১০:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
নগরজীবনে মানিয়ে নিচ্ছে বন্যপ্রাণী গ্লোবাল কনটেন্টে ঝুঁকছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম তীব্র তাপে বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ গ্রিডে চাপ বিআরটিএতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা ও পাসপোর্ট দপ্তরও শীর্ষে মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে বোমা নিক্ষেপ, নিহত এক পথচারী অসম ভিআইপি সুবিধা নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন: নির্বাচন কমিশনকে জানাল জামায়াত বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটিতে টানা তিন দিন বন্ধ ব্যাংক ও শেয়ারবাজার বৃহস্পতিবার দেশে পালিত হবে বড়দিন, উৎসব ঘিরে শুভেচ্ছা ও বাড়তি নিরাপত্তা উপেক্ষিত রুমিন ফারহানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থানে বিশ্বব্যাংকের নতুন অর্থায়ন, বাংলাদেশে অনুমোদন ১৫০ কোটি ডলার

কারও কাছে নায়ক, কারও কাছে সন্ত্রাসী—এখন শুধু হতাশা: জাকারিয়া জুবেইদির গল্প

ভূমিকা

জাকারিয়া জুবেইদি একসময় ছিলেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক। কেউ তাকে নায়ক বলেন, আবার কারও কাছে তিনি সন্ত্রাসী। দীর্ঘ কারাবাস শেষে মুক্তি পাওয়ার পর এখন তিনি নিজেই মনে করছেন, এই সংগ্রামের কোনো সমাধান নেই।

মুক্তির পর উদযাপন

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে হঠাৎ মুক্তি পান জুবেইদি। সেই মুহূর্তটি ছিল ফিলিস্তিনিদের জন্য বিরল আনন্দঘন ঘটনা। রামাল্লায় শত শত মানুষ তাকে বরণ করে নেয়। কেউ তার নাম ধরে স্লোগান দেন, কেউ তাকে কাঁধে তুলে নেন। এমনকি এক শিশু তাকে ছয় বছর আগে দেওয়া হেয়ার জেলটি ধরে বলেছিল, “আমি এটি শুধু আপনার মুক্তির পর ব্যবহার করব।”

অতীতের সংগ্রাম ও পরিবর্তন

৪৯ বছর বয়সী জুবেইদি ২০০০–এর দশকে আল-আকসা শহীদ ব্রিগেডের নেতা হিসেবে ফিলিস্তিনিদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন এবং ইসরায়েলিদের আতঙ্কিত করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি অস্ত্র ছেড়ে সংস্কৃতিচর্চায় মন দেন এবং একটি থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। তবে আবারও কারাবন্দি হয়ে যান এবং একসময় কারাগার ভেঙে পালানোর চেষ্টায় তার কিংবদন্তি আরও ছড়িয়ে পড়ে।

নতুন বাস্তবতায় হতাশা

এখন মুক্তির কয়েক মাস পর তিনি মনে করছেন, বন্দুক কিংবা সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ—কোনো কিছুই ফিলিস্তিনিদের জন্য রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার পথ খুলে দেয়নি। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা নাট্য আন্দোলন করলাম, অস্ত্রও ব্যবহার করলাম—কোনো সমাধান আসেনি।”

তার মুখে দাঁত নেই; কারাগারে নির্যাতনের সময় চোয়াল ভেঙে গেছে বলে তিনি জানান। নিজেদের এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

যুদ্ধ ও ব্যক্তিগত ক্ষতি

১৬ মাস পর কারাগার থেকে বের হয়ে তিনি দেখেন, গাজা ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নিজ শহর জেনিনও ধ্বংস হয়ে গেছে, তার বাড়িতে পৌঁছানোই সম্ভব নয়। আরও বেদনাদায়ক হলো—তার ২১ বছর বয়সী ছেলে, যিনি নিজেও যোদ্ধা ছিলেন, ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।

