০৪:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
ঋণ কমাতে কেরিং-এর বড় পদক্ষেপ ড্রোন প্রতিরোধে বৈশ্বিক দৌড় পিয়ানোর অলিম্পিকের চূড়ান্ত পর্বে সুরের লড়াই , কানাডার কেভিন চেন ফাইনালে জেমস ফক্সের ‘ক্রাফ্টল্যান্ড’—ব্রিটেনের হারিয়ে যাওয়া হস্তশিল্পের জীবন্ত ইতিহাস বিলুপ্তির তালিকায় নতুন নাম—একটি পাখি, একটি শুঁয়োপোকা ও একটি শ্রু প্রজাতি হারিয়ে গেল পৃথিবী থেকে মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৬) কানাডায় অনিরাপদ বোধ করছেন ভারতীয়রা, উদ্বেগ জানালেন নয়াদিল্লির হাইকমিশনার নির্বাচন বানচালে হঠাৎ আক্রমণও হতে পারে জেএমবির তৎপরতার সময় বোয়ালমারীতে নির্মম হত্যাকাণ্ড—পলাতক চার আসামির অনুপস্থিতিতে আদালতের দণ্ডাদেশ সিলেটে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের ১১ দফা দাবি—ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়ক অবরোধ

সুদানের ইসলামপন্থীদের সেনা সমর্থনে ক্ষমতায় ফেরার পরিকল্পনা

সেনা সমর্থনে রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি

সুদানের ২০১৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ইসলামপন্থী আন্দোলন বর্তমান গৃহযুদ্ধে সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সেনা শাসনকে মেনে নিয়ে রাজনৈতিক পুনরুত্থানের পরিকল্পনা করছে। প্রাক্তন শাসক দল ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)-এর চেয়ারম্যান আহমেদ হারুন, যিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ওয়ারেন্টভুক্ত চারজন সুদানি নেতার একজন, জানিয়েছেন যে যুদ্ধ শেষে সেনা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁর দল ও সংশ্লিষ্ট ইসলামপন্থী আন্দোলন আবার ক্ষমতায় ফিরতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ ও মানবিক সংকট

সুদানের সেনা ও আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে জাতিগত হত্যাকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ ও বিপুল সংখ্যক মানুষের বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট হিসেবে উল্লেখ করেছে। সেনারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, যা ইসলামপন্থীরা দাবি করছে তাঁদের সহযোগিতার ফল।\

সেনা-ইসলামপন্থী সম্পর্কের দ্বৈত অবস্থান

যদিও সেনা নেতৃত্ব ও প্রাক্তন শাসকগোষ্ঠীর সম্পর্ক অস্বীকার করা হয়, সেনার সাফল্যের সঙ্গে ইসলামপন্থীরা জাতীয় পর্যায়ে ফেরার সম্ভাবনা দেখছে। এনসিপি ১৯৯০-এর দশকে ওমর আল-বশিরের আমলে সুদানে ইসলামপন্থী প্রভাব বিস্তার করে, তবে পরে তারা কঠোর মতাদর্শের বদলে ক্ষমতা ও সম্পদ অর্জনে মনোযোগ দেয়।

আঞ্চলিক কূটনীতি ও রাজনৈতিক বিভাজন

ইসলামপন্থীদের উত্থান ২০১৮ সালের গণআন্দোলনের অর্জনকে উল্টে দিতে পারে এবং আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জটিল করতে পারে, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে। ইতিমধ্যে সেনা নিয়োগ করা নতুন প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় ইসলামপন্থী ও তাঁদের মিত্ররা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সেনা মুখপাত্র জানিয়েছেন, সেনা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট বা সমন্বয় করে না।

যুদ্ধ-পরবর্তী শাসন কাঠামোর পরিকল্পনা

হারুন বলেছেন, সেনা সর্বময় নিয়ন্ত্রণে থাকবে যতক্ষণ না সব হুমকি দূর হয়, আর নির্বাচনের মাধ্যমে বেসামরিক প্রশাসন গঠিত হবে। তিনি দাবি করেছেন, পশ্চিমা গণতন্ত্রের মডেল সুদানে কার্যকর নয়; বরং দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনুযায়ী সেনার রাজনৈতিক ভূমিকাকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি মডেল দরকার।

ইসলামপন্থীদের যুদ্ধ-অবদান

ইসলামপন্থী নেটওয়ার্কগুলো যুদ্ধ শুরুর আগেই সেনার সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলে। একটি দলিল অনুযায়ী, তারা ২,০০০–৩,০০০ যোদ্ধা সরাসরি সেনাকে দিয়েছে এবং ৭০,০০০-এর বেশি সাধারণ নাগরিককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে যারা যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নিয়েছে। সেনা সূত্র অনুযায়ী, প্রায় ৫,০০০ এনসিপি-সংযুক্ত যোদ্ধা বিশেষ বাহিনীতে কাজ করছে, যাদের অনেকেই রাজধানী খার্তুমে বড় সাফল্য অর্জন করেছে।

বিশেষ বাহিনী ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ

ইসলামপন্থী প্রশিক্ষিত যোদ্ধারা সাধারণ গোয়েন্দা সংস্থার পুনর্গঠিত ইউনিটেও কাজ করছে। আল বারা ইবনে মালিক ব্রিগেডের মতো ইসলামপন্থী ইউনিটগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে, যদিও মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাদের বিরুদ্ধে খার্তুমে হত্যার অভিযোগ তুলেছে, যা তারা অস্বীকার করেছে। সেনা জানিয়েছে, যুদ্ধ শেষে এসব বাহিনী সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হবে, যাতে আরএসএফ-এর মতো আলাদা শক্তি গড়ে না ওঠে।

