল্লাশি চালায়। ঘটনাস্থলে বহু লোক জড়ো হয়েছিল। একই সময়ে এএসজি-র আরও ৩০ কর্মীকে আটক করা হয়, তবে প্রায় সবাই পরে মুক্তি পায়—হাবিবি ও একজন ব্যতীত।
হাবিবির পেশাগত জীবন
কান্দাহার-উৎপত্তি পরিবারে জন্ম নেওয়া হাবিবি কাবুলে বড় হয়েছেন। চমৎকার ইংরেজি দক্ষতার কারণে ২০০৮ সালে জাতিসংঘের বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থায় কাজ শুরু করেন। পরে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও আফগান বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৯ সালে পদত্যাগ করে তিনি এআরএক্স কমিউনিকেশনসে যোগ দেন এবং কাবুল বিমানবন্দরের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন। ২০২১ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন।

পরিবারের অপেক্ষা
হাবিবির স্ত্রী, কন্যা ও বাবা-মা ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস শুরু করেন। তারা হাবিবির কোনো খোঁজ পাননি।
তার ভাই আহমদ বলেন, “যদি সিআইএ বা কোম্পানি তাকে সতর্ক করত, তবে সে ওই সময় কাবুলে ফিরত না।”
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রভাব
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, হাবিবির মুক্তি পেলে তা যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান সম্পর্ক উন্নয়নের একটি সহজ উপায় হতে পারে। তালেবান আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চায়, আর এই ইস্যুটি সমাধান হলে সংলাপের নতুন পথ খুলতে পারে।
তবে এখন পর্যন্ত এই মার্কিন নাগরিকের মুক্তি মিলছে না, আর তালেবানও এ বিষয়ে দেয়াল তুলে রেখেছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















