০২:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫
গাজায় টলোমলো যুদ্ধবিরতি: ট্রাম্পের শান্তি–পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ আটকে যাচ্ছে জামাইকাতে হারিকেন মেলিসা ছিলো ক্যাটাগরি–৫ ঘূর্ণি ঝড় নিট-শূন্য ভবিষ্যতের লক্ষ্যে সিঙ্গাপুরের পারমাণবিক ভাবনা ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের আকাশছোঁয়া উত্থান—এবার কঠিন পরীক্ষার মুখে বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় সরকার পরিবর্তনের নেপথ্যে ‘দুর্বল শাসনব্যবস্থা’: অজিত দোভাল নেক্সপেরিয়ার কিছু অর্ডারে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় ছাড় বিবেচনা করছে চীন দারিদ্র্য, বাস্তুচ্যুতি ও ধর্মীয় সম্প্রীতি—বাংলাদেশে ভ্যাটিকানের মন্ত্রীর সফর এআই বিদ্যুৎ–বুমেও ‘বিগ অয়েল’-এর হতাশা: ডেটা সেন্টারের চাহিদা বাড়লেও তেল–গ্যাস কোম্পানির লাভ বাড়ছে না দেশজ উদ্ভিদের স্মৃতি ও মানুষ–প্রকৃতির বন্ধন পুনরুজ্জীবিত করছে শারজাহ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ রাশিয়া–চীনের প্রথম যৌথ সাবমেরিন মহড়া: সোনার–রাডার ডেটা বিনিময়, উদ্ধার ড্রিল ও যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বার্তা’

ছোট থেকে শুরু করে বড় স্বপ্ন, সিঙ্গাপুরের তিন মূল লক্ষ্য

সিঙ্গাপুরে এখন সরকার ও নাগরিকদের মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশ লেনদেন অনলাইনে সম্পন্ন করা যায়। এ অর্জনকে আরও এগিয়ে নিতে হলে কী ধরনের মানসিকতা প্রয়োজন—এই প্রশ্ন থেকেই নতুন আলোচনার সূত্রপাত। এক ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট বলেন, “শূন্য থেকে কিছু তৈরি করেছ, সফল হলে আরও ভালো করার চেষ্টা করো। এর চেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক কিছু নেই।”

ডিজিটাল রাষ্ট্র ও স্মার্ট নেশন গড়তে সিঙ্গাপুর তিনটি মূল লক্ষ্যকে সামনে রাখছে। এগুলো হলো—ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি, ছোট থেকে শুরু করে বড় স্বপ্ন দেখা, এবং প্রযুক্তিকে জনকল্যাণে ব্যবহার করা।

ডিজাইন ও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি

সবার পরিচিত উদাহরণ হলো এসজি-৬০ ভাউচার। এগুলো রিডিম করতে সাধারণত নাগরিকরা একটি কিউআর কোড ব্যবসায়ীর কাছে উপস্থাপন করেন, ব্যবসায়ী সেটি স্ক্যান করে লেনদেন সম্পন্ন করেন। কেন এই পদ্ধতি? মূলত প্রবীণদের জন্য এটিকে সহজবোধ্য করার উদ্দেশ্যে।

সরকারি ডেভেলপার দল একাধিক পরীক্ষা চালায় এবং দেখেছে, প্রবীণরা ক্যামেরা ব্যবহার করে ব্যবসায়ীর কিউআর কোড স্ক্যান করতে অসুবিধায় পড়েন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা কাগুজে ভাউচার স্ক্যান করতে অভ্যস্ত ছিলেন। তাই নাগরিকদের কোড উপস্থাপনের মডেলটিই বেশি কার্যকর হয়।

এ ছাড়া ভাউচারের মূল্যমান ২, ৫ ও ১০ ডলারে নির্ধারণ করা হয়, যা নগদ টাকার সঙ্গে মিল থাকায় আরও স্বাভাবিক মনে হয়। যারা কাগুজে ভাউচার চান, তাদের জন্য কমিউনিটি ক্লাব থেকে প্রিন্টেড কপি নেওয়ার সুযোগও রাখা হয়।

