০৮:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
নগরজীবনে মানিয়ে নিচ্ছে বন্যপ্রাণী গ্লোবাল কনটেন্টে ঝুঁকছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম তীব্র তাপে বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ গ্রিডে চাপ বিআরটিএতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা ও পাসপোর্ট দপ্তরও শীর্ষে মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে বোমা নিক্ষেপ, নিহত এক পথচারী অসম ভিআইপি সুবিধা নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন: নির্বাচন কমিশনকে জানাল জামায়াত বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটিতে টানা তিন দিন বন্ধ ব্যাংক ও শেয়ারবাজার বৃহস্পতিবার দেশে পালিত হবে বড়দিন, উৎসব ঘিরে শুভেচ্ছা ও বাড়তি নিরাপত্তা উপেক্ষিত রুমিন ফারহানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থানে বিশ্বব্যাংকের নতুন অর্থায়ন, বাংলাদেশে অনুমোদন ১৫০ কোটি ডলার

ওয়াটারগেট থেকে সবুজ নীতিবিরোধ বিতর্ক

রিপাবলিকানদের পুরোনো পরিবেশ-অভিযান

প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে আমেরিকার রিপাবলিকান নেতারাই পরিবেশ রক্ষার প্রধান উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন শিল্পকারখানার ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ, বিপন্ন প্রাণী রক্ষা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা (ইপিএ) গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তবে তাঁর অবস্থান ছিল দ্বিধাগ্রস্ত। ১৯৭১ সালে ফোর্ড মোটরের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনায় তিনি স্বীকার করেছিলেন যে পরিবেশ দূষণ বাস্তব সমস্যা হলেও তিনি ব্যবসাবান্ধব। অনেক পরিবেশবাদীকেও তিনি সিস্টেমের শত্রু হিসেবে দেখতেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ

ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন নিক্সনের গড়া কাঠামোকেই দুর্বল করতে চাইছেন। প্রশাসনের যুক্তি, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। ইপিএ ইতিমধ্যে কয়লাভিত্তিক ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্গমন মান শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সীমিত করছে। এমনকি নতুন গবেষণার আপডেটও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেসের একটি কমিটি আগামী বছরে ইপিএর বাজেট ২৩ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনাও করেছে।

রাজনৈতিক মেরুকরণ ও সংস্কৃতি যুদ্ধ

এতে বিস্মিত হয়নি পরিবেশবাদীরা। জলবায়ু নীতি এখন সংস্কৃতি যুদ্ধের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইপিএর বর্তমান প্রধান লি জেলদিন ঘোষণা দিয়েছেন, “আজ সবুজ নতুন প্রতারণার শেষ দিন।” তাঁর সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হলো ২০০৯ সালের “এনডেঞ্জারমেন্ট ফাইন্ডিং” বাতিলের উদ্যোগ। এই বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তটি ইপিএকে গ্রিনহাউস গ্যাসকে ‘দূষক’ হিসেবে চিহ্নিত করে নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট কয়েকবার এটি বহাল রেখেছে, তবে এবার ট্রাম্প প্রশাসন আশা করছে ভিন্ন ফল আসবে।

আইনি লড়াই ও অনিশ্চয়তা

আইন বিশেষজ্ঞ মাইকেল জেরার্ড একে “ক্লাস্টার-বোমা কৌশল” বলেছেন। নতুনভাবে নিয়োগ পাওয়া কিছু বিজ্ঞানী দাবি করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞান এখনও চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়নি। তবে সমর্থকেরা বলছেন, আদালতে এই যুক্তি টিকবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন আগের চেয়ে স্পষ্ট। এনডেঞ্জারমেন্ট ফাইন্ডিং বাতিলের প্রক্রিয়া এবং এর বিরুদ্ধে মামলা—সবকিছু মিলিয়ে বছর ধরে চলতে পারে।

পরিবেশ আইনের সীমাবদ্ধতা

এ ঘটনার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, ফেডারেল পর্যায়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ কাঠামো কতটা দুর্বল। ইপিএ সমর্থকরাও স্বীকার করেন যে ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট সাধারণ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হলেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এটি সীমিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকার গ্রিনহাউস গ্যাস কমার প্রধান কারণ হলো কয়লা থেকে গ্যাসে রূপান্তর, ফেডারেল নীতি নয়।

