উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে আগামী প্রজন্মের জন্য সুযোগ তৈরি করতে হলে কোন প্রতিষ্ঠান কোথায়, কেন এবং কীভাবে নিয়োগ দেয়—এগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা জরুরি। কোন প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি এবং মানসম্মত চাকরি সৃষ্টি করবে তা আগে থেকে নির্ভুলভাবে বলা কঠিন হলেও, সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে কিছু স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়—যেসব প্রতিষ্ঠানের চাকরি সৃষ্টির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, তাদের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকে। এসব থেকে নীতিনির্ধারক ও বিনিয়োগকারীদের জন্য বাস্তবমুখী করণীয়ও বেরিয়ে আসে।
মূল অন্তর্দৃষ্টি: পাঁচটি ধারাবাহিক থিম
১) অল্পসংখ্যক প্রতিষ্ঠানই অধিকাংশ নতুন চাকরি তৈরি করে
উচ্চ-বৃদ্ধির (হাই-গ্রোথ) প্রতিষ্ঠান—যাদের অনুপাত আনুষ্ঠানিক ব্যবসায়ের পাঁচটিরও কমে একটি—অনেক দেশে নতুন চাকরির ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত সৃষ্টি করে। তবে এই ‘স্পার্ট’ বা দ্রুত উত্থান টেকসই হয় না; সাধারণত ১০টির মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানই পরের তিন বছরে আবারও একই গতিতে বাড়তে পারে।
২) সবচেয়ে গতিশীল নিয়োগকর্তারা সাধারণত ‘তরুণ’—শুরুর আকার যত বড় বা ছোট হোক
প্রতিষ্ঠান চালুর প্রথম পাঁচ বছরে তারা যে গতিতে কর্মী যোগ করে, পরিণত প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে সেই গতি ধরা কঠিন। প্রাথমিক আকার বড় না হলেও তরুণ প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত বাড়ে, নতুন যন্ত্রপাতি নেয়, প্রক্রিয়া আপডেট করে এবং ডিজিটাল-দক্ষ কর্মী নিয়োগে এগিয়ে থাকে। তাই সাফল্য কেবল শুরুতে ‘বড়’ হওয়ায় নয়; তরুণ হওয়ার মধ্যেই থাকে পরিবর্তনের গতি।

৩) ‘সংযুক্ত’ ও সহজলভ্য স্থানে ব্যবসা বেশি সফল হয়
ভালো সড়ক-যোগাযোগ, বাজারে প্রবেশাধিকার, অবকাঠামো ও শহর-নিকটতা—এই সংযোগগুলো ব্যবসাকে বাঁচতে ও বাড়তে সাহায্য করে। সংযুক্ত লোকেশনগুলোতে দক্ষ জনবল, সরবরাহকারী ও ক্রেতা—সবকিছুরই প্রবাহ বেশি থাকে, যা উৎপাদন ও নিয়োগকে ত্বরান্বিত করে।
৪) ভ্যালু চেইন, বহুজাতিক ও দক্ষ সরবরাহকারীর সঙ্গে সংযুক্ত হলে বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়
যে প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় বা বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে যুক্ত, বহুজাতিকের সঙ্গে কাজ করে বা পরিশীলিত সরবরাহকারীর নেটওয়ার্কে ঢোকে—তাদের প্রযুক্তি, ব্যবস্থাপনা ও বাজার-প্রবেশ ক্ষমতা দ্রুত উন্নত হয়; ফলস্বরূপ নিয়োগও বাড়ে।
৫) উন্নত ব্যবস্থাপনা-পদ্ধতি ও প্রযুক্তি গ্রহণই দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের ভিত
ভালো ম্যানেজমেন্ট প্র্যাকটিস—উৎপাদন পরিকল্পনা, মান নিয়ন্ত্রণ, লক্ষ্য-ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ—এবং নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদনশীল করে, ঝুঁকি সামলাতে সক্ষম করে এবং নতুন চাকরির চাহিদা তৈরি করে।
যে সেক্টরেই হোক, উচ্চ-বৃদ্ধির প্রতিষ্ঠান সবখানেই আছে—তবে ধারাবাহিকতা চ্যালেঞ্জ
উচ্চ-বৃদ্ধির প্রতিষ্ঠান কেবল একটি বা দু-একটি খাতে সীমিত নয়। কোত দিভোয়ার ও ইন্দোনেশিয়ার প্রক্রিয়াজাত খাদ্যশিল্প, ইথিওপিয়ার আসবাবশিল্প, ব্রাজিলের টেক্সটাইল, মেক্সিকোর কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স, আর হাঙ্গেরির ব্যবসা ও পেশাগত সেবায়ও এমন প্রতিষ্ঠান আছে। তবু ধারাবাহিকভাবে ‘হাই-গ্রোথ’ থাকা কঠিন; অনেকেই এক দফা দ্রুত ওঠার পর গতি হারায়। টেকসই বৃদ্ধির চাবিকাঠি তাই সংযুক্তি, ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি—শুধু একবারের ‘স্পার্ট’ নয়।

