হঠাৎ অভিবাসীর সংখ্যা কমে যাওয়া
নতুন সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির প্রভাব ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান হতে পারে।
ডানপন্থি থিংক-ট্যাঙ্ক “সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজ”-এর গবেষণা পরিচালক স্টিভেন ক্যামেরোটা জানিয়েছেন, বর্তমান জনসংখ্যা জরিপে ২২ লাখ বিদেশে জন্ম নেওয়া মানুষের হ্রাস দেখা গেছে, যা গত তিন দশকে এক বছরে সবচেয়ে বড় পতন। তিনি বলেন, “অথবা আমেরিকায় মৌলিক কিছু বদলে গেছে, অথবা জরিপে সাড়া দেওয়ার হার নাটকীয়ভাবে কমে গেছে।”
অন্যদিকে, জনসংখ্যাতত্ত্ববিদরা মনে করেন দুই কারণই একসঙ্গে কাজ করতে পারে। তবে তারা সতর্ক করে বলেছেন, তথ্যের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান “পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকস”-এর সিনিয়র ফেলো জেড কোলকো বলেছেন, “এত বিশাল পতনের নিশ্চয়তা দেওয়ার মতো অন্য কোনো বর্তমান তথ্য নেই।”

জরিপ পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা
প্রতি মাসে সেন্সাস ব্যুরো প্রায় ৬০ হাজার পরিবারের ওপর জরিপ চালায়। তুলনায় আরও নির্ভরযোগ্য “আমেরিকান কমিউনিটি সার্ভে” বছরে ২০ লাখ পরিবারের সাক্ষাৎকার নেয়। ছোট আকারের এই জরিপ মাঝে মাঝে হ্রাস-বৃদ্ধিকে অতিরিক্ত বা কম করে দেখাতে পারে।
“মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট”-এর জুলিয়া গেলাট জানান, মাসিক জরিপ গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো—নমুনার সংখ্যা কম। এর ফলে প্রকৃত চিত্র উদ্ঘাটনে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।
অভিবাসীদের আতঙ্কের ভূমিকা
জনসংখ্যা জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশীয় ও বিদেশি জন্মগ্রহণকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ওঠানামা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরিপ সরাসরি অভিবাসনের সংখ্যা মাপার জন্য তৈরি হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিযান ও “শূন্য সহনশীলতা” বার্তাগুলো অভিবাসীদের ভীত করছে। গেলাট বলেন, “এই পরিবেশে—গণ-নির্বাসন প্রচারণা ও বারবার ঘোষণার কারণে—অনেকে হয়তো নিজেদের অভিবাসী পরিচয় দিতে ভয় পাচ্ছেন।”
মহামারির পর অভিবাসন বৃদ্ধি
কোভিড-১৯ মহামারির পর যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের ঢেউ দেশের দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
সেন্সাস ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছেন। এতে যাঁরা চলে গেছেন, তাঁদের বাদ দিয়েই নিট হিসাব করা হয়েছে।

তবে অব্যাহত অভিবাসন অনেক আমেরিকানকে ক্ষুব্ধ করেছে, বিশেষত বাইডেন প্রশাসনের সময় মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীর ভিড় দেখে অনেকে ব্যর্থ সীমান্ত নিরাপত্তার অভিযোগ তুলেছেন।
ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপ
২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অভিবাসন প্রবাহ উল্টে দেওয়ার। তিনি এক বছরে ১০ লাখ অভিবাসীকে বহিষ্কারের অঙ্গীকার করেন। এ লক্ষ্যে তাঁর প্রশাসন ১০ হাজার নতুন নির্বাসন এজেন্ট নিয়োগ, সামরিক বিমান ব্যবহার করে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো এবং আটক হলে জামিন দেওয়ার অধিকার বাতিলের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেয়।
তবে বাস্তবে সংখ্যা অনেক কম। অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই)-এর তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৪৬ হাজার বহিষ্কার হয়েছে। এর মধ্যে বাইডেন প্রশাসনের সময়ের তথ্যও রয়েছে। অনেক বৈধ বা অবৈধ অভিবাসী স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে গেছেন।
ক্যামেরোটা বলেন, “এমন ক্রমাগত পতন আমরা সাধারণত দেখি না। যদি জরিপের তথ্য সঠিক হয়, তবে এটি এক বিরাট দেশত্যাগের চিত্র।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















