১২:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মার্কিন-চীন বাণিজ্য বিরতি: কৃষি আমদানি ও খনিজ বাজারে বেইজিংয়ের প্রভাব

বাণিজ্য বিরতির সময়সীমা বৃদ্ধি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য বিরতির সময়সীমা আরও তিন মাস বাড়িয়ে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত করেছেন। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে প্রযোজ্য হতে যাওয়া উচ্চমাত্রার আমদানি শুল্ক আপাতত স্থগিত থাকছে। আগে নির্ধারিত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক না বাড়িয়ে ৩০ শতাংশে রাখা হয়েছে, যা মে মাসে দেওয়া এক নির্বাহী আদেশের ধারাবাহিকতা। এই সিদ্ধান্ত আসে বেইজিংয়ের পাল্টা পদক্ষেপের পর, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল (পরে তা কমিয়ে ১০ শতাংশে আনা হয়) এবং বিরল খনিজ ও চুম্বক রপ্তানি সীমিত করা হয়। এর ফলে মার্কিন গাড়ি, মহাকাশ, প্রতিরক্ষা ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্প বড় ধরনের প্রভাবের মুখে পড়ে।

কৃষি আমদানি: চীনের হাতের আরেকটি বড় অস্ত্র

বিরল খনিজ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও চীন কৃষি আমদানিকে আলোচনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। মার্কিন কৃষিপণ্যের রপ্তানি ২০২৪ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে ১৩.১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৫ সালের একই সময়ে নেমে এসেছে মাত্র ৬.৪ বিলিয়ন ডলারে। ২০২২ সালে এই পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ৪০.৭ বিলিয়ন ডলার।

141,900+ 1 Dolar Stock Photos, Pictures & Royalty-Free Images - iStock

সবচেয়ে বড় পতন ঘটেছে সয়াবিনে। ২০২২ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে চীন যেখানে ১৭.৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি সয়াবিন আমদানি করেছিল, ২০২৫ সালে তা নেমে এসেছে মাত্র ২.৫ বিলিয়ন ডলারে। এ কারণে ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় চীনকে মার্কিন সয়াবিন আমদানি দ্রুত চার গুণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

সয়াবিন ছাড়াও চীন মার্কিন ভুট্টা, যব, জোয়ার, তুলা, গরুর মাংস, শূকরের মাংস, পোলট্রি, কাঠজাত পণ্য এবং কাঠবাদাম, পেস্তা, আখরোটসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের আমদানি কমিয়েছে।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কৃষি আমদানিকারক হিসেবে চীনের ভূমিকা

দুই বছর আগেও চীন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় সয়াবিন, রেপসিড, গম, বার্লি, জোয়ার, ওটস ও তুলা আমদানিকারক এবং ভুট্টা ও পাম তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। ২০২৪ সালে চীন ১০৫ মিলিয়ন টন সয়াবিন, ১৪.২ মিলিয়ন টন বার্লি, ১৩.৮ মিলিয়ন টন ভুট্টা, ১১.২ মিলিয়ন টন গম এবং ৮.৭ মিলিয়ন টন জোয়ার আমদানি করেছে, যা মূলত বিশাল শূকর ও পোলট্রি শিল্পের খাদ্য চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হয়েছে। চীনে বিশ্বের অর্ধেক শূকর এবং পাঁচ ভাগের এক ভাগ মুরগি রয়েছে।

২০২৪ সালে চীন ৭৪.৭ মিলিয়ন টন সয়াবিন ব্রাজিল থেকে এবং মাত্র ২২.১ মিলিয়ন টন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একইভাবে টেক্সাস ও ওকলাহোমার গরুর মাংস উৎপাদক এবং ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন, নিউ মেক্সিকো ও জর্জিয়ার বাদাম উৎপাদকরাও ক্ষতির মুখে।

India-US trade deal: India receptive to imports of GM farm products used in animal feed? Mini deal in works as Trump deadline nears - Times of India

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কৃষি বাণিজ্যের উত্থান

২০২৫ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য রপ্তানি যেখানে চীনে ৫১.৩ শতাংশ কমেছে, সেখানে ভারতে বেড়েছে ৪৯.১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে রপ্তানি এবং ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি যথাক্রমে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার ও ৭.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাদাম রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার, যেখানে ২০২৪ সালে ১.১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাদাম আমদানি করেছে এবং ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে তা আগের বছরের তুলনায় ৪২.৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫৯.৬ মিলিয়ন ডলারে।

যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিরও ৩৫ শতাংশ ক্রেতা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানিকৃত ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের জমাটবাঁধা চিংড়ির মধ্যে ১.৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য গেছে যুক্তরাষ্ট্রে।

শুল্কবৃদ্ধি সত্ত্বেও সম্পর্ক

এত ঘনিষ্ঠ কৃষি বাণিজ্য সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসন ২৭ আগস্ট থেকে ভারতীয় আমদানির ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করছে। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্কও অন্তর্ভুক্ত। তবে চীনের ক্ষেত্রে একই ধরনের শুল্ক আরোপ করা হয়নি।

