আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বিশ্বমঞ্চে ‘গোস্ট’-এর উত্থান
সুইডিশ হার্ড-রক ব্যান্ড ‘গোস্ট’-এর নেতা টোবিয়াস ফোর্জ জুলাই মাসে ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে তাঁদের প্রথম পরিবেশনায় ব্যান্ডের দীর্ঘ যাত্রার কথা স্মরণ করলেন। ২০১১ সালে নিউ ইয়র্কের একটি ছোট ক্লাবে ৪০০ আসনের শো থেকে শুরু করে বিশ্ববিখ্যাত এরিনায় আসা পর্যন্ত পথকে তিনি ‘ভৌগোলিকভাবে ছোট হলেও বাস্তবে দীর্ঘ’ বলে বর্ণনা করেন। মুখোশধারী সহশিল্পীদের সঙ্গে তিনি মঞ্চে উপস্থিত হন, যারা নরকের প্রহরীর মতো সাজে পরিচিত ‘নেমলেস গুলস’।
রহস্যময়তা ও মঞ্চনাট্যের শক্তি
‘গোস্ট’ শুধু মেটাল সঙ্গীত নয়, বরং রহস্য, গল্প ও নাটকীয় মঞ্চপ্রদর্শনের মাধ্যমে শ্রোতাদের মন জয় করেছে। তাঁদের ষষ্ঠ অ্যালবাম ‘স্কেলেতা’ মে মাসে বিলবোর্ড ২০০ তালিকায় এক নম্বরে ছিল। একই ধারায় ব্রিটিশ ব্যান্ড ‘স্লিপ টোকেন’ও মুখোশ ও গোপনীয়তা বজায় রেখে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তাদের অ্যালবাম ‘ইভেন ইন আর্কেডিয়া’ মাত্র তিন সপ্তাহে শীর্ষে উঠে আসে।
ঐতিহ্য ও নতুন ধারার মিশ্রণ
১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে ‘স্লিপনট’ যেভাবে মুখোশ ও সহিংস ভিজ্যুয়াল দিয়ে ভক্তদের আকৃষ্ট করেছিল, আজ ‘গোস্ট’ ও ‘স্লিপ টোকেন’ তা আরও সৃজনশীল উপায়ে করছে। আরসিএ রেকর্ডস-এর কর্মকর্তা জন ফ্লেকেনস্টাইন মনে করেন, স্ট্রিমিং যুগে সঙ্গীত যতই নির্দিষ্ট ধারার বা নিস হতে পারে, তবুও তা নিজস্ব ভক্তগোষ্ঠী গড়ে তুলতে এবং মূলধারায় প্রভাব ফেলতে সক্ষম।
মুখোশের পেছনের কাহিনি
ফোর্জ জানান, মুখোশ ও পরিচয় গোপন রাখার সিদ্ধান্ত এসেছে তাঁর আন্ডারগ্রাউন্ড ডেথ-মেটাল ও ব্ল্যাক-মেটাল সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা থেকে, যেখানে তথ্য ছিল সীমিত এবং কল্পনাই ছিল প্রধান ভরসা। ভক্তরা শো-কে ‘রিচুয়াল’ বলে ডাকে, যেখানে অনেকেই বিশেষ পোশাক ও থিমযুক্ত সাজে অংশ নেন—যেমন কঙ্কালের মেকআপ, পোপের পোশাক বা সন্ন্যাসিনীর সাজ।
ভক্তদের শিল্পীসুলভ সম্পৃক্ততা
১৪ বছর বয়সী লেসান জনসন পূর্ণ কঙ্কাল বডিস্যুট ও ধাতব মুখোশ পরে শো-তে অংশ নেন, আর ১৯ বছর বয়সী মিয়া সেনহোল্ট-হলুন্ড নিজ হাতে তৈরি ‘গোস্ট’-থিমযুক্ত ব্রেসলেট বিতরণ করেন। এই মেলামেশা টেলর সুইফটের ভক্তদের মতোই উষ্ণ ও সৃজনশীল পরিবেশ তৈরি করে।
‘স্লিপ টোকেন’-এর ভিন্নধর্মী সঙ্গীত
‘স্লিপ টোকেন’-এর ভোকালিস্ট ‘ভেসেল’ ও ড্রামার ‘II’ মেটালের তীব্রতা, অন্তর্মুখী পপ ও আরঅ্যান্ডবির মিশ্রণ তৈরি করেন। ভক্তরা বলেন, ব্যান্ডের গোপনীয়তা তাঁদেরকে সঙ্গীতের সঙ্গে আরও ব্যক্তিগতভাবে যুক্ত করে, কারণ এখানে শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবন বা অহং চাপিয়ে দেওয়া হয় না।
সঙ্গীতে আবেগ ও আশা
ফোর্জের সুরে ক্লাসিক মেটালের গাম্ভীর্য ও নাটকীয়তা থাকলেও তা শ্রোতাদের জন্য সহজবোধ্য ও মেলোডিক। তাঁর লক্ষ্য শুধু বিনোদন নয়, বরং মানুষকে ভাবতে ও অনুভব করতে উদ্বুদ্ধ করা, এমনকি আশাহীনদের মাঝেও ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদ তৈরি করা।
এই ধারা প্রমাণ করে, মুখোশধারী সঙ্গীত শুধু বিনোদনের অংশ নয়—এটি একটি সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা, যেখানে রহস্য, গল্প, শিল্প ও ভক্তদের অংশগ্রহণ মিলেমিশে এক অনন্য সমাজ তৈরি করে।