১১:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

ট্রাম্পের চুক্তিতে এলএনজি চাহিদা বাড়ায় সুযোগ দেখছে থাই খনি কোম্পানি বানপু

মার্কিন এলএনজি রপ্তানির সম্ভাবনা ও বানপুর কৌশল
থাইল্যান্ডের খনি কোম্পানি বানপু জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানি বাড়ানোর আগ্রহ এশিয়ায় নতুন চাহিদা তৈরি করবে। এতে তাদের উত্তর আমেরিকায় সাম্প্রতিক বিনিয়োগ আরও শক্তিশালী হবে।

গত সপ্তাহে কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বারনেট শেল গ্যাসক্ষেত্রে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বেডরক প্রোডাকশন কিনতে ৩৭০ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছে। কয়লা খনির ওপরের নির্ভরতা কমিয়ে টেকসই জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অংশ হিসেবে এই অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অক্টোবরের মধ্যে লেনদেন শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এশিয়ায় এলএনজি চাহিদা ও মার্কিন যোগান
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বানপুর প্রধান নির্বাহী সিনন ভংকুসলকিট বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য আলোচনায় এলএনজি ব্যবহার করছে। এর মানে এশিয়ায় ইতোমধ্যেই চাহিদা রয়েছে এবং মার্কিন সরবরাহ সহজলভ্য।”

এই অধিগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিদিন অতিরিক্ত ১০০ থেকে ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট সমপরিমাণ গ্যাস উৎপাদন যোগ হবে, যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বানপুর ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের দৈনিক উৎপাদনের সাথে মিশবে। এর আগে কোম্পানিটি একই অঞ্চলে ২০১৯ সালে ৫৭০ মিলিয়ন এবং ২০২২ সালে ৬২০ মিলিয়ন ডলারের গ্যাসসম্পদ কিনেছিল।

ভবিষ্যৎ উৎপাদন বৃদ্ধি
বানপু নর্থ আমেরিকার জেনারেল ম্যানেজার পর্নথেপ তান্তিপানিচকুল জানান, আগামী বছর থেকে মূলধনী উন্নয়ন ব্যয় শুরু করার পরিকল্পনা আছে। তার ভাষায়, “আমাদের উৎপাদন দৈনিক এক ট্রিলিয়ন ঘনফুটের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।”

এশীয় জ্বালানি জায়ান্টদের আগ্রহ
শুধু বানপু নয়, আরও বড় এশীয় কোম্পানিও মার্কিন শেল গ্যাসে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, জাপানের টোকিও গ্যাস এপ্রিলে ৫২৫ মিলিয়ন ডলারে টেক্সাসের একটি শেল সম্পদে ৭০ শতাংশ অংশীদারিত্ব কিনেছে। একই সময়ে মিতসুবিশি কর্পোরেশনও মার্কিন কোম্পানি এথন এনার্জি ম্যানেজমেন্টের শেল উৎপাদন ও পাইপলাইন সম্পদ কেনার আলোচনা করছে, যার সম্ভাব্য মূল্য প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার।

কয়লা নির্ভরতা কমানোর কৌশল
বানপুর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে মোট আয়ের অর্ধেক কয়লাবহির্ভূত খাত থেকে আনা। ২০২৪ সালে এই হার ছিল ৩৫ শতাংশ। ফলে শেল গ্যাস প্রকল্পে বিনিয়োগ তাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ।

অর্থায়ন কাঠামো
বানপুর নিয়ন্ত্রিত নিউইয়র্ক-তালিকাভুক্ত সহযোগী প্রতিষ্ঠান বি কে ভি (BKV), যেটির ৭৬ শতাংশ শেয়ার তাদের হাতে, নতুন বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ৩৭০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১১০ মিলিয়ন ডলার বিক্রেতাকে নতুন শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধ হবে, আর বাকি ২৬০ মিলিয়ন ডলার ঋণের মাধ্যমে জোগাড় করা হবে।

