যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন বাস্তবতা
রাশিয়ার সেনারা কয়েক মাসের স্থবির লড়াইয়ের পর পূর্ব ইউক্রেনে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করেছে। পোকরোভস্ক শহরের কাছাকাছি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ভেঙে তারা কয়েক মাইল ভেতরে ঢুকে পড়েছে। এর ফলে ইউক্রেনীয় সেনাদের অবস্থান ঘেরাও হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
ইউক্রেনীয় সামরিক সহযোগী সংগঠন ডিপস্টেট জানায়, “শত্রুপক্ষ প্রতিরক্ষার ফাঁক খুঁজে ভেতরে ঢুকে শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলতে চাইছে।” প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়া যুদ্ধবিরতি নয়, বরং নতুন হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শান্তি আলোচনার আগে চাপ সৃষ্টি
শুক্রবার আলাস্কায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের আগে দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে চাইছে। ইউক্রেন রাশিয়ার প্রধান আয়ের উৎস তেল শোধনাগারে হামলা বাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে তারা আলোচনায় মস্কোকে ছাড় দিতে বাধ্য করার কৌশল নিয়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখিয়ে বার্তা দিতে চাইছে যে তারা এখনো দ্রুত সাফল্য অর্জনে সক্ষম। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুতিন আলোচনায় ট্রাম্পকে ডোনেৎস্ক অঞ্চলের অবশিষ্ট অংশ ইউক্রেন থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার দাবি তুলতে পারেন।

পোকরোভস্ক ঘিরে বিপদ
পোকরোভস্ক একসময় পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকেন্দ্র ছিল। এখন শহরটি উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম পর্যন্ত আধা-বেষ্টিত। মাত্র ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ করিডর দিয়ে সেনারা শহরে ঢুকতে পারছে, যা ড্রোন হামলার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রাশিয়া শহরটিকে সম্পূর্ণ ঘিরে ফেলে ইউক্রেনীয় সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করতে পারে।
ফিনল্যান্ডভিত্তিক ব্ল্যাক বার্ড গ্রুপের বিশ্লেষক পাসি পারোইনেন বলেছেন, রাশিয়া সাম্প্রতিক দিনে প্রায় ১০ মাইল ভেতরে প্রবেশ করেছে—যা তাদের আগের ধীরগতির লড়াইয়ের সঙ্গে তীব্র বৈপরীত্য। তার মতে, পরবর্তী ২৪-৪৮ ঘণ্টা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ধরে রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্পের অবস্থান ও রাশিয়ার কৌশল
যুদ্ধকে ব্যয়বহুল সময় ও জীবনের অপচয় হিসেবে আখ্যা দেওয়া ট্রাম্পকে শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেখাতে চেষ্টা করছে দুই পক্ষই। তবে গত মাসে আলোচনার সময় রাশিয়ার ড্রোন হামলা বেড়ে যাওয়ায় ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, “দিনে ভালো কথা বলে, রাতে সবাইকে বোমা মারে।”
কিন্তু আগস্টে রাশিয়া ড্রোন হামলার সংখ্যা হ্রাস করেছে। জুলাইয়ে প্রতিরাতে গড়ে ২০১টি ড্রোন ব্যবহার করলেও আগস্টে তা নেমে এসেছে ৭৮-এ। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ট্রাম্পকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা। ইউক্রেনীয় প্রিজম গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওলেক্সান্দর ক্রায়েভ বলেন, “রাশিয়া খুব ভালোভাবেই জানে কীভাবে ট্রাম্পকে বোঝাতে হয়।”

ইউক্রেনের শঙ্কা ও ইউরোপের প্রতিক্রিয়া
কিয়েভ আশঙ্কা করছে, পুতিন যদি ট্রাম্পের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করতে পারেন, তবে জেলেনস্কিকে পাশ কাটিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দিতে সক্ষম হবেন। ক্রেমলিন বরাবরই বলে আসছে, যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে “মূল কারণগুলো” সমাধান করতে হবে—যার অর্থ ইউক্রেনের পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পশ্চিমের সঙ্গে জোটে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা।
এটি ঠেকাতে ইউক্রেন ইউরোপীয় মিত্রদের সক্রিয় করেছে। হাঙ্গেরি বাদে সব ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে শান্তির পথ নির্ধারণ করা যাবে না।”
জেলেনস্কি বলেছেন, ভবিষ্যতে ট্রাম্প ও পুতিনের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে, যদিও তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। এরই মধ্যে ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ভূমি ছাড়ের বিতর্ক
সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো—ট্রাম্প রাশিয়ার দাবিতে ইউক্রেনকে ভূমি ছাড় দিতে সম্মত হতে পারেন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তিনি বলেছেন, “শান্তিচুক্তিতে কিছু ভূমি অদলবদল থাকবে।” জেলেনস্কির জবাব: “ইউক্রেনীয়রা তাদের জমি দখলদারকে উপহার দেবে না।”
কিয়েভ ও ইউরোপীয় দেশগুলো স্পষ্ট করেছে, যুদ্ধবিরতির পরবর্তীকালে বর্তমান ফ্রন্টলাইন থেকেই আলোচনা শুরু করা উচিত। তবে রাশিয়ার সাম্প্রতিক দ্রুত অগ্রগতি সেই সীমারেখাকে পাল্টে দিয়েছে—যা শুক্রবারের আলোচনায় ইউক্রেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