লক্ষ্য স্পষ্ট—ডিজিটালকে অগ্রাধিকার, তবে ডিজিটালই একমাত্র নয়। প্রযুক্তি যেন তরুণ ও প্রবীণ সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর হয়, সেটিই প্রধান উদ্দেশ্য।

ছোট থেকে শুরুবড় স্বপ্ন

ডিজিটাল প্রযুক্তি শুধু দক্ষতা বাড়ায় না, নীতি গ্রহণের সুযোগও প্রসারিত করে। আগে কাগুজে ভাউচার ছাপাতে প্রচুর খরচ ও সময় লাগত, ডাকবাক্স ভেঙে চুরিও হতো। ব্যবসায়ীরা সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতেন টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য।

ডিজিটাল ভাউচার চালুর পর খরচ কমেছে, ব্যবসায়ীরা এক দিনের মধ্যে নগদ ফেরত পাচ্ছেন। ফলে প্রয়োজনে ঘন ঘন ভাউচার বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে।

একইভাবে কোভিড-১৯ সময়ে মাস্ক বিতরণের জটিলতা সমাধানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয় MaskGoWhere প্ল্যাটফর্ম। পরে এটি বড় আকার নেয় এবং এখন ৪০টির বেশি সেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে—মানসিক স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সেবাযত্ন পর্যন্ত।

এভাবেই সিঙ্গাপুর ছোট উদ্যোগ থেকে বড় স্বপ্নের দিকে এগোচ্ছে—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গ্রহণের দিকেও। ইতিমধ্যে প্রায় ১৮ হাজার সরকারি কর্মকর্তা নিজেদের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট তৈরি করেছেন, যা তাদের এআই-দক্ষ করে তুলছে।

প্রযুক্তি যেন জনকল্যাণে

বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করা হয় মুনাফা বাড়ানোর জন্য। কিন্তু সরকারের লক্ষ্য জনকল্যাণ। এ জন্য উদ্ধার অভিযানের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করতে এআই-চালিত মানবাকৃতি রোবট তৈরি করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসেবার তথ্য দেওয়া থেকে শুরু করে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসায় এআই ব্যবহার করা হচ্ছে।

এআই-এর মাধ্যমে প্রতারণা ও ক্ষতিকর ওয়েবসাইট শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিমধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি বিপজ্জনক সাইট বন্ধ করেছে। একই সঙ্গে কমিউনিটি হ্যাকাথনের মাধ্যমে নাগরিকদের সমাজকল্যাণমূলক কাজে যুক্ত করা হচ্ছে।

নাগরিকরাও এগিয়ে আসছেন—অতিরিক্ত ওষুধ পুনর্বণ্টন কিংবা কম্পোস্ট তৈরির মতো উদ্যোগ প্রযুক্তির সাহায্যে সহজ করছেন তারা।

ভবিষ্যতের পথে

এই তিনটি দিকনির্দেশনা—অন্তর্ভুক্তি, বড় স্বপ্ন এবং জনকল্যাণ—সিঙ্গাপুরের স্মার্ট নেশন যাত্রাকে পথ দেখাচ্ছে। সফলতার আসল মানদণ্ড প্রযুক্তিগত জটিলতা নয়, বরং এমন এক ডিজিটাল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি সিঙ্গাপুরিয়ান সমৃদ্ধি লাভ করবে।

এটি এক সঙ্গে গড়ে তোলার মতো ভবিষ্যৎ।

জনপ্রিয় সংবাদ

গাজায় টলোমলো যুদ্ধবিরতি: ট্রাম্পের শান্তি–পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ আটকে যাচ্ছে