তরুণ প্রতিষ্ঠান বেশি চাকরি যোগ করে—কিন্তু টিকে থাকার ঝুঁকিও বেশি
অনেক উন্নয়নশীল দেশে মোট চাকরির বড় অংশ ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোতে—কম কর্মী নিয়েও তারা সামগ্রিকভাবে কর্মসংস্থানের বড় যোগানদাতা। উদাহরণ হিসেবে বুরকিনা ফাসো, ক্যামেরুন, ঘানা ও রুয়ান্ডায় ১০ জনের কম কর্মী আছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো মোট কর্মসংস্থানের আনুমানিক ৪০–৫০ শতাংশ বহন করে। তুর্কিয়েতে এই হার প্রায় ৪৩ শতাংশ, ব্রাজিলে ৬০ শতাংশেরও বেশি এবং ভারতে প্রায় ৮০ শতাংশের কাছাকাছি। তবে ছোট হওয়া মানেই যে স্থিতিশীল, দীর্ঘস্থায়ী চাকরি তৈরি হবে—তা নয়; অনেকে বাড়ার সক্ষমতা ও স্থায়িত্বের ঘাটতিতে থাকে।
উচ্চ-বৃদ্ধি মূলত ‘তরুণ’দের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতিষ্ঠানের অংশ উচ্চ-বৃদ্ধির দলে ব্রাজিলে প্রায় ৬৪ শতাংশ, কোত দিভোয়ারে ৬২ শতাংশ, ইথিওপিয়ায় ৪৩ শতাংশ, হাঙ্গেরিতে ৬১ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫ শতাংশ। কলম্বিয়ায় চার বছর বা তার কম বয়সী প্রতিষ্ঠানগুলো পুরনো প্রতিষ্ঠানের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ দ্রুত বাড়ে। অবশ্য স্টার্টআপ ও তরুণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘এক্সিট’ বা বাজার ছাড়ার হারও তুলনামূলক বেশি—একধরনের ‘আপ-অর-আউট’ গতিশীলতা। তবু এই ওঠানামাই উদ্যোক্তা-চাঞ্চল্য, উৎপাদনশীলতা ও সামগ্রিক চাকরি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে—যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতাও তাই দেখায়।
নীতিগত বার্তা: বড় পরিসরে চাকরি সৃষ্টিতে করণীয়
১) তরুণ ও গতিশীল প্রতিষ্ঠান শনাক্তকরণ এবং পুঁজি-সহায়তা
ট্যাক্স, জামানত ও গ্যারান্টি-সহায়ক প্রণোদনা, স্কেল-আপ তহবিল, ইকুইটি/কোয়াসি-ইকুইটি—এসবের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় তরুণ প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে দেওয়া।

২) ‘সংযুক্ত’ লোকেশন গড়ে তোলা
পরিবহন, বিদ্যুৎ ও ডিজিটাল অবকাঠামোসহ শিল্পসমূহের ক্লাস্টার, লজিস্টিক হাব—এগুলোতে বিনিয়োগ করলে প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজারে প্রবেশাধিকার ও দক্ষ মানবসম্পদে পৌঁছানো সহজ হয়।
৩) ভ্যালু চেইনে ঢোকা, বহুজাতিক ও উন্নত সরবরাহকারীর সঙ্গে সেতুবন্ধন
লোকাল কনটেন্ট প্রোগ্রাম, সাপ্লায়ার-ডেভেলপমেন্ট, মান-সনদ/সার্টিফিকেশন—এসবের মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে সংযুক্ত করা।
৪) ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি-আপগ্রেডে সহায়তা
ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং, প্রোডাকশন ও কোয়ালিটি সিস্টেম, ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন গ্রহণে সহজ অর্থায়ন ও পরামর্শ—দীর্ঘমেয়াদে কর্মসংস্থানের মান ও সংখ্যা দুই-ই বাড়ায়।
সব তথ্য মিলিয়ে ছবিটা স্পষ্ট: অল্পসংখ্যক, প্রধানত তরুণ এবং ভালোভাবে ‘সংযুক্ত’ প্রতিষ্ঠানই নতুন ও উন্নতমানের চাকরি সৃষ্টির মূল চালিকাশক্তি। ভ্যালু চেইনে প্রবেশ, শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা এবং প্রযুক্তি গ্রহণ—এই তিনটি স্তম্ভ তাদের বৃদ্ধিকে টেকসই করে। সে অনুযায়ী নীতিগত সহায়তা ও বেসরকারি পুঁজি সঠিকভাবে নির্দেশিত হলে, বৃহৎ পরিসরে কর্মসংস্থান তৈরির পথে বাস্তব অগ্রগতি সম্ভব।
আরতি গ্রোভার 



















