নির্বাচনের প্রেক্ষাপট
রোববার বলিভিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ভোট ঘিরে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় মুদ্রাস্ফীতি, যা চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। একইসঙ্গে আলোচনায় আছেন সাবেক বামপন্থী প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস, যিনি প্রার্থী হতে পারছেন না।
প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা
জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন দুই রক্ষণশীল প্রার্থী—ব্যবসায়ী স্যামুয়েল দোরিয়া মেদিনা এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ “তুতো” কিরোগা। তবে কারও সমর্থনই ৩০ শতাংশের বেশি নয়। প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভোটার এখনও সিদ্ধান্ত নেননি।
এমএএস দলের দুর্বল অবস্থা
প্রায় দুই দশকের মধ্যে এবারই প্রথম ‘মুভমেন্ট ফর সোশ্যালিজম’ (এমএএস) দল পরাজয়ের মুখে পড়তে পারে বলে জরিপে দেখা যাচ্ছে। এমএএস এবং অন্যান্য বামপন্থী প্রার্থীদের সম্মিলিত সমর্থন আগস্টের জরিপে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ শতাংশে।
নির্বাচনের নিয়ম
কোনো প্রার্থী যদি ৪০ শতাংশ ভোট না পান এবং প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে অন্তত ১০ শতাংশ এগিয়ে না থাকেন, তবে ১৯ অক্টোবর রান-অফ ভোট হবে।
ইভো মোরালেসের অবস্থান
২০০৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা মোরালেস এবার প্রার্থী হতে না পারলেও ভোট দিয়েছেন। তবে তিনি অভিযোগ করেছেন যে তাঁর রাজনৈতিক আন্দোলনকে নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়েছে। ৬৯ বছর বয়সী মোরালেস নির্বাচনে বর্জনের ডাক দিয়েছেন, যদিও বিশ্লেষকরা মনে করছেন তাঁর প্রভাব কমছে।
ভোটগ্রহণের দিন
রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলে। রাত ৯টার পর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ হওয়ার কথা। পুরোপুরি সরকারি ফলাফল জানাতে সাত দিন সময় লাগবে। প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ২৬ জন সেনেটর ও ১৩০ জন ডেপুটি নির্বাচিত হবেন। দায়িত্ব গ্রহণের দিন ৮ নভেম্বর।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটের দিন কয়েকটি ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্তো রিওস বলেছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর ছিল এবং ভুয়া তথ্য ছড়ানো নিয়ে সতর্ক করেছেন।
অর্থনৈতিক সংকটই প্রধান ইস্যু
দক্ষিণ আন্দেস বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংকটগ্রুপের বিশ্লেষক গ্লায়েলডিস গনসালেস কালাঞ্চে বলেছেন, এই নির্বাচন বলিভিয়ার জন্য এক “সন্ধিক্ষণ”। জনগণের দুশ্চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু হলো ভঙ্গুর অর্থনীতি।
এই বছর বলিভিয়ায় দাম বেড়েছে লাতিন আমেরিকার অনেক দেশের তুলনায় দ্রুত। জ্বালানি ও ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। জানুয়ারিতে যেখানে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশ, জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ শতাংশে। অনেকে বিকল্প হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সির দিকে ঝুঁকেছেন।
অর্থনীতিবিদ রজার লোপেজ বলেন, “প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম দ্রুত বাড়ছে। হিসাব আর মেলাতে পারছে না সাধারণ মানুষ।” বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করা মানুষদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।
ভোটারদের প্রতিক্রিয়া
লা পাজের ৩০ বছর বয়সী খুচরা বিক্রেতা সিলভিয়া মোরালেস বলেন, “প্রতি বছর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। আগে এমএএসকে ভোট দিয়েছিলাম, এবার কেন্দ্র-ডানপন্থীদেরকে ভোট দেব।”
লা পাজের শিক্ষক কার্লোস ব্লাঙ্কো কাসাস (৬০) বলেন, “এই নির্বাচন আশাব্যঞ্জক মনে হচ্ছে। আমাদের দিক পরিবর্তন দরকার।”
প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি
কিরোগা বলেছেন, তিনি এমএএসের “হারানো ২০ বছর” পুষিয়ে দিতে র্যাডিক্যাল পরিবর্তন আনবেন। এর মধ্যে বড় সরকারি ব্যয় কমানো এবং ভেনেজুয়েলা, কিউবা ও নিকারাগুয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
অন্যদিকে দোরিয়া মেদিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ১০০ দিনের মধ্যে অর্থনীতি স্থিতিশীল করবেন।
বামপন্থী শিবির বিভক্ত—এমএএস সমর্থিত প্রার্থী এদুয়ার্দো দেল কাস্তিয়ো বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সের সমর্থন পাচ্ছেন। তবে সেনেট প্রেসিডেন্ট আন্দ্রোনিকো রদ্রিগেজ দল থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভবিষ্যতের পথ
যদিও মোরালেস নির্বাচনের বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন, বিশ্লেষকরা মনে করছেন অধিকাংশ বলিভিয়ান এই ভোটকে দেশকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের দিকে নিয়ে যাওয়ার মূল ধাপ হিসেবে দেখছেন।
বলিভিয়ার ভোটে মুদ্রাস্ফীতি ইস্যুতে বিপাকে বামপন্থীরা
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ১২:০০:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫
- 62
জনপ্রিয় সংবাদ




















