প্রযুক্তির ভেতরে লুকানো শিল্প
ডিজিটাল ডিজাইনের সঙ্গে কাজ করা কেন্টন স্মিথ একদিন হঠাৎ আবিষ্কার করলেন এক ভিন্ন রকম স্মৃতি—সিলিকন চিপের ভেতরে লুকানো ক্ষুদ্র আঁকিবুকি। ১৯৭০-এর দশক থেকে ডিজাইনাররা এ ধরনের ‘সিলিকন ডুডলস’ ব্যবহার করতেন। কখনো এটি হতো শুধু নামের আদ্যাক্ষর, আবার কখনো ডাইনোসর গাড়ি চালাচ্ছে—এমন কৌতুকপূর্ণ নকশাও দেখা যেত। এগুলো একদিকে ব্যক্তিগত প্রকাশের মাধ্যম ছিল, অন্যদিকে প্রযুক্তি চুরির হাত থেকে সুরক্ষারও উপায়।
আজ সেগুলো বিরল, আর সংগ্রহ করতে লাগে সময়, টাকা ও একধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক মনোভাব। পুরানো হার্ডওয়্যার কেনা, খোলস খুলে মাইক্রোস্কোপে দেখা—সব মিলিয়ে স্মিথ বলেন, “এ যেন যাদুর মতো।”
সিলিকন জু এবং নথিভুক্ত ইতিহাস
স্মিথ প্রথমে এক চিপে পিরামিড খোদাই দেখতে পান, ভেবেছিলেন এটি স্রেফ মার্কার। কিন্তু যখন হাসিমুখ চিহ্ন দেখেন, তখন কৌতূহল আরও বাড়ে। খোঁজ করতে গিয়ে তিনি ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির তৈরি ‘সিলিকন জু’ ওয়েবসাইট আবিষ্কার করেন, যেখানে ১৯৯০-এর দশক থেকে এসব ছবি সংরক্ষণ করা হচ্ছিল। স্মিথ বলেন, “ডিজাইনাররা অনেক কিছু রেখে গেছেন নিজেদের ছাপ হিসেবে, কিন্তু প্রকাশ করেননি। সবকিছু লুকানোই থেকে গেছে।”
কোম্পানির ভেতরের কৌতুক ও উত্তরাধিকার
ইন্টেল প্রসেসর থেকে নোকিয়া ফোন—সব জায়গাতেই ডিজাইনাররা ফাঁকা জায়গায় এসব চিহ্ন এঁকেছেন। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের পতাকা, কলোরাডোর পাহাড় কিংবা ভেতরের মজার কৌতুক—সবই স্থান পেয়েছে মাইক্রোচিপে। এ ধারণা বিভিন্ন কোম্পানির ডিজাইনাররা স্বাধীনভাবে তৈরি করেছিলেন।
১৯৯০-এর দশকে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে দীপু জনসন নিজের আদ্যাক্ষর বসান এক চিপে। পরে কোয়ালকমে যোগ দিয়ে দেখেন সহকর্মীরাও ব্যক্তিগত প্রতীক ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, “ওগুলো ছিল মুক্ত সময়। স্রেফ সৃজনশীল প্রকাশ।”
সংগ্রাহক ও শিকারীদের জগৎ
স্মিথ যখন হাসিমুখ খুঁজে পেলেন, তখন থেকেই আরও সংগ্রহ শুরু করেন। ইবে থেকে স্ক্র্যাপ কেনা, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা—সবই তার শখ। এক বছরে তিনি হাজার হাজার ডলার ব্যয় করেন এ উদ্দেশ্যে।
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে সেডরিক নামের আরেক সংগ্রাহকও একইভাবে বাজার খুঁজে বেড়ান। কখনো মাসের পর মাস খোঁজ করেও কিছু পাওয়া যায় না, আবার হঠাৎ পাওয়া যায় অমূল্য নিদর্শন। তিনি একে বলেন “হার্ডওয়্যার প্রত্নতত্ত্ব।”
অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া
চিপের খোলস খুলতে কখনো হিটগান ব্যবহার হয়, কখনো রেজিন সেদ্ধ করে প্লাস্টিক আলাদা করা হয়। আবার অনেকে অ্যাসিড ব্যবহার করেন, তবে তাতে রঙ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। চিপটি বের করে মাইক্রোস্কোপে রাখলেই চোখে পড়ে সেই ক্ষুদ্র শিল্পকর্ম।
আজকের বাস্তবতা
২০২৫ সালে এসে চিপে আঁকিবুকি কল্পনা করাই কঠিন। ক্ষুদ্রতম পরিবর্তনও এখন কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সৃজনশীল স্বাধীনতার জায়গা আর নেই। তবে এসব ডুডল আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রযুক্তির পেছনেও ছিল মানুষ, তাদের রসিকতা আর ব্যক্তিত্ব।
কোয়ালকমের প্রাক্তন প্রকৌশলী জনসন বলেন, “আমি ইতিহাসের ছোট্ট অংশে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আজও সে শিল্পকর্মের কথা ভাবলে মুখে হাসি চলে আসে।”