এশিয়ায় যুদ্ধ নেই, কিন্তু হুমকি স্পষ্ট
ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যের মতো বড় আন্তঃরাষ্ট্রীয় যুদ্ধ এখন এশিয়ায় নেই। তবে চীনের দ্রুত সামরিক শক্তি বৃদ্ধিই এখানে বড় হুমকি। প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে আমেরিকান বিমানবাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পুরোনো ঘাঁটিগুলো আধুনিকায়ন করছে, যাতে সেগুলো এখনকার যুদ্ধেও ব্যবহার করা যায়। এই নীতি শুরু হয়েছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ে, আর বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এশিয়ার মিত্রদের আরও বেশি দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
মিত্রদের জন্য বার্তা: ব্যয় বাড়াতে হবে
ট্রাম্প প্রশাসন চায় এশীয় মিত্ররা নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় করুক এবং তাইওয়ান রক্ষায় বড় ভূমিকা নিক। কিন্তু ইউক্রেন ও ন্যাটো নিয়ে আমেরিকার অবস্থান যেমন প্রশ্ন তুলেছে, তেমনি ভারত নিয়েও সংশয় তৈরি করেছে। এখন প্রশ্ন হলো—আমেরিকার এশীয় মিত্ররা কী করবে?
ইউরোপ যদি আমেরিকার সহায়তা ছাড়াও রাশিয়াকে ঠেকাতে সক্ষম হয়, এশিয়ায় পরিস্থিতি ভিন্ন। এখানে চীনকে ঠেকানো আমেরিকা ছাড়া প্রায় অসম্ভব, যদি না মিত্ররা পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে ঝুঁকে যায়। কারণ, চীনের শক্তি তুলনামূলক অনেক বড়, ভৌগোলিক অবস্থাও কঠিন, এবং ন্যাটোর মতো কোনো শক্তিশালী এশীয় জোট নেই।
অর্থের সংকট বড় চ্যালেঞ্জ
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত “বিগ বিউটিফুল বিল” সম্প্রতি সেনাবাহিনীকে কিছু অর্থ দিয়েছে। তবে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রায় অপরিবর্তিত, যা আসলে মুদ্রাস্ফীতি হিসাব করলে কমতির ইঙ্গিত দেয়। কংগ্রেসকে আরও অর্থ বরাদ্দ করতে হবে, যাতে পেন্টাগন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে পারে এবং যথেষ্ট জাহাজ, বিমানঘাঁটি, সেনা ও অস্ত্র মজুদ রাখতে পারে।
এশিয়ায় আমেরিকার পাঁচ প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার—অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান—গড়ে প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির মাত্র ১.৮ শতাংশ ব্যয় করছে। ট্রাম্পের দাবি, এই হার কমপক্ষে ৩.৫ শতাংশ হওয়া উচিত।
অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান বাড়াতে পারে ব্যয়
অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের সরকারি ঋণ তুলনামূলকভাবে কম। তাই তারা প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ার লেবার সরকার নিজস্ব প্রতিবেদনে চীনের হুমকি গুরুতর বলে স্বীকার করেছে, কিন্তু প্রতিরক্ষা বাজেট এখনও জিডিপির ২ শতাংশেরও নিচে। তাদের উচিত কর কমানোর পরিকল্পনা বা সামাজিক খাতের নতুন ব্যয় পিছিয়ে দেওয়া এবং প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো।
জাপানের কঠিন বাস্তবতা
জাপানে শিগগির কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি সরকার কর কমানোর চাপের মুখে রয়েছে, প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর নয়। দেশটির ঋণ অনেক বেশি, তাই প্রতিরক্ষার জন্য নতুন করে ঋণ নেওয়া কঠিন।
অতিরিক্ত চাপ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ
এশিয়ার প্রতিটি দেশে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কভাবে এগোতে হবে। কারণ জনগণের মধ্যে অজনপ্রিয় নীতি চাপিয়ে দিলে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজন
শুধু ব্যয় বাড়ানোই যথেষ্ট নয়। আমেরিকার এশীয় মিত্রদের নিজেদের প্রতিরক্ষা শিল্পেও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এতে অস্ত্রশিল্প ঘাঁটি যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি গড়ে উঠবে এবং যুক্তরাষ্ট্র যদি কখনও পিছু হটে, তারও একটি বিকল্প তৈরি হবে। অস্ট্রেলিয়ার সম্প্রতি জাপান থেকে ফ্রিগেট কেনার ঘোষণা এই প্রক্রিয়ার শুরু।
যদি মিত্ররা নিজেদের ব্যয় বাড়ায় এবং প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করে, তবে তারা নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারবে, যুক্তরাষ্ট্রকে দেখাতে পারবে যে তারা শুধু ভরসা করছে না, আর চীনের বিরুদ্ধে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান বাড়াতে পারে ব্যয়
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ০৪:১৮:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
- 51
জনপ্রিয় সংবাদ



















