০১:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
এরি ক্যানাল: একটি মানবসৃষ্ট জলপথ যা আমেরিকাকে রূপান্তরিত করেছে বিএনপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ: নির্বাচন ঘিরে কোন অশনি সংকেত? দুর্যোগ পরবর্তী সহায়তা: একত্রিত হয়ে নতুন জীবন গড়ার সংগ্রাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জকসু নির্বাচন নিয়ে তীব্র বিতর্ক মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৩) থাম্মা বক্স অফিস সংগ্রহ: আয়ুষ্মান খুরানা ও রাশমিকা মন্দান্নার সিনেমা ₹১১৫.৯ কোটি আয় করেছে, ড্রাগনের লাইফটাইম সংগ্রহকেও ছাড়িয়ে গেছে মাইক্রোসফটের ১৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে নতুন দিগন্ত: সংযুক্ত আরব আমিরাতে এআই ও চিপ বিপ্লবের প্রস্তুতি প্যালেস্টাইন ৩৬’ টোকিও চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা বিলুপ্ত পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংকের সেবা চলমান থাকবে: কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর শেরপুরের নকলা উপজেলা কৃষি অফিসে ছাত্রদলের হামলা

বাংলাদেশ ও বিশ্বে কাঠবিড়ালি: প্রজাতি, স্বভাব, ইতিহাস ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

বিশ্বে কাঠবিড়ালির প্রজাতি ও বৈচিত্র্য
কাঠবিড়ালি রডেন্টিয়া বর্গের সিউরিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একদল চঞ্চল ও অভিযোজিত স্তন্যপায়ী প্রাণী, যাদের বিস্তৃতি রয়েছে প্রায় সব মহাদেশে—অ্যান্টার্কটিকা ও অস্ট্রেলিয়া বাদে। বর্তমানে বিশ্বে ২৮৫টিরও বেশি প্রজাতি আছে।  এদেরকে গাছবাসী , মাটিবাসী ও উড়ন্ত কাঠবিড়ালি—এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়। গাছবাসীরা বড় গাছ, বন ও শহুরে বাগানে কুশলতায় ওঠানামা করে; মাটিবাসীরা তৃণভূমি ও মাটির গর্তে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে; আর উড়ন্ত কাঠবিড়ালি পায়ের মাঝের চামড়ার পর্দা ব্যবহার করে বাতাসে ভেসে চলতে পারে। এ বৈচিত্র্যই তাদের অভিযোজনক্ষমতা ও পরিবেশগত গুরুত্বকে তুলে ধরে।

বাংলাদেশে কাঠবিড়ালির প্রজাতি
বাংলাদেশে প্রজাতির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও আঞ্চলিক বৈচিত্র্য স্পষ্ট। বাংলাদেশে তিন থেকে চারটি প্রজাতির কাঠবিড়ালী নিয়মিত দেখা যায় এবং কিছু বিরল প্রজাতি সীমিত এলাকায় টিকে আছে। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় হোয়ারি-বেলিড কাঠবিড়ালি (Callosciurus pygerythrus), যা বন, ফলের বাগান ও নগর উদ্যানেও টিকে আছে। ডোরা পাম স্কুইরেল নামের ডোরা-ধারী কাঠবিড়ালিও দেখা যায়, যা অঞ্চলভেদে তিন ডোরা বা পাঁচ ডোরা নামে পরিচিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সংলগ্ন বনে উড়ন্ত কাঠবিড়ালির একাধিক প্রজাতি বাস করে, যারা রাতচর এবং গাছের ফাঁকে বাসা বানায়।

কাঠবিড়ালির স্বভাব ও জীবনধারা
কাঠবিড়ালি সাধারণত দিনের বেলায় সক্রিয় থাকে। তারা দ্রুত দৌড়াতে, লাফাতে এবং গাছে উঠতে দক্ষ। খাদ্যতালিকায় থাকে ফল, বাদাম, বীজ, ফুলের কুঁড়ি, কচি পাতা, গাছের ছাল এবং মৌসুমভেদে পোকামাকড় বা পাখির ডিম। বছরে দুই থেকে তিনবার প্রজনন হয়, প্রতিবার দুই থেকে চারটি বাচ্চা জন্মায়। তারা পাতার গাদা, গাছের ফোকর বা নিরাপদ স্থানে বাসা বানায় এবং বিপদ বুঝতে পারলেই তীক্ষ্ণ ডাক দিয়ে সতীর্থদের সতর্ক করে।

২০০ বছর আগে বাংলাদেশের কাঠবিড়ালি জনসংখ্যা
ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে গ্রামবাংলা ছিল ফলজ ও বনজ গাছে ভরপুর। নগরায়ণ ছিল সীমিত, শিল্প-কারখানা কম, আর শিকারও তুলনামূলকভাবে কম ছিল। ফলে কাঠবিড়ালির জন্য খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাব ছিল না। সে সময় প্রায় প্রতিটি গ্রাম ও ছোট শহরে কাঠবিড়ালির উপস্থিতি ছিল দৈনন্দিন দৃশ্য। যদিও সঠিক সংখ্যা নেই, তবু বর্ণনা থেকে বোঝা যায় জনসংখ্যা ছিল অনেক এবং বিস্তৃত।

বর্তমান সংখ্যা ও অবস্থা
এখন বড় শহরের কিছু পার্ক, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও পুরনো আবাসিক এলাকায় কাঠবিড়ালি দেখা গেলেও বহু জায়গায় তারা হারিয়ে গেছে। উড়ন্ত কাঠবিড়ালির মতো বননির্ভর প্রজাতি সংকুচিত আবাসে টিকে থাকার লড়াই করছে। সামগ্রিকভাবে, গত কয়েক দশকে জনসংখ্যা ও বিস্তৃতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

সংখ্যা হ্রাসের প্রধান কারণ
প্রধান কারণ আবাসহানি—বন ও গাছ উজাড়, পুরনো গাছ অপসারণ, নগরায়ণ এবং খাদ্যঘাটতি। শহুরে শব্দ ও আলো দূষণ, বন্যপ্রাণীর করিডোর ভেঙে পড়া, পোষা প্রাণীর আক্রমণ এবং মানুষের অসচেতন আচরণও ভূমিকা রাখে। কাঠবিড়ালিকে সাধারণ প্রাণী ভাবায় সংরক্ষণ পরিকল্পনায় প্রায়ই উপেক্ষিত থাকে।

বাস্তুতন্ত্রে কাঠবিড়ালির ভূমিকা
কাঠবিড়ালি বীজ বিস্তারের মাধ্যমে বন নবায়নে ভূমিকা রাখে। তারা অনেক বীজ মজুত করলেও কিছু হারিয়ে যায়, যা থেকে নতুন গাছ জন্মায়। একইসঙ্গে তারা বহু শিকারির খাদ্য হিসেবে খাদ্যজালে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রক্ষা করে।

সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশে কাঠবিড়ালিকে টিকিয়ে রাখতে ফলদ ও বনজ গাছ লাগিয়ে বন্যপ্রাণী করিডোর তৈরি, পুরনো গাছ সংরক্ষণ, পার্ক ও স্কুলে স্থানীয় গাছ রোপণ, শিশুদের বন্যপ্রাণী সম্পর্কে শিক্ষা, পোষা প্রাণীর নিয়ন্ত্রণ এবং শিকার নিরুৎসাহিত করা জরুরি।

জনপ্রিয় সংবাদ

এরি ক্যানাল: একটি মানবসৃষ্ট জলপথ যা আমেরিকাকে রূপান্তরিত করেছে

বাংলাদেশ ও বিশ্বে কাঠবিড়ালি: প্রজাতি, স্বভাব, ইতিহাস ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

১১:০০:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

বিশ্বে কাঠবিড়ালির প্রজাতি ও বৈচিত্র্য
কাঠবিড়ালি রডেন্টিয়া বর্গের সিউরিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একদল চঞ্চল ও অভিযোজিত স্তন্যপায়ী প্রাণী, যাদের বিস্তৃতি রয়েছে প্রায় সব মহাদেশে—অ্যান্টার্কটিকা ও অস্ট্রেলিয়া বাদে। বর্তমানে বিশ্বে ২৮৫টিরও বেশি প্রজাতি আছে।  এদেরকে গাছবাসী , মাটিবাসী ও উড়ন্ত কাঠবিড়ালি—এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়। গাছবাসীরা বড় গাছ, বন ও শহুরে বাগানে কুশলতায় ওঠানামা করে; মাটিবাসীরা তৃণভূমি ও মাটির গর্তে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে; আর উড়ন্ত কাঠবিড়ালি পায়ের মাঝের চামড়ার পর্দা ব্যবহার করে বাতাসে ভেসে চলতে পারে। এ বৈচিত্র্যই তাদের অভিযোজনক্ষমতা ও পরিবেশগত গুরুত্বকে তুলে ধরে।

