মৃতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতি
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৩ জনে। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫৬ জন। শুধু বুনের জেলাতেই মারা গেছেন ২১৭ জন। শনিবার প্রাদেশিক সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। ঝড় ও পানির তোড়ে বহু ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, শত শত মানুষ গৃহহীন হয়েছে, আর এখনো বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (পিডিএমএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়, মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ২৭৩ জন পুরুষ, ২৯ জন নারী ও ২১ জন শিশু। আহতদের মধ্যে পুরুষ ১২৩, নারী ২৩ ও শিশু ১০ জন।
অবকাঠামো ও প্রাণিসম্পদের ক্ষতি
পিডিএমএ জানিয়েছে, বন্যায় ৩২০টি গবাদি পশু মারা গেছে। ৩৩৬টি বাড়ি, ৫৭টি স্কুল এবং ২৩টি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত বা ভেঙে পড়েছে। শুধু সোয়াতেই ২১৯টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪২টি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
বুনের ভয়াবহ পরিস্থিতি
বুনের জেলাকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসেবে উল্লেখ করেছে পিডিএমএ। শুধু এই জেলায় ২০৯ জন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। প্রদেশের সোয়াত, বুনের, বাজাউর, তোর্গর, মানসেহরা, শাংলা ও বাত্তাগ্রাম জেলাতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
আবহাওয়ার সতর্কতা
১৭ থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত আরও ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। ২১ আগস্ট পর্যন্ত মাঝে মাঝে বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ।
প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের ত্রাণ তদারকি
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ পরিস্থিতির গুরুতরতা বিবেচনায় মন্ত্রীদের সরাসরি ত্রাণ কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম তিনি নিজেই তদারকি করছেন। বিভিন্ন জেলায় রেশন, তাঁবু ও ওষুধ পাঠানো হয়েছে।
বুনের ও শাংলায় ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আমির মুকাম, মানসেহরায় দায়িত্বে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী সরদার ইউসুফ, আর বাজাউরে সহকারী বিশেষ উপদেষ্টা মুবারক জেব।
সরবরাহকৃত ত্রাণ সামগ্রী
পিডিএমএ জানিয়েছে, বুনের, বাজাউর, সোয়াত ও শাংলায় ৮৯টি ট্রাকে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
· ১,৮০০টি পারিবারিক তাঁবু
· ১,০০০টি শীতবস্ত্রের তাঁবু
· ৩,১০০টি গদি ও ৩,৫০০টি বালিশ
· ১,৫০০টি স্বাস্থ্যবিধি কিট
· ৩,৩০০ রান্নাঘর সেট
· ৪,৪০০টি মশারি
· ৩,৮০০টি কম্বল
· ১,৭৫০টি সৌর বাতি
· জীবনরক্ষাকারী জ্যাকেট, গ্যাস সিলিন্ডারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ৮০০ মিলিয়ন রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে, যার মধ্যে বুনেরের জন্য ৫০০ মিলিয়ন দেওয়া হয়েছে।
সেনাবাহিনী ও উদ্ধার কার্যক্রম
খারাপ আবহাওয়ার মাঝেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধ নিয়ে দুর্গত এলাকায় যাচ্ছে। আহত, নারী ও শিশুদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীর চিকিৎসকরা দুর্গত এলাকায় চিকিৎসা শিবির স্থাপন করেছেন।
সড়ক যোগাযোগ পুনরুদ্ধার
গিলগিট–বালতিস্তান সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চার দিন ধরে বন্ধ থাকা কারাকোরাম মহাসড়ক পুনরায় চালু হয়েছে। এর ফলে আটকে পড়া যাত্রী ও পর্যটকরা গন্তব্যে ফিরতে পেরেছেন।
ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত
বুনের জেলায় ২০৯ জন নিহত ও ১২০ জন আহত হয়েছেন। শাংলায় ৩৬ জন নিহত, বাজাউরে ২১ জন, মানসেহরায় ২৪ জন এবং সোয়াতে ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
উদ্ধারের চ্যালেঞ্জ
রেসকিউ ১১২২ জানিয়েছে, প্রায় দুই হাজার কর্মী ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার ও মানুষ সরিয়ে নিতে কাজ করছেন। কিন্তু বৃষ্টি ও কাদার কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বুনেরে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি
খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্ডাপুর জানিয়েছেন, নদীর ধারে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হবে। নতুন করে বসতি গড়ে দেওয়া হবে এবং সব ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
বন উজাড় ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
সিনেটর শেরি রহমান বলেছেন, এ বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব। তিনি বন উজাড়কে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। পাকিস্তানে বনভূমি কভার কমে মাত্র ৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন।
সতর্কবার্তা ও নিষেধাজ্ঞা
পাঞ্জাব পিডিএমএ মুর্রী ও অন্যান্য দুর্গত এলাকায় পর্যটক প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
সারসংক্ষেপ
খাইবার পাখতুনখোয়ার ভয়াবহ বন্যা প্রদেশজুড়ে এক মানবিক সংকট তৈরি করেছে। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চলমান থাকলেও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা ক্রমেই বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড় ও অব্যবস্থাপনার কারণে এ বিপর্যয় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩২৩ নিখোঁজ অনেকেই
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ১২:১৫:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫
- 93
জনপ্রিয় সংবাদ




















