উত্তর বাংলাদেশের নদীগুলো — বিশেষ করে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র (যমুনা) ও দুধকুমার নদী — এই অঞ্চলের জীবন ও অর্থনীতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। সাম্প্রতিক সময়ে এসব নদীর পানির মাত্রা ও প্রবাহের পরিবর্তন বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। বর্তমান পানির স্তর, নদীর আচরণ এবং নিম্নাঞ্চলে সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি এই প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করা হলো।
নদীর পানি ও প্রবাহের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (BWDB) ও ফ্লাড ফরকাস্টিং অ্যান্ড ওয়ার্নিং সেন্টারের তথ্যমতে, তিস্তা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও রংপুরের নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলেও তা এখনও বিপদসীমার নিচে রয়েছে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। সামগ্রিকভাবে নদীগুলোর পানির স্তর ঊর্ধ্বমুখী, যা নিম্নভূমিতে দ্রুত বন্যার সম্ভাবনা তৈরি করছে।
নদীতীরবর্তী নিম্নভূমির ঝুঁকি ও অতীতের বন্যা
ধরলা নদী কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট সীমান্ত অতিক্রম করার সময় মারাত্মক ক্ষয়প্রবণ হয়ে ওঠে। ২০০৭ সালে এই নদী প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বাঁধ ভেঙে দেয়, ফলে হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়।
কুড়িগ্রাম জেলার ভূপ্রকৃতিতে তিস্তা, ধরলা, যমুনা ছাড়াও দুধকুমার, ফুলকুয়াড়, গঙ্গাধর ও জিনজিরামসহ অসংখ্য নদী রয়েছে, যেগুলো প্রতি বর্ষায় নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলকে নিয়মিতভাবে প্লাবিত করে।
সতর্কতা ও সম্ভাব্য পরিস্থিতি
আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলে চারপাশের চরাঞ্চল ও নিম্নভূমি দ্রুত প্লাবিত হতে পারে। ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি আপাতত বিপদসীমার নিচে থাকলেও, অব্যাহত পানি বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে।
ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহণ, নিরাপদ আশ্রয়স্থল চিহ্নিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধ মজুত রাখা জরুরি।
দিকনির্দেশনা
বর্তমান পরিস্থিতিতে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদী তীরবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারি করা প্রয়োজন। তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা বেশি, যা নিম্নাঞ্চল, চর ও কৃষিজমি প্লাবিত করতে পারে।
স্থানীয় প্রশাসন ও জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।