আঞ্চলিক প্রভাব ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন

সেনা ও ইসলামপন্থীরা ইরান, কাতার ও তুরস্কের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ধরনের সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েন বাড়াতে পারে এবং আমিরাতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে। চলতি বছর সেনা আমিরাতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, তাদের আরএসএফ-এর সবচেয়ে বড় সমর্থক বলে অভিযোগ তুলে, যা আমিরাত অস্বীকার করেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঋণ কমাতে কেরিং-এর বড় পদক্ষেপ

সুদানের ইসলামপন্থীদের সেনা সমর্থনে ক্ষমতায় ফেরার পরিকল্পনা

০৯:০০:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

সেনা সমর্থনে রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি

সুদানের ২০১৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ইসলামপন্থী আন্দোলন বর্তমান গৃহযুদ্ধে সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সেনা শাসনকে মেনে নিয়ে রাজনৈতিক পুনরুত্থানের পরিকল্পনা করছে। প্রাক্তন শাসক দল ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)-এর চেয়ারম্যান আহমেদ হারুন, যিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ওয়ারেন্টভুক্ত চারজন সুদানি নেতার একজন, জানিয়েছেন যে যুদ্ধ শেষে সেনা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁর দল ও সংশ্লিষ্ট ইসলামপন্থী আন্দোলন আবার ক্ষমতায় ফিরতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ ও মানবিক সংকট

সুদানের সেনা ও আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে জাতিগত হত্যাকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ ও বিপুল সংখ্যক মানুষের বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট হিসেবে উল্লেখ করেছে। সেনারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, যা ইসলামপন্থীরা দাবি করছে তাঁদের সহযোগিতার ফল।\

সেনা-ইসলামপন্থী সম্পর্কের দ্বৈত অবস্থান

যদিও সেনা নেতৃত্ব ও প্রাক্তন শাসকগোষ্ঠীর সম্পর্ক অস্বীকার করা হয়, সেনার সাফল্যের সঙ্গে ইসলামপন্থীরা জাতীয় পর্যায়ে ফেরার সম্ভাবনা দেখছে। এনসিপি ১৯৯০-এর দশকে ওমর আল-বশিরের আমলে সুদানে ইসলামপন্থী প্রভাব বিস্তার করে, তবে পরে তারা কঠোর মতাদর্শের বদলে ক্ষমতা ও সম্পদ অর্জনে মনোযোগ দেয়।

আঞ্চলিক কূটনীতি ও রাজনৈতিক বিভাজন

ইসলামপন্থীদের উত্থান ২০১৮ সালের গণআন্দোলনের অর্জনকে উল্টে দিতে পারে এবং আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জটিল করতে পারে, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে। ইতিমধ্যে সেনা নিয়োগ করা নতুন প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় ইসলামপন্থী ও তাঁদের মিত্ররা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সেনা মুখপাত্র জানিয়েছেন, সেনা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট বা সমন্বয় করে না।

যুদ্ধ-পরবর্তী শাসন কাঠামোর পরিকল্পনা

হারুন বলেছেন, সেনা সর্বময় নিয়ন্ত্রণে থাকবে যতক্ষণ না সব হুমকি দূর হয়, আর নির্বাচনের মাধ্যমে বেসামরিক প্রশাসন গঠিত হবে। তিনি দাবি করেছেন, পশ্চিমা গণতন্ত্রের মডেল সুদানে কার্যকর নয়; বরং দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনুযায়ী সেনার রাজনৈতিক ভূমিকাকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি মডেল দরকার।

ইসলামপন্থীদের যুদ্ধ-অবদান

ইসলামপন্থী নেটওয়ার্কগুলো যুদ্ধ শুরুর আগেই সেনার সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলে। একটি দলিল অনুযায়ী, তারা ২,০০০–৩,০০০ যোদ্ধা সরাসরি সেনাকে দিয়েছে এবং ৭০,০০০-এর বেশি সাধারণ নাগরিককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে যারা যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নিয়েছে। সেনা সূত্র অনুযায়ী, প্রায় ৫,০০০ এনসিপি-সংযুক্ত যোদ্ধা বিশেষ বাহিনীতে কাজ করছে, যাদের অনেকেই রাজধানী খার্তুমে বড় সাফল্য অর্জন করেছে।

বিশেষ বাহিনী ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ

ইসলামপন্থী প্রশিক্ষিত যোদ্ধারা সাধারণ গোয়েন্দা সংস্থার পুনর্গঠিত ইউনিটেও কাজ করছে। আল বারা ইবনে মালিক ব্রিগেডের মতো ইসলামপন্থী ইউনিটগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে, যদিও মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাদের বিরুদ্ধে খার্তুমে হত্যার অভিযোগ তুলেছে, যা তারা অস্বীকার করেছে। সেনা জানিয়েছে, যুদ্ধ শেষে এসব বাহিনী সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হবে, যাতে আরএসএফ-এর মতো আলাদা শক্তি গড়ে না ওঠে।

আঞ্চলিক প্রভাব ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন

সেনা ও ইসলামপন্থীরা ইরান, কাতার ও তুরস্কের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ধরনের সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েন বাড়াতে পারে এবং আমিরাতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে। চলতি বছর সেনা আমিরাতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, তাদের আরএসএফ-এর সবচেয়ে বড় সমর্থক বলে অভিযোগ তুলে, যা আমিরাত অস্বীকার করেছে।