কৃষিতে নতুন ধাক্কা দিচ্ছে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ
জাপানের কৃষিক্ষেত্রে বড় পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। এ পরিবর্তন আসছে না প্রচলিত খুচরা জায়ান্ট যেমন Aeon, Seven & I Holdings বা কৃষি সমবায় JA গ্রুপ থেকে, বরং আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান দাইওয়া সিকিউরিটিজ থেকে। সংস্থাটি ক্যাপসিকাম (বেল পেপার) চাষকে বিনিয়োগপণ্য হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে।
শিজুওকার ইওয়াতা শহরে প্রায় তিন হেক্টর জমি জুড়ে (চারটি ফুটবল মাঠের সমান) কাঁচঘেরা স্থাপনায় বছরে ৮০ হাজার ক্যাপসিকাম গাছ থেকে প্রায় ৪৩০ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন হয়। শ্রমিকেরা হেলমেট পরে বিশেষ যন্ত্র দিয়ে ছাদের কাছাকাছি পর্যন্ত বেড়ে ওঠা লাল ও হলুদ ক্যাপসিকাম সংগ্রহ করেন।
দাইওয়ার বাজার দখলের কৌশল
দাইওয়া বর্তমানে জাপানের ক্যাপসিকাম বিক্রির প্রায় ২০ শতাংশ দখল করেছে, যা বাজারের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি। কিন্তু তাদের বিশেষ পরিকল্পনা হলো—এই খামারগুলোকে আর্থিক পণ্য হিসেবে রূপান্তর করা।
দাইওয়া ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারের প্রেসিডেন্ট কাজুনোরি হিসায়েদা বলেন, “আমরা বিনিয়োগের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জাপানের কৃষিকে বদলে দেব।” এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের অর্থ দিয়ে যন্ত্রপাতি আধুনিক করা, উৎপাদন বাড়ানো এবং লাভ সরাসরি বিনিয়োগকারীদের ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি একটি বিশেষ কৃষি ফান্ড গঠনেরও প্রস্তুতি চলছে।
লোকসানি খামার থেকে মুনাফা
২০২২ সালে দাইওয়া অধিগ্রহণ করা একটি লোকসানি খামার মাত্র এক বছরের মধ্যে মুনাফায় ফিরে আসে। আধুনিক চাষপদ্ধতি ও পরিবহন খরচ কমানোর ফলে উৎপাদন দক্ষতা বাড়ে, আর পণ্যের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এভাবেই দাইওয়া মূলত ক্যাপসিকাম চাষে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চাইছে।
বৈশ্বিক খাদ্য চাহিদা ও বিনিয়োগ সুযোগ
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এবং OECD-এর তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক খাদ্য চাহিদা প্রতিবছর ১.২ শতাংশ হারে বাড়ছে। কিন্তু কৃষি উৎপাদন বাড়ছে মাত্র ১ শতাংশ হারে। এতে ভবিষ্যতে উৎপাদন চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান ম্যানুলাইফ গ্রুপ হিসাব দিয়েছে, খাদ্য ঘাটতি পূরণের বৈশ্বিক বাজারে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ সুযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাদাম ও ফলচাষে বিনিয়োগ করে বিশ্বের অন্যতম বড় আমন্ড উৎপাদক হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের Nuveen ক্যালিফোর্নিয়ার নাপা ভ্যালিতে আঙুর বাগান পরিচালনা করে এবং অস্ট্রেলিয়ায় ম্যাকোয়ারি গ্রুপ গরুর মাংস ও তুলা খাতে বিনিয়োগ করে। ব্রিটিশ বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান Preqin-এর তথ্যমতে, ২০২৪ সালে কৃষি-কেন্দ্রিক বৈশ্বিক তহবিল দাঁড়ায় ৬২.৭ বিলিয়ন ডলার, যা এক দশকে প্রায় তিনগুণ হয়েছে।
জাপানের পিছিয়ে পড়া কৃষি খাত
নরিঞ্চুকিন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ কোকি তাকায়ামা বলেন, “বিনিয়োগ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। জাপানে কৃষকের সংখ্যা কমছে, তাই দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ অপরিহার্য।”
কিন্তু বাস্তবে জাপানের কৃষি, বন ও মৎস্য খাতে বিনিয়োগ গত দুই দশকে ৪০ শতাংশ কমে ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০.৪ বিলিয়ন ডলারে। বিশ্বব্যাপী এ সময়ে বিনিয়োগ দ্বিগুণ হয়েছে। জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে জাপানই একমাত্র দেশ যেখানে এ খাতে বিনিয়োগ কমেছে।
প্রচুর নিয়ম-কানুনের কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা জাপানি কৃষিজমিতে বিনিয়োগে আগ্রহী নয়। এমনকি ম্যানুলাইফের ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ সুযোগের হিসাবেও জাপানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
ধান থেকে ক্যাপসিকামে
এই পতনের প্রতীক হিসেবে বলা যায়, ১৯৬৯ সালে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধান উৎপাদক ছিল জাপান, এখন নেমে এসেছে ১৫তম স্থানে। দীর্ঘদিনের ধান নিয়ন্ত্রণ নীতি এর একটি বড় কারণ। এখন দাইওয়া চায় ক্যাপসিকাম চাষকে কৃষির নতুন মডেল করে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করে তুলতে।
জাপানে ক্যাপসিকাম চাষকে বিনিয়োগপণ্য ধরার ফলে ধান চাষ নেমে গেছে ১৫তম স্থানে
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ১১:৪৯:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫
- 48
জনপ্রিয় সংবাদ



















