১১:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অঙ্গীকার দিলেন ট্রাম্প

পুতিনের সম্মতি ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি একটি বড় পদক্ষেপ যেখানে রাশিয়া নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। ট্রাম্পের মতে, ইউরোপীয় দেশগুলো এই বোঝার বড় অংশ বহন করবে আর যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করবে ইউক্রেনকে স্থায়ীভাবে নিরাপদ রাখতে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, তিনি সাময়িক যুদ্ধবিরতি নয় বরং স্থায়ী শান্তি চুক্তিকে প্রাধান্য দেন।

ইউরোপীয় নেতাদের প্রশংসা
হোয়াইট হাউসে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প একের পর এক প্রশংসা করেছেন। ন্যাটো প্রধান মার্ক রুট্টেকে তিনি “মহান নেতা” বলেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে “বন্ধু” উল্লেখ করে বলেন, “সবাই তাকে পছন্দ করে।” ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ সম্পর্কেও ট্রাম্প বলেন, “প্রথম দিন থেকেই তাকে ভালো লেগেছিল, এখন আরও বেশি ভালো লাগছে।”

হোয়াইট হাউসে বৈঠক ও প্রতীকী ছবি
ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বসেন ট্রাম্প। বৈঠকটি আগের তুলনায় অনেক শান্ত পরিবেশে সম্পন্ন হয় এবং মাত্র ২৬ মিনিট স্থায়ী হয়। আলোচনায় কঠিন প্রশ্নগুলো এড়িয়ে নেতারা মূলত সাধারণ বক্তব্য দেন। বৈঠক শেষে ট্রাম্প, জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা একসঙ্গে পরিবারের মতো একটি গোষ্ঠী ছবি তোলেন।

যুদ্ধবিরতি ছাড়াই শান্তি চুক্তির প্রস্তাব
ট্রাম্প বলেন, শান্তি স্থাপনের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন নেই। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আমি এ বছর ছয়টি চুক্তি করেছি, সবই যুদ্ধ চলাকালীন, কোনো যুদ্ধবিরতি ছাড়াই।” তার মতে, যুদ্ধবিরতি দিলে উভয় পক্ষ আবার শক্তি সঞ্চয় করতে পারে, যা শান্তির পথে বাধা হতে পারে। তবে তিনি স্বীকার করেন, যুদ্ধবিরতির ধারণা ভালো কারণ এতে মানুষ বাঁচবে, কিন্তু শান্তি আলোচনাও যুদ্ধ চলার মধ্যেই সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকার ইঙ্গিত
ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেন শান্তি চুক্তির প্রয়োজনে মার্কিন সেনা পাঠানোর বিষয়টি তিনি পুরোপুরি বাতিল করছেন না। তিনি এটিকে “ন্যাটো-ধাঁচের” নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বলে বর্ণনা করেন। জেলেনস্কি মজা করে বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সবকিছু চাই।” তবে তিনি স্পষ্ট করেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা মানে শক্তিশালী সেনাবাহিনী, আধুনিক অস্ত্র এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

ইউরোপের স্বস্তি ও ব্রিটিশ প্রতিক্রিয়া
বৈঠককে ঘিরে ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ফেব্রুয়ারির আগের বৈঠকে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু এবার পরিস্থিতি ছিল অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি যুক্তরাজ্যের জন্যও ইতিবাচক সংকেত। লন্ডনের “নাম্বার ১০” নিশ্চিতভাবেই স্বস্তি পেয়েছে ট্রাম্পের ঘোষণায়।

যুদ্ধের মানবিক মূল্য
রাজনৈতিক আলোচনার বাইরে, ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ ভয়াবহ সংকটে পড়ছে। ৬৮ বছর বয়সী ভ্যালেন্টিনা নামের এক নারী, যিনি মানবিক সংস্থার হয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছিলেন, এখন নিজেই উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন, “আমি যেন কোথাও যাচ্ছি না, শূন্য যাত্রায় আছি।” তার শহর দ্রুজকিভকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, মানুষ জানেই না ধোঁয়াটি রুশ নাকি ইউক্রেনীয় গোলাবর্ষণ থেকে আসছে।

মানবিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড জিউইশ রিলিফের প্রধান নির্বাহী পল অ্যান্টিকোনি বলেন, “গত তিন বছরে লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনীয়র জীবন ধ্বংস হতে দেখাটা অসহনীয়। আমরা তাদের পাশে আছি, যতদিন প্রয়োজন ততদিন সহায়তা করব।”

পরবর্তী পদক্ষেপ
বৈঠকের শেষে ট্রাম্প জানান, তিনি পুতিনকে ফোন করবেন এবং একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরিকল্পনা করছেন, যেখানে জেলেনস্কি ও পুতিন দুজনই থাকবেন। ইউরোপীয় নেতারা এই উদ্যোগকে সম্ভাব্য শান্তির পথে নতুন ধাপ হিসেবে দেখছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৭)

ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অঙ্গীকার দিলেন ট্রাম্প

১১:২৭:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

পুতিনের সম্মতি ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি একটি বড় পদক্ষেপ যেখানে রাশিয়া নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। ট্রাম্পের মতে, ইউরোপীয় দেশগুলো এই বোঝার বড় অংশ বহন করবে আর যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করবে ইউক্রেনকে স্থায়ীভাবে নিরাপদ রাখতে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, তিনি সাময়িক যুদ্ধবিরতি নয় বরং স্থায়ী শান্তি চুক্তিকে প্রাধান্য দেন।

ইউরোপীয় নেতাদের প্রশংসা
হোয়াইট হাউসে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প একের পর এক প্রশংসা করেছেন। ন্যাটো প্রধান মার্ক রুট্টেকে তিনি “মহান নেতা” বলেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে “বন্ধু” উল্লেখ করে বলেন, “সবাই তাকে পছন্দ করে।” ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ সম্পর্কেও ট্রাম্প বলেন, “প্রথম দিন থেকেই তাকে ভালো লেগেছিল, এখন আরও বেশি ভালো লাগছে।”

হোয়াইট হাউসে বৈঠক ও প্রতীকী ছবি
ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বসেন ট্রাম্প। বৈঠকটি আগের তুলনায় অনেক শান্ত পরিবেশে সম্পন্ন হয় এবং মাত্র ২৬ মিনিট স্থায়ী হয়। আলোচনায় কঠিন প্রশ্নগুলো এড়িয়ে নেতারা মূলত সাধারণ বক্তব্য দেন। বৈঠক শেষে ট্রাম্প, জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা একসঙ্গে পরিবারের মতো একটি গোষ্ঠী ছবি তোলেন।

যুদ্ধবিরতি ছাড়াই শান্তি চুক্তির প্রস্তাব
ট্রাম্প বলেন, শান্তি স্থাপনের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন নেই। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আমি এ বছর ছয়টি চুক্তি করেছি, সবই যুদ্ধ চলাকালীন, কোনো যুদ্ধবিরতি ছাড়াই।” তার মতে, যুদ্ধবিরতি দিলে উভয় পক্ষ আবার শক্তি সঞ্চয় করতে পারে, যা শান্তির পথে বাধা হতে পারে। তবে তিনি স্বীকার করেন, যুদ্ধবিরতির ধারণা ভালো কারণ এতে মানুষ বাঁচবে, কিন্তু শান্তি আলোচনাও যুদ্ধ চলার মধ্যেই সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকার ইঙ্গিত
ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেন শান্তি চুক্তির প্রয়োজনে মার্কিন সেনা পাঠানোর বিষয়টি তিনি পুরোপুরি বাতিল করছেন না। তিনি এটিকে “ন্যাটো-ধাঁচের” নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বলে বর্ণনা করেন। জেলেনস্কি মজা করে বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সবকিছু চাই।” তবে তিনি স্পষ্ট করেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা মানে শক্তিশালী সেনাবাহিনী, আধুনিক অস্ত্র এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

ইউরোপের স্বস্তি ও ব্রিটিশ প্রতিক্রিয়া
বৈঠককে ঘিরে ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ফেব্রুয়ারির আগের বৈঠকে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু এবার পরিস্থিতি ছিল অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি যুক্তরাজ্যের জন্যও ইতিবাচক সংকেত। লন্ডনের “নাম্বার ১০” নিশ্চিতভাবেই স্বস্তি পেয়েছে ট্রাম্পের ঘোষণায়।

যুদ্ধের মানবিক মূল্য
রাজনৈতিক আলোচনার বাইরে, ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ ভয়াবহ সংকটে পড়ছে। ৬৮ বছর বয়সী ভ্যালেন্টিনা নামের এক নারী, যিনি মানবিক সংস্থার হয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছিলেন, এখন নিজেই উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন, “আমি যেন কোথাও যাচ্ছি না, শূন্য যাত্রায় আছি।” তার শহর দ্রুজকিভকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, মানুষ জানেই না ধোঁয়াটি রুশ নাকি ইউক্রেনীয় গোলাবর্ষণ থেকে আসছে।

মানবিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড জিউইশ রিলিফের প্রধান নির্বাহী পল অ্যান্টিকোনি বলেন, “গত তিন বছরে লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনীয়র জীবন ধ্বংস হতে দেখাটা অসহনীয়। আমরা তাদের পাশে আছি, যতদিন প্রয়োজন ততদিন সহায়তা করব।”

পরবর্তী পদক্ষেপ
বৈঠকের শেষে ট্রাম্প জানান, তিনি পুতিনকে ফোন করবেন এবং একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরিকল্পনা করছেন, যেখানে জেলেনস্কি ও পুতিন দুজনই থাকবেন। ইউরোপীয় নেতারা এই উদ্যোগকে সম্ভাব্য শান্তির পথে নতুন ধাপ হিসেবে দেখছেন।