মার্কিন-চীন বাণিজ্য বিরতি: কৃষি আমদানি ও খনিজ বাজারে বেইজিংয়ের প্রভাব

০২:৩০:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

বাণিজ্য বিরতির সময়সীমা বৃদ্ধি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য বিরতির সময়সীমা আরও তিন মাস বাড়িয়ে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত করেছেন। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে প্রযোজ্য হতে যাওয়া উচ্চমাত্রার আমদানি শুল্ক আপাতত স্থগিত থাকছে। আগে নির্ধারিত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক না বাড়িয়ে ৩০ শতাংশে রাখা হয়েছে, যা মে মাসে দেওয়া এক নির্বাহী আদেশের ধারাবাহিকতা। এই সিদ্ধান্ত আসে বেইজিংয়ের পাল্টা পদক্ষেপের পর, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল (পরে তা কমিয়ে ১০ শতাংশে আনা হয়) এবং বিরল খনিজ ও চুম্বক রপ্তানি সীমিত করা হয়। এর ফলে মার্কিন গাড়ি, মহাকাশ, প্রতিরক্ষা ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্প বড় ধরনের প্রভাবের মুখে পড়ে।

কৃষি আমদানি: চীনের হাতের আরেকটি বড় অস্ত্র

বিরল খনিজ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও চীন কৃষি আমদানিকে আলোচনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। মার্কিন কৃষিপণ্যের রপ্তানি ২০২৪ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে ১৩.১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৫ সালের একই সময়ে নেমে এসেছে মাত্র ৬.৪ বিলিয়ন ডলারে। ২০২২ সালে এই পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ৪০.৭ বিলিয়ন ডলার।

141,900+ 1 Dolar Stock Photos, Pictures & Royalty-Free Images - iStock

সবচেয়ে বড় পতন ঘটেছে সয়াবিনে। ২০২২ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে চীন যেখানে ১৭.৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি সয়াবিন আমদানি করেছিল, ২০২৫ সালে তা নেমে এসেছে মাত্র ২.৫ বিলিয়ন ডলারে। এ কারণে ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় চীনকে মার্কিন সয়াবিন আমদানি দ্রুত চার গুণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

সয়াবিন ছাড়াও চীন মার্কিন ভুট্টা, যব, জোয়ার, তুলা, গরুর মাংস, শূকরের মাংস, পোলট্রি, কাঠজাত পণ্য এবং কাঠবাদাম, পেস্তা, আখরোটসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের আমদানি কমিয়েছে।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কৃষি আমদানিকারক হিসেবে চীনের ভূমিকা

দুই বছর আগেও চীন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় সয়াবিন, রেপসিড, গম, বার্লি, জোয়ার, ওটস ও তুলা আমদানিকারক এবং ভুট্টা ও পাম তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। ২০২৪ সালে চীন ১০৫ মিলিয়ন টন সয়াবিন, ১৪.২ মিলিয়ন টন বার্লি, ১৩.৮ মিলিয়ন টন ভুট্টা, ১১.২ মিলিয়ন টন গম এবং ৮.৭ মিলিয়ন টন জোয়ার আমদানি করেছে, যা মূলত বিশাল শূকর ও পোলট্রি শিল্পের খাদ্য চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হয়েছে। চীনে বিশ্বের অর্ধেক শূকর এবং পাঁচ ভাগের এক ভাগ মুরগি রয়েছে।

২০২৪ সালে চীন ৭৪.৭ মিলিয়ন টন সয়াবিন ব্রাজিল থেকে এবং মাত্র ২২.১ মিলিয়ন টন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একইভাবে টেক্সাস ও ওকলাহোমার গরুর মাংস উৎপাদক এবং ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন, নিউ মেক্সিকো ও জর্জিয়ার বাদাম উৎপাদকরাও ক্ষতির মুখে।

India-US trade deal: India receptive to imports of GM farm products used in animal feed? Mini deal in works as Trump deadline nears - Times of India

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কৃষি বাণিজ্যের উত্থান

২০২৫ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য রপ্তানি যেখানে চীনে ৫১.৩ শতাংশ কমেছে, সেখানে ভারতে বেড়েছে ৪৯.১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে রপ্তানি এবং ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি যথাক্রমে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার ও ৭.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাদাম রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার, যেখানে ২০২৪ সালে ১.১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাদাম আমদানি করেছে এবং ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে তা আগের বছরের তুলনায় ৪২.৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫৯.৬ মিলিয়ন ডলারে।

যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিরও ৩৫ শতাংশ ক্রেতা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানিকৃত ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের জমাটবাঁধা চিংড়ির মধ্যে ১.৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য গেছে যুক্তরাষ্ট্রে।

শুল্কবৃদ্ধি সত্ত্বেও সম্পর্ক

এত ঘনিষ্ঠ কৃষি বাণিজ্য সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসন ২৭ আগস্ট থেকে ভারতীয় আমদানির ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করছে। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্কও অন্তর্ভুক্ত। তবে চীনের ক্ষেত্রে একই ধরনের শুল্ক আরোপ করা হয়নি।