নতুন কৌশলের প্রয়োজন

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ নোয়া কাউফম্যান বলছেন, ডেমোক্র্যাটরা যখন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে আর রিপাবলিকানরা তা বাতিল করে, তখন দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর কোনো নীতি গড়ে ওঠে না। তাই হয়তো নতুন পথ ভাবার সময় এসেছে। তাঁর মতে, পরিবেশ আন্দোলনকারীরা পুরোনো কাঠামো আঁকড়ে ধরছেন শুধু ট্রাম্প তা আক্রমণ করছেন বলে, কার্যকারিতা বিচার করে নয়।

রাজ্য পর্যায়ের ভূমিকা

ফেডারেল স্তরে অচলাবস্থা থাকায় অনেক পদক্ষেপ এখন রাজ্যগুলো নিচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়া বড় কোম্পানির কার্বন নিঃসরণ প্রকাশ বাধ্যতামূলক করেছে। ওহাইও নতুন জ্বালানি প্রকল্পে গতি আনতে আইন করেছে, যা পরিবেশবাদী ও ব্যবসাবান্ধব উভয় পক্ষের সমর্থন পেয়েছে। তবে এতে শিল্পক্ষেত্রকে ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য নীতি মানতে হচ্ছে, যা তাদের জন্য জটিল।

নতুন দ্বিধা

তবু সব রাজ্যে একই দৃশ্য নয়। কিছু রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার কঠোর যানবাহন নির্গমন নীতি থেকে সরে আসছে। এমনকি ক্যালিফোর্নিয়াও স্থানীয় শোধনাগার চালু রাখতে নতুন তেল-খননের অনুমতি দিতে পারে। সাবেক কর্মকর্তা মেরি নিকোলস বলছেন, এখন বড় বড় লক্ষ্য ঘোষণা দেওয়ার সময় নয়, বরং বাস্তবতাকে মেনে চলার সময়।

নিক্সনের আমলের আলাপচারিতার মতোই আবারও স্পষ্ট হচ্ছে—জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে গভীরভাবে বিভক্ত। পরিবেশবাদীরা নতুন কৌশল খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ পুরোনো আইনি পথ হয়তো আর কার্যকর নয়। তবে রাজ্যগুলোতে নেওয়া উদ্যোগই এখন আমেরিকার জলবায়ু নীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নগরজীবনে মানিয়ে নিচ্ছে বন্যপ্রাণী

ওয়াটারগেট থেকে সবুজ নীতিবিরোধ বিতর্ক

১১:০০:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

রিপাবলিকানদের পুরোনো পরিবেশ-অভিযান

প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে আমেরিকার রিপাবলিকান নেতারাই পরিবেশ রক্ষার প্রধান উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন শিল্পকারখানার ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ, বিপন্ন প্রাণী রক্ষা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা (ইপিএ) গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তবে তাঁর অবস্থান ছিল দ্বিধাগ্রস্ত। ১৯৭১ সালে ফোর্ড মোটরের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনায় তিনি স্বীকার করেছিলেন যে পরিবেশ দূষণ বাস্তব সমস্যা হলেও তিনি ব্যবসাবান্ধব। অনেক পরিবেশবাদীকেও তিনি সিস্টেমের শত্রু হিসেবে দেখতেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ

ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন নিক্সনের গড়া কাঠামোকেই দুর্বল করতে চাইছেন। প্রশাসনের যুক্তি, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। ইপিএ ইতিমধ্যে কয়লাভিত্তিক ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্গমন মান শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সীমিত করছে। এমনকি নতুন গবেষণার আপডেটও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেসের একটি কমিটি আগামী বছরে ইপিএর বাজেট ২৩ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনাও করেছে।

রাজনৈতিক মেরুকরণ ও সংস্কৃতি যুদ্ধ

এতে বিস্মিত হয়নি পরিবেশবাদীরা। জলবায়ু নীতি এখন সংস্কৃতি যুদ্ধের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইপিএর বর্তমান প্রধান লি জেলদিন ঘোষণা দিয়েছেন, “আজ সবুজ নতুন প্রতারণার শেষ দিন।” তাঁর সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হলো ২০০৯ সালের “এনডেঞ্জারমেন্ট ফাইন্ডিং” বাতিলের উদ্যোগ। এই বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তটি ইপিএকে গ্রিনহাউস গ্যাসকে ‘দূষক’ হিসেবে চিহ্নিত করে নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট কয়েকবার এটি বহাল রেখেছে, তবে এবার ট্রাম্প প্রশাসন আশা করছে ভিন্ন ফল আসবে।

আইনি লড়াই ও অনিশ্চয়তা

আইন বিশেষজ্ঞ মাইকেল জেরার্ড একে “ক্লাস্টার-বোমা কৌশল” বলেছেন। নতুনভাবে নিয়োগ পাওয়া কিছু বিজ্ঞানী দাবি করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞান এখনও চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়নি। তবে সমর্থকেরা বলছেন, আদালতে এই যুক্তি টিকবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন আগের চেয়ে স্পষ্ট। এনডেঞ্জারমেন্ট ফাইন্ডিং বাতিলের প্রক্রিয়া এবং এর বিরুদ্ধে মামলা—সবকিছু মিলিয়ে বছর ধরে চলতে পারে।

পরিবেশ আইনের সীমাবদ্ধতা

এ ঘটনার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, ফেডারেল পর্যায়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ কাঠামো কতটা দুর্বল। ইপিএ সমর্থকরাও স্বীকার করেন যে ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট সাধারণ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হলেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এটি সীমিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকার গ্রিনহাউস গ্যাস কমার প্রধান কারণ হলো কয়লা থেকে গ্যাসে রূপান্তর, ফেডারেল নীতি নয়।

নতুন কৌশলের প্রয়োজন

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ নোয়া কাউফম্যান বলছেন, ডেমোক্র্যাটরা যখন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে আর রিপাবলিকানরা তা বাতিল করে, তখন দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর কোনো নীতি গড়ে ওঠে না। তাই হয়তো নতুন পথ ভাবার সময় এসেছে। তাঁর মতে, পরিবেশ আন্দোলনকারীরা পুরোনো কাঠামো আঁকড়ে ধরছেন শুধু ট্রাম্প তা আক্রমণ করছেন বলে, কার্যকারিতা বিচার করে নয়।

রাজ্য পর্যায়ের ভূমিকা

ফেডারেল স্তরে অচলাবস্থা থাকায় অনেক পদক্ষেপ এখন রাজ্যগুলো নিচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়া বড় কোম্পানির কার্বন নিঃসরণ প্রকাশ বাধ্যতামূলক করেছে। ওহাইও নতুন জ্বালানি প্রকল্পে গতি আনতে আইন করেছে, যা পরিবেশবাদী ও ব্যবসাবান্ধব উভয় পক্ষের সমর্থন পেয়েছে। তবে এতে শিল্পক্ষেত্রকে ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য নীতি মানতে হচ্ছে, যা তাদের জন্য জটিল।

নতুন দ্বিধা

তবু সব রাজ্যে একই দৃশ্য নয়। কিছু রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার কঠোর যানবাহন নির্গমন নীতি থেকে সরে আসছে। এমনকি ক্যালিফোর্নিয়াও স্থানীয় শোধনাগার চালু রাখতে নতুন তেল-খননের অনুমতি দিতে পারে। সাবেক কর্মকর্তা মেরি নিকোলস বলছেন, এখন বড় বড় লক্ষ্য ঘোষণা দেওয়ার সময় নয়, বরং বাস্তবতাকে মেনে চলার সময়।

নিক্সনের আমলের আলাপচারিতার মতোই আবারও স্পষ্ট হচ্ছে—জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে গভীরভাবে বিভক্ত। পরিবেশবাদীরা নতুন কৌশল খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ পুরোনো আইনি পথ হয়তো আর কার্যকর নয়। তবে রাজ্যগুলোতে নেওয়া উদ্যোগই এখন আমেরিকার জলবায়ু নীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে।