কটসওল্ডসে ভ্যান্স পরিবারের ছুটি
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তার স্ত্রী উষা ও তিন সন্তানকে নিয়ে ইংল্যান্ডের কটসওল্ডসে ছুটি কাটিয়েছেন। মনোরম গ্রামীণ এলাকা, পাহাড়ি ঢাল, খড়ের ছাউনি দেওয়া বাড়ি আর পুরনো পাব ঘেরা এই অঞ্চল বহুদিন ধরেই আমেরিকান ধনীদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্র। সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম ভ্যান্স পরিবারের ভ্রমণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেছে। এমনকি তাদের মোটরকেড ভুল পাশে গাড়ি চালিয়েছে বলে ডেইলি মেইল ভিডিওও প্রকাশ করেছে।
আমেরিকান সেলিব্রিটি ও কটসওল্ডস
কটসওল্ডসকে বলা হয় ইংল্যান্ডের “স্টোরিবুক ফেয়ারিটেল” এলাকা। এখানে বাড়ি কিনেছেন এলেন ডি-জেনারেস ও তার স্ত্রী পোরশিয়া ডি রসি। কোর্টনি কার্দাশিয়ানও সামাজিক মাধ্যমে এ জায়গার প্রশংসা করেছেন। ডি-জেনারেসের মতে, “এখানকার সবকিছুই ভালো।” তারা মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মধ্যে সময় ভাগ করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর স্থায়ীভাবে এখানে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের ৪৩ একরের ‘কাইটসব্রিজ’ এস্টেট এখন ২২.৫ মিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রির জন্য উঠেছে।

ভ্যান্সের বিতর্কিত সফর
ভ্যান্স পরিবার চার্লবুরি এলাকায় ছয় একরের একটি এস্টেটে ছিলেন, যেখানে টেনিস কোর্ট, জিম ও জর্জিয়ান অরেঞ্জারি রয়েছে। এর আগে তারা ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। তবে অনুমতিপত্র ছাড়া মাছ ধরায় তারা আইন ভঙ্গ করেছেন বলে জানা যায়, যার জরিমানা ৩,৫০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। পরে ল্যামি প্রশাসনিক ভুলের কথা বলে অনুমতিপত্রের টাকা পরিশোধ করেন।
প্রতিবাদ ও সমালোচনা
ভ্যান্সের সফর সবার কাছে সমাদৃত হয়নি। স্থানীয়রা “ভ্যান্স নট ওয়েলকাম পার্টি” আয়োজন করে। সাংবাদিক জেরেমি ক্লার্কসন ভ্যান্সকে অশালীন শব্দে আক্রমণ করেন এবং ইতিহাস বিষয়ে অজ্ঞ বলে মন্তব্য করেন। ভ্যান্স অবশ্য তার মন্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
পর্যটন ও মার্কিন ক্রেতাদের ঢল
কটসওল্ডসে এখন আমেরিকান পর্যটক ও ক্রেতাদের স্রোত বেড়েছে। স্থানীয় রিয়েল এস্টেট এজেন্ট হেলেন হুইটফিল্ড জানান, রাজনীতি থেকে মুক্তি ও তুলনামূলক কম ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ অনেক আমেরিকানকে এখানে বাড়ি কিনতে উদ্বুদ্ধ করছে। তারা সাধারণত ঐতিহ্যবাহী ৩০০ বছরের পুরোনো কটেজ চাইলেও আধুনিক সুবিধা যেমন আন্ডারফ্লোর হিটিং ও বৈদ্যুতিক চুলার দাবি রাখে।

সৌন্দর্য, ইতিহাস ও বাস্তবতা
কটসওল্ডস তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য ও শান্ত পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। মার্কিন পর্যটকরা এখানে এসে শান্তি খুঁজে পান, যেখানে এক কাপ চায়ের সাথে ৯০০ বছরের পুরোনো চার্চের ইতিহাসও মেলে। তবে এই স্বপ্নময় ছবির আড়ালে রয়েছে মৌসুমি কর্মসংস্থান সংকট, স্থানীয়দের জন্য বাড়ি কেনার অসুবিধা এবং পর্যটনের চাপ।
পর্যটনের চাপ ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
অনেক গ্রাম ক্রমবর্ধমান পর্যটক চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। বিবুরি গ্রাম, যা উইলিয়াম মরিসের ভাষায় “সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম”, সম্প্রতি ট্যুর বাসে পার্কিং নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। মাত্র ৬০০ বাসিন্দার গ্রামে গ্রীষ্মে প্রতিদিন প্রায় ৬,০০০ পর্যটক ঢুকে পড়ে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, যেই শান্তি খুঁজতে মানুষ এখানে আসে, সেটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কটসওল্ডসের টান
ট্যুর গাইড রবার্ট গানের মতে, তার ৭০ শতাংশ গ্রাহকই আমেরিকান। অনেকে বলেন, “আমরা শুধু আমেরিকার কোলাহল থেকে দূরে থাকতে চাই।” অক্সফোর্ড বা লন্ডন থেকে কাছেই হলেও কটসওল্ডসে আসা মানে এক ভিন্ন জগতে প্রবেশ করা। এখানকার বাড়ি, বাগান ও ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ পরিবেশ চোখের আরাম ও মানসিক স্বস্তি এনে দেয়।
তবে বিবুরিতে গাড়ি পার্ক করতে গেলে সেই স্বস্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