দ্বিতীয় ইন্তিফাদা ও নেতৃত্ব

শুরুতে জুবেইদি অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময়, যখন শান্তি আলোচনার ব্যর্থতার পর সংঘাত নতুন করে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি দ্রুত আল-আকসা শহীদ ব্রিগেডের নেতৃত্বে চলে আসেন।
ইসরায়েলিদের কাছে তিনি সন্ত্রাসী হলেও, ফিলিস্তিনিদের কাছে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। ইন্তিফাদায় প্রায় এক হাজার ইসরায়েলি নিহত হন, অন্যদিকে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় তিন হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান।

সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ ও থিয়েটার

২০০৭ সালে ইসরায়েল তাকে অস্ত্রসমর্পণের শর্তে সাধারণ ক্ষমা দিলে তিনি থিয়েটার প্রতিষ্ঠার কাজে মন দেন। জেনিনে গড়ে ওঠা ‘ফ্রিডম থিয়েটার’ তরুণদের জন্য নাটক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। জুবেইদির মতে, এটি ছিল প্রতিরোধের নতুন রূপ। তিনি নিজেই বলেছিলেন, “আমি থিয়েটারের দরজা ভেঙেছি রাইফেল দিয়ে।”

পুনরায় বন্দি ও কারাগার ভাঙা

২০১৯ সালে তাকে ফের গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২১ সালে তিনি ও আরও পাঁচজন বন্দি কারাগারের বাথরুম থেকে সুরঙ্গ খুঁড়ে পালান। যদিও কয়েক দিনের মধ্যেই ধরা পড়েন, এই ঘটনা ফিলিস্তিনিদের কাছে তাকে কিংবদন্তিতে পরিণত করে। গাজা শহরের দেয়ালে দেয়ালে তার পলায়নের ছবি আঁকা হয়েছিল।

হতাশার উপসংহার

তবুও জুবেইদি মনে করেন, এসব পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত কোনো ফল আনেনি। তার ভাষায়, “না শান্তিপূর্ণ উপায়ে, না সামরিক শক্তিতে কোনো সমাধান নেই। কেন? কারণ ইসরায়েল আমাদের কিছুই দিতে চায় না।”

আজকের জাকারিয়া জুবেইদি আর সেই আগ্রাসী নেতা নন। তিনি নিজেই মানছেন, ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম এখন গভীর অচলাবস্থায়। তার জীবন হয়ে উঠেছে প্রতিরোধের নানা রূপের প্রতিফলন—কিন্তু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে কোনো আলোর রেখা নেই।

জনপ্রিয় সংবাদ

নগরজীবনে মানিয়ে নিচ্ছে বন্যপ্রাণী

কারও কাছে নায়ক, কারও কাছে সন্ত্রাসী—এখন শুধু হতাশা: জাকারিয়া জুবেইদির গল্প

০৭:১১:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

ভূমিকা

জাকারিয়া জুবেইদি একসময় ছিলেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক। কেউ তাকে নায়ক বলেন, আবার কারও কাছে তিনি সন্ত্রাসী। দীর্ঘ কারাবাস শেষে মুক্তি পাওয়ার পর এখন তিনি নিজেই মনে করছেন, এই সংগ্রামের কোনো সমাধান নেই।

মুক্তির পর উদযাপন

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে হঠাৎ মুক্তি পান জুবেইদি। সেই মুহূর্তটি ছিল ফিলিস্তিনিদের জন্য বিরল আনন্দঘন ঘটনা। রামাল্লায় শত শত মানুষ তাকে বরণ করে নেয়। কেউ তার নাম ধরে স্লোগান দেন, কেউ তাকে কাঁধে তুলে নেন। এমনকি এক শিশু তাকে ছয় বছর আগে দেওয়া হেয়ার জেলটি ধরে বলেছিল, “আমি এটি শুধু আপনার মুক্তির পর ব্যবহার করব।”

অতীতের সংগ্রাম ও পরিবর্তন

৪৯ বছর বয়সী জুবেইদি ২০০০–এর দশকে আল-আকসা শহীদ ব্রিগেডের নেতা হিসেবে ফিলিস্তিনিদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন এবং ইসরায়েলিদের আতঙ্কিত করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি অস্ত্র ছেড়ে সংস্কৃতিচর্চায় মন দেন এবং একটি থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। তবে আবারও কারাবন্দি হয়ে যান এবং একসময় কারাগার ভেঙে পালানোর চেষ্টায় তার কিংবদন্তি আরও ছড়িয়ে পড়ে।

নতুন বাস্তবতায় হতাশা

এখন মুক্তির কয়েক মাস পর তিনি মনে করছেন, বন্দুক কিংবা সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ—কোনো কিছুই ফিলিস্তিনিদের জন্য রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার পথ খুলে দেয়নি। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা নাট্য আন্দোলন করলাম, অস্ত্রও ব্যবহার করলাম—কোনো সমাধান আসেনি।”

তার মুখে দাঁত নেই; কারাগারে নির্যাতনের সময় চোয়াল ভেঙে গেছে বলে তিনি জানান। নিজেদের এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

যুদ্ধ ও ব্যক্তিগত ক্ষতি

১৬ মাস পর কারাগার থেকে বের হয়ে তিনি দেখেন, গাজা ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নিজ শহর জেনিনও ধ্বংস হয়ে গেছে, তার বাড়িতে পৌঁছানোই সম্ভব নয়। আরও বেদনাদায়ক হলো—তার ২১ বছর বয়সী ছেলে, যিনি নিজেও যোদ্ধা ছিলেন, ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।

দ্বিতীয় ইন্তিফাদা ও নেতৃত্ব

শুরুতে জুবেইদি অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময়, যখন শান্তি আলোচনার ব্যর্থতার পর সংঘাত নতুন করে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি দ্রুত আল-আকসা শহীদ ব্রিগেডের নেতৃত্বে চলে আসেন।
ইসরায়েলিদের কাছে তিনি সন্ত্রাসী হলেও, ফিলিস্তিনিদের কাছে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। ইন্তিফাদায় প্রায় এক হাজার ইসরায়েলি নিহত হন, অন্যদিকে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় তিন হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান।

সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ ও থিয়েটার

২০০৭ সালে ইসরায়েল তাকে অস্ত্রসমর্পণের শর্তে সাধারণ ক্ষমা দিলে তিনি থিয়েটার প্রতিষ্ঠার কাজে মন দেন। জেনিনে গড়ে ওঠা ‘ফ্রিডম থিয়েটার’ তরুণদের জন্য নাটক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। জুবেইদির মতে, এটি ছিল প্রতিরোধের নতুন রূপ। তিনি নিজেই বলেছিলেন, “আমি থিয়েটারের দরজা ভেঙেছি রাইফেল দিয়ে।”

পুনরায় বন্দি ও কারাগার ভাঙা

২০১৯ সালে তাকে ফের গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২১ সালে তিনি ও আরও পাঁচজন বন্দি কারাগারের বাথরুম থেকে সুরঙ্গ খুঁড়ে পালান। যদিও কয়েক দিনের মধ্যেই ধরা পড়েন, এই ঘটনা ফিলিস্তিনিদের কাছে তাকে কিংবদন্তিতে পরিণত করে। গাজা শহরের দেয়ালে দেয়ালে তার পলায়নের ছবি আঁকা হয়েছিল।

হতাশার উপসংহার

তবুও জুবেইদি মনে করেন, এসব পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত কোনো ফল আনেনি। তার ভাষায়, “না শান্তিপূর্ণ উপায়ে, না সামরিক শক্তিতে কোনো সমাধান নেই। কেন? কারণ ইসরায়েল আমাদের কিছুই দিতে চায় না।”

আজকের জাকারিয়া জুবেইদি আর সেই আগ্রাসী নেতা নন। তিনি নিজেই মানছেন, ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম এখন গভীর অচলাবস্থায়। তার জীবন হয়ে উঠেছে প্রতিরোধের নানা রূপের প্রতিফলন—কিন্তু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে কোনো আলোর রেখা নেই।