বাংলাদেশে কাঠবিড়ালির প্রজাতি
বাংলাদেশে প্রজাতির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও আঞ্চলিক বৈচিত্র্য স্পষ্ট। বাংলাদেশে তিন থেকে চারটি প্রজাতির কাঠবিড়ালী নিয়মিত দেখা যায় এবং কিছু বিরল প্রজাতি সীমিত এলাকায় টিকে আছে। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় হোয়ারি-বেলিড কাঠবিড়ালি (Callosciurus pygerythrus), যা বন, ফলের বাগান ও নগর উদ্যানেও টিকে আছে। ডোরা পাম স্কুইরেল নামের ডোরা-ধারী কাঠবিড়ালিও দেখা যায়, যা অঞ্চলভেদে তিন ডোরা বা পাঁচ ডোরা নামে পরিচিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সংলগ্ন বনে উড়ন্ত কাঠবিড়ালির একাধিক প্রজাতি বাস করে, যারা রাতচর এবং গাছের ফাঁকে বাসা বানায়।

কাঠবিড়ালির স্বভাব ও জীবনধারা
কাঠবিড়ালি সাধারণত দিনের বেলায় সক্রিয় থাকে। তারা দ্রুত দৌড়াতে, লাফাতে এবং গাছে উঠতে দক্ষ। খাদ্যতালিকায় থাকে ফল, বাদাম, বীজ, ফুলের কুঁড়ি, কচি পাতা, গাছের ছাল এবং মৌসুমভেদে পোকামাকড় বা পাখির ডিম। বছরে দুই থেকে তিনবার প্রজনন হয়, প্রতিবার দুই থেকে চারটি বাচ্চা জন্মায়। তারা পাতার গাদা, গাছের ফোকর বা নিরাপদ স্থানে বাসা বানায় এবং বিপদ বুঝতে পারলেই তীক্ষ্ণ ডাক দিয়ে সতীর্থদের সতর্ক করে।

২০০ বছর আগে বাংলাদেশের কাঠবিড়ালি জনসংখ্যা
ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে গ্রামবাংলা ছিল ফলজ ও বনজ গাছে ভরপুর। নগরায়ণ ছিল সীমিত, শিল্প-কারখানা কম, আর শিকারও তুলনামূলকভাবে কম ছিল। ফলে কাঠবিড়ালির জন্য খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাব ছিল না। সে সময় প্রায় প্রতিটি গ্রাম ও ছোট শহরে কাঠবিড়ালির উপস্থিতি ছিল দৈনন্দিন দৃশ্য। যদিও সঠিক সংখ্যা নেই, তবু বর্ণনা থেকে বোঝা যায় জনসংখ্যা ছিল অনেক এবং বিস্তৃত।

বর্তমান সংখ্যা ও অবস্থা
এখন বড় শহরের কিছু পার্ক, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও পুরনো আবাসিক এলাকায় কাঠবিড়ালি দেখা গেলেও বহু জায়গায় তারা হারিয়ে গেছে। উড়ন্ত কাঠবিড়ালির মতো বননির্ভর প্রজাতি সংকুচিত আবাসে টিকে থাকার লড়াই করছে। সামগ্রিকভাবে, গত কয়েক দশকে জনসংখ্যা ও বিস্তৃতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

সংখ্যা হ্রাসের প্রধান কারণ
প্রধান কারণ আবাসহানি—বন ও গাছ উজাড়, পুরনো গাছ অপসারণ, নগরায়ণ এবং খাদ্যঘাটতি। শহুরে শব্দ ও আলো দূষণ, বন্যপ্রাণীর করিডোর ভেঙে পড়া, পোষা প্রাণীর আক্রমণ এবং মানুষের অসচেতন আচরণও ভূমিকা রাখে। কাঠবিড়ালিকে সাধারণ প্রাণী ভাবায় সংরক্ষণ পরিকল্পনায় প্রায়ই উপেক্ষিত থাকে।

বাস্তুতন্ত্রে কাঠবিড়ালির ভূমিকা
কাঠবিড়ালি বীজ বিস্তারের মাধ্যমে বন নবায়নে ভূমিকা রাখে। তারা অনেক বীজ মজুত করলেও কিছু হারিয়ে যায়, যা থেকে নতুন গাছ জন্মায়। একইসঙ্গে তারা বহু শিকারির খাদ্য হিসেবে খাদ্যজালে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রক্ষা করে।

সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশে কাঠবিড়ালিকে টিকিয়ে রাখতে ফলদ ও বনজ গাছ লাগিয়ে বন্যপ্রাণী করিডোর তৈরি, পুরনো গাছ সংরক্ষণ, পার্ক ও স্কুলে স্থানীয় গাছ রোপণ, শিশুদের বন্যপ্রাণী সম্পর্কে শিক্ষা, পোষা প্রাণীর নিয়ন্ত্রণ এবং শিকার নিরুৎসাহিত করা জরুরি।