ছোট থেকে শুরু করে বড় স্বপ্ন, সিঙ্গাপুরের তিন মূল লক্ষ্য

০৬:২০:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

সিঙ্গাপুরে এখন সরকার ও নাগরিকদের মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশ লেনদেন অনলাইনে সম্পন্ন করা যায়। এ অর্জনকে আরও এগিয়ে নিতে হলে কী ধরনের মানসিকতা প্রয়োজন—এই প্রশ্ন থেকেই নতুন আলোচনার সূত্রপাত। এক ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট বলেন, “শূন্য থেকে কিছু তৈরি করেছ, সফল হলে আরও ভালো করার চেষ্টা করো। এর চেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক কিছু নেই।”

ডিজিটাল রাষ্ট্র ও স্মার্ট নেশন গড়তে সিঙ্গাপুর তিনটি মূল লক্ষ্যকে সামনে রাখছে। এগুলো হলো—ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি, ছোট থেকে শুরু করে বড় স্বপ্ন দেখা, এবং প্রযুক্তিকে জনকল্যাণে ব্যবহার করা।

ডিজাইন ও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি

সবার পরিচিত উদাহরণ হলো এসজি-৬০ ভাউচার। এগুলো রিডিম করতে সাধারণত নাগরিকরা একটি কিউআর কোড ব্যবসায়ীর কাছে উপস্থাপন করেন, ব্যবসায়ী সেটি স্ক্যান করে লেনদেন সম্পন্ন করেন। কেন এই পদ্ধতি? মূলত প্রবীণদের জন্য এটিকে সহজবোধ্য করার উদ্দেশ্যে।

সরকারি ডেভেলপার দল একাধিক পরীক্ষা চালায় এবং দেখেছে, প্রবীণরা ক্যামেরা ব্যবহার করে ব্যবসায়ীর কিউআর কোড স্ক্যান করতে অসুবিধায় পড়েন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা কাগুজে ভাউচার স্ক্যান করতে অভ্যস্ত ছিলেন। তাই নাগরিকদের কোড উপস্থাপনের মডেলটিই বেশি কার্যকর হয়।

এ ছাড়া ভাউচারের মূল্যমান ২, ৫ ও ১০ ডলারে নির্ধারণ করা হয়, যা নগদ টাকার সঙ্গে মিল থাকায় আরও স্বাভাবিক মনে হয়। যারা কাগুজে ভাউচার চান, তাদের জন্য কমিউনিটি ক্লাব থেকে প্রিন্টেড কপি নেওয়ার সুযোগও রাখা হয়।

লক্ষ্য স্পষ্ট—ডিজিটালকে অগ্রাধিকার, তবে ডিজিটালই একমাত্র নয়। প্রযুক্তি যেন তরুণ ও প্রবীণ সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর হয়, সেটিই প্রধান উদ্দেশ্য।

ছোট থেকে শুরুবড় স্বপ্ন

ডিজিটাল প্রযুক্তি শুধু দক্ষতা বাড়ায় না, নীতি গ্রহণের সুযোগও প্রসারিত করে। আগে কাগুজে ভাউচার ছাপাতে প্রচুর খরচ ও সময় লাগত, ডাকবাক্স ভেঙে চুরিও হতো। ব্যবসায়ীরা সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতেন টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য।

ডিজিটাল ভাউচার চালুর পর খরচ কমেছে, ব্যবসায়ীরা এক দিনের মধ্যে নগদ ফেরত পাচ্ছেন। ফলে প্রয়োজনে ঘন ঘন ভাউচার বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে।

একইভাবে কোভিড-১৯ সময়ে মাস্ক বিতরণের জটিলতা সমাধানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয় MaskGoWhere প্ল্যাটফর্ম। পরে এটি বড় আকার নেয় এবং এখন ৪০টির বেশি সেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে—মানসিক স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সেবাযত্ন পর্যন্ত।

এভাবেই সিঙ্গাপুর ছোট উদ্যোগ থেকে