ইয়োকোসুকা নৌঘাঁটিতে আগমন
যুক্তরাজ্যের বিমানবাহী জাহাজ ‘এইচএমএস প্রিন্স অব ওয়েলস’ প্রথমবারের মতো জাপানে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার কানাগাওয়া প্রদেশের ইয়োকোসুকা নৌঘাঁটিতে জাহাজটি নোঙর করে। এর আগে, জাহাজে থাকা কিছু এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমান জাপানের মেরিটাইম সেলফ-ডিফেন্স ফোর্সের ‘কাগা’ ক্যারিয়ারে অবতরণ ও উড্ডয়ন করে যৌথ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নেয়।
বহুজাতিক নৌ মহড়ার অংশ
২৮০ মিটার দীর্ঘ এই যুদ্ধজাহাজটি বর্তমানে কয়েক মাসব্যাপী ইন্দো-প্যাসিফিক সফরের শেষ ধাপে রয়েছে, যেখানে এটি বহুজাতিক ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইয়োকোসুকায় এটি ব্রিটিশ ডেস্ট্রয়ার ‘ডন্টলেস’ এবং নরওয়ের ফ্রিগেট ‘রোয়াল্ড আমুন্ডসেন’-এর সঙ্গে অবস্থান করছে। ১৯৯০-এর দশকের পর দ্বিতীয়বারের মতো কোনো ব্রিটিশ এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার জাপানে এসেছে—এর আগে ২০২১ সালে ‘এইচএমএস কুইন এলিজাবেথ’ এসেছিল।

ক্রস-ডেকিং অনুশীলন
৪ থেকে ১২ আগস্ট পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অনুষ্ঠিত যৌথ নৌ মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও নরওয়ের জাহাজসহ চারটি বিমানবাহী জাহাজ অংশ নেয়। প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমান জাপানি ক্যারিয়ারে অবতরণ করে, যা দুই দেশের নৌবাহিনীর কার্যক্ষমতা, নমনীয়তা ও সমন্বয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হয়। এ ধরনের সক্ষমতা জরুরি অবস্থায় একাধিক ক্যারিয়ারের মধ্যে বিমান পুনরায় জ্বালানি বা অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে ফ্লাইট অপারেশন চালিয়ে যেতে সহায়তা করবে। মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫বিগুলোও ‘কাগা’তে অবতরণ করে।
প্রযুক্তিগত ত্রুটি ও জরুরি অবতরণ
জাপানে পৌঁছানোর আগেই জাহাজটির একটি এফ-৩৫বি ত্রুটির কারণে রবিবার দক্ষিণ-পশ্চিম জাপানের কাগোশিমা বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। এর আগে, জুনে ভারতের কেরালা রাজ্যের তিরুবনন্তপুরম বিমানবন্দরে আরেকটি এফ-৩৫বি একই ধরনের ঘটনায় অবতরণ করেছিল।

সফরের সময়সূচি
ইয়োকোসুকার পর ‘প্রিন্স অব ওয়েলস’ ২৮ আগস্ট থেকে ছয় দিনের জন্য টোকিও যাবে। নরওয়ের যুদ্ধজাহাজ ১৯ থেকে ২২ আগস্ট টোকিওতে অবস্থান করবে। তিনটি জাহাজই ২ সেপ্টেম্বর জাপান ত্যাগ করবে। জাপান সরকার জানিয়েছে, এ সফর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতায় যুক্তরাজ্য ও নরওয়ের প্রতিশ্রুতির প্রতীক, যা ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক।
অপারেশন ‘হাইমাস্ট’-এর শেষ ধাপ
এই সফর অপারেশন ‘হাইমাস্ট’-এর শেষ ধাপ, যা ইউরোপ ফেরার আগে সম্পন্ন হবে। যাত্রাপথে জাহাজগুলো যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ থেকে ভূমধ্যসাগর, সুয়েজ খাল হয়ে লোহিত সাগর, ভারত মহাসাগর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে মহড়া ও বন্দর সফর সম্পন্ন করেছে।

যৌথ সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর কৌশল
গত মাসে জাহাজগুলো অস্ট্রেলিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনিতে অনুষ্ঠিত বহুজাতিক ‘ট্যালিসম্যান স্যাবার’ মহড়ায় অংশ নেয়। আট মাসব্যাপী এই মিশন শুধু উপস্থিতি প্রদর্শন বা বন্দর সফর নয়—বরং লজিস্টিক সক্ষমতা ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার দক্ষতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যেও পরিচালিত।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তায় ইউরোপীয় উপস্থিতি
এটি গত ১২ মাসে জাপানের সঙ্গে মহড়ায় অংশ নেওয়া তৃতীয় ইউরোপীয় বিমানবাহী জাহাজ—গত আগস্টে ইতালির ‘কাভুর’ এবং এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফ্রান্সের ‘শার্ল দ্য গল’ এর আগে এসেছে। ইউরোপের বড় দেশগুলো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে, বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান ইস্যুতে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কায়। ইউরোপীয় ও মার্কিন মিত্ররা বলছে, ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা উত্তর আটলান্টিকের নিরাপত্তা থেকে আলাদা নয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















