শৈশব ও প্রারম্ভিক জীবন
সৌম্য সরকার ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩ সালে সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণ করেন। দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতির মাঝেই কেটেছে তাঁর শৈশব। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ছিল গভীর আগ্রহ, বিশেষ করে ক্রিকেটে। পরিবার ও স্থানীয় ক্রীড়া মহলের সহায়তায় তিনি দ্রুতই স্কুল ক্রিকেটে নিজের প্রতিভার পরিচয় দেন। স্কুল পর্যায়ে তিনি ছিলেন একাধারে ব্যাটসম্যান ও মিডিয়াম পেসার, যা তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছিল।
ঘরোয়া ক্রিকেটে উত্থান
বয়সভিত্তিক দলে খেলার মাধ্যমেই প্রথমবার নজরে আসেন সৌম্য। অনূর্ধ্ব-১৯ বাংলাদেশ দলের হয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক যুব সিরিজে পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তিনি নির্বাচকদের মন জয় করেন। বিশেষ করে ২০১২ সালে যুব এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁর ৭২ রানের ইনিংস ছিল আলোচনার বিষয়। ঘরোয়া লিগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচগুলোতে নিয়মিত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তিনি জাতীয় দলে জায়গা পাকা করেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ও শুরুর সাফল্য
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তাঁর। সেই ম্যাচে ব্যাট হাতে বড় রান না পেলেও ফিল্ডিং ও বোলিংয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। একই বছরের শেষ দিকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক ম্যাচে ৩৫ বলে ৩৮ রান করে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের পরিচয় দেন।
২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৫ রানের ইনিংস তাঁর অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ ৩২২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় পায়, যেখানে সৌম্যের ইনিংস দলকে মজবুত সূচনা দেয়।
ব্যাটিং স্টাইল ও বৈশিষ্ট্য
বাঁহাতি ওপেনার সৌম্য সরকার পরিচিত তাঁর ফ্লুইড স্ট্রোকপ্লে, কভার ড্রাইভ এবং লম্বা ছক্কা মারার দক্ষতার জন্য। পাওয়ারপ্লেতে দ্রুত রান তুলতে পারদর্শী হওয়ায় দল প্রায়ই আক্রমণাত্মক সূচনা পেত। তবে ধারাবাহিকতার ঘাটতি তাঁকে অনেক সময় সমালোচনার মুখে ফেলেছে। ২০১৯ সালের নিউজিল্যান্ড সফরে পরপর তিন ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করে তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সও তাঁর ক্ষমতার মধ্যে।

উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স ও পরিসংখ্যান
- • ২০১৫ বিশ্বকাপ: স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৫ রান (শারজাহ)
- • ২০১৫ পাকিস্তান সিরিজ: তিন ম্যাচে ২০৮ রান, গড় ৬৯.৩৩; প্রথম ম্যাচেই ১৩১ রানের ইনিংস
- • ২০১৯ নিউজিল্যান্ড সিরিজ: তিন ম্যাচে টানা তিন হাফসেঞ্চুরি (৫২, ৬৩, ৬৫)
- • টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার: পাওয়ারপ্লেতে গড় স্ট্রাইক রেট ১৩০-এর উপরে
বোলিং অবদান
যদিও সৌম্য মূলত ব্যাটসম্যান, তবে তাঁর মিডিয়াম পেস বোলিং সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দলের জন্য কার্যকর হয়েছে। ২০১৬ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে ২ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু এনে দেন। অনেক সময় অধিনায়ক তাঁকে আক্রমণে এনে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন।
সতীর্থ ও কোচের মন্তব্য
সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা সৌম্য সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ওর মধ্যে টপ-অর্ডারের একজন ম্যাচ উইনার হওয়ার সব গুণ আছে। শুধু আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে হবে এবং নিজের খেলায় মনোযোগী থাকতে হবে।”

ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স মন্তব্য করেন, “সৌম্য যখন ফর্মে থাকে, তখন সে যেকোনো ম্যাচ একাই জিতিয়ে দিতে পারে।”
ক্যারিয়ারের চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা
তাঁর প্রতিভা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, তবে ধারাবাহিকতার অভাব, আউট হওয়ার ধরণ এবং বড় ইনিংস গড়ে তুলতে না পারা অনেক সময় তাঁর ক্যারিয়ারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইনজুরিও কয়েকবার দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে রাখে। ২০২০ সালে কাঁধের চোটের কারণে কয়েক মাস খেলা থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল।
বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ
সৌম্য সরকার বর্তমানে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফর্ম ফিরে পেতে কঠোর পরিশ্রম করছেন এবং সীমিত ওভারের ফরম্যাটে জাতীয় দলে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিপিএল ও প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত রান করে নির্বাচকদের নজরে আসার চেষ্টা করছেন তিনি। ভক্তরা আশা করছেন, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আবারও বাংলাদেশ দলের টপ-অর্ডারে বড় ভূমিকা রাখবেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