কার্বন সংরক্ষণ ও নতুন প্রযুক্তি
বি কে ভি শুধু গ্যাস উত্তোলন করে না, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের দুটি গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও একটি কার্বন ক্যাপচার, ব্যবহার ও সংরক্ষণ (CCUS) প্রকল্পও চলছে। বারনেট শেল এলাকায় একটি প্রকল্প চালু আছে এবং আরও তিনটিতে বিনিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সিইও সিনন জানান, “ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) সুপার পাওয়ার বানাতে চাইছেন, যা বিদ্যুতের চাহিদা বাড়াচ্ছে। এআই ও এলএনজি—এই দুটি খাত মার্কিন বাজারকে শক্তিশালী করবে।”

এছাড়া মে মাসে বি কে ভি ডেনমার্কের কোপেনহেগেন ইনফ্রাস্ট্রাকচার পার্টনার্সের সি আই এনার্জি ট্রানজিশন ফান্ডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে। নতুন অংশীদারিত্বে ফান্ডটির ৪৯ শতাংশ মালিকানা এবং ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মূলধন প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

আর্থিক চাপ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
তবে কোম্পানিটি জানুয়ারি-জুন সময়ে ৪২.৮ মিলিয়ন ডলার নিট লোকসান করেছে, যেখানে গত বছরের একই সময়ে ৬৯ মিলিয়ন ডলার লাভ হয়েছিল। কয়লার দাম ৩০ শতাংশ কমা ও থাই বাহাতের ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হওয়া এই লোকসানের কারণ।

সিইও বলেন, “আমরা গ্যাস ও নবায়নযোগ্য খাতে বিনিয়োগ করছি, যা কয়েক বছরের মধ্যে ফল দেবে। তবে এ বছর কয়লার দাম কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে।”

নতুন খাতে সম্প্রসারণ
বানপু অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে ব্যাটারি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (BESS) প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ায় নিকেল খনি প্রকল্পেও কাজ করছে।

সিননের ভাষায়, “আমরা মূলত পণ্যভিত্তিক ব্যবসায় তৈরি হয়েছিলাম—কয়লা ও গ্যাস। তবে এখন আমাদের স্থিতিশীল বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যাটারি সংরক্ষণ ব্যবস্থার সাথে ভারসাম্য রাখতে হবে। আগামী পাঁচ বছরে এই খাতগুলোয় বেশি গুরুত্ব দিয়ে ঝুঁকি সামলাতে চাই।”

জনপ্রিয় সংবাদ

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৭)

ট্রাম্পের চুক্তিতে এলএনজি চাহিদা বাড়ায় সুযোগ দেখছে থাই খনি কোম্পানি বানপু

১১:৫৬:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

মার্কিন এলএনজি রপ্তানির সম্ভাবনা ও বানপুর কৌশল
থাইল্যান্ডের খনি কোম্পানি বানপু জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানি বাড়ানোর আগ্রহ এশিয়ায় নতুন চাহিদা তৈরি করবে। এতে তাদের উত্তর আমেরিকায় সাম্প্রতিক বিনিয়োগ আরও শক্তিশালী হবে।

গত সপ্তাহে কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বারনেট শেল গ্যাসক্ষেত্রে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বেডরক প্রোডাকশন কিনতে ৩৭০ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছে। কয়লা খনির ওপরের নির্ভরতা কমিয়ে টেকসই জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অংশ হিসেবে এই অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অক্টোবরের মধ্যে লেনদেন শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এশিয়ায় এলএনজি চাহিদা ও মার্কিন যোগান
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বানপুর প্রধান নির্বাহী সিনন ভংকুসলকিট বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য আলোচনায় এলএনজি ব্যবহার করছে। এর মানে এশিয়ায় ইতোমধ্যেই চাহিদা রয়েছে এবং মার্কিন সরবরাহ সহজলভ্য।”

এই অধিগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিদিন অতিরিক্ত ১০০ থেকে ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট সমপরিমাণ গ্যাস উৎপাদন যোগ হবে, যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বানপুর ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের দৈনিক উৎপাদনের সাথে মিশবে। এর আগে কোম্পানিটি একই অঞ্চলে ২০১৯ সালে ৫৭০ মিলিয়ন এবং ২০২২ সালে ৬২০ মিলিয়ন ডলারের গ্যাসসম্পদ কিনেছিল।

ভবিষ্যৎ উৎপাদন বৃদ্ধি
বানপু নর্থ আমেরিকার জেনারেল ম্যানেজার পর্নথেপ তান্তিপানিচকুল জানান, আগামী বছর থেকে মূলধনী উন্নয়ন ব্যয় শুরু করার পরিকল্পনা আছে। তার ভাষায়, “আমাদের উৎপাদন দৈনিক এক ট্রিলিয়ন ঘনফুটের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।”

এশীয় জ্বালানি জায়ান্টদের আগ্রহ
শুধু বানপু নয়, আরও বড় এশীয় কোম্পানিও মার্কিন শেল গ্যাসে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, জাপানের টোকিও গ্যাস এপ্রিলে ৫২৫ মিলিয়ন ডলারে টেক্সাসের একটি শেল সম্পদে ৭০ শতাংশ অংশীদারিত্ব কিনেছে। একই সময়ে মিতসুবিশি কর্পোরেশনও মার্কিন কোম্পানি এথন এনার্জি ম্যানেজমেন্টের শেল উৎপাদন ও পাইপলাইন সম্পদ কেনার আলোচনা করছে, যার সম্ভাব্য মূল্য প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার।

কয়লা নির্ভরতা কমানোর কৌশল
বানপুর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে মোট আয়ের অর্ধেক কয়লাবহির্ভূত খাত থেকে আনা। ২০২৪ সালে এই হার ছিল ৩৫ শতাংশ। ফলে শেল গ্যাস প্রকল্পে বিনিয়োগ তাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ।

অর্থায়ন কাঠামো
বানপুর নিয়ন্ত্রিত নিউইয়র্ক-তালিকাভুক্ত সহযোগী প্রতিষ্ঠান বি কে ভি (BKV), যেটির ৭৬ শতাংশ শেয়ার তাদের হাতে, নতুন বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ৩৭০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১১০ মিলিয়ন ডলার বিক্রেতাকে নতুন শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধ হবে, আর বাকি ২৬০ মিলিয়ন ডলার ঋণের মাধ্যমে জোগাড় করা হবে।

কার্বন সংরক্ষণ ও নতুন প্রযুক্তি
বি কে ভি শুধু গ্যাস উত্তোলন করে না, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের দুটি গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও একটি কার্বন ক্যাপচার, ব্যবহার ও সংরক্ষণ (CCUS) প্রকল্পও চলছে। বারনেট শেল এলাকায় একটি প্রকল্প চালু আছে এবং আরও তিনটিতে বিনিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সিইও সিনন জানান, “ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) সুপার পাওয়ার বানাতে চাইছেন, যা বিদ্যুতের চাহিদা বাড়াচ্ছে। এআই ও এলএনজি—এই দুটি খাত মার্কিন বাজারকে শক্তিশালী করবে।”

এছাড়া মে মাসে বি কে ভি ডেনমার্কের কোপেনহেগেন ইনফ্রাস্ট্রাকচার পার্টনার্সের সি আই এনার্জি ট্রানজিশন ফান্ডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে। নতুন অংশীদারিত্বে ফান্ডটির ৪৯ শতাংশ মালিকানা এবং ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মূলধন প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

আর্থিক চাপ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
তবে কোম্পানিটি জানুয়ারি-জুন সময়ে ৪২.৮ মিলিয়ন ডলার নিট লোকসান করেছে, যেখানে গত বছরের একই সময়ে ৬৯ মিলিয়ন ডলার লাভ হয়েছিল। কয়লার দাম ৩০ শতাংশ কমা ও থাই বাহাতের ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হওয়া এই লোকসানের কারণ।

সিইও বলেন, “আমরা গ্যাস ও নবায়নযোগ্য খাতে বিনিয়োগ করছি, যা কয়েক বছরের মধ্যে ফল দেবে। তবে এ বছর কয়লার দাম কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে।”

নতুন খাতে সম্প্রসারণ
বানপু অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে ব্যাটারি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (BESS) প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ায় নিকেল খনি প্রকল্পেও কাজ করছে।

সিননের ভাষায়, “আমরা মূলত পণ্যভিত্তিক ব্যবসায় তৈরি হয়েছিলাম—কয়লা ও গ্যাস। তবে এখন আমাদের স্থিতিশীল বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যাটারি সংরক্ষণ ব্যবস্থার সাথে ভারসাম্য রাখতে হবে। আগামী পাঁচ বছরে এই খাতগুলোয় বেশি গুরুত্ব দিয়ে ঝুঁকি সামলাতে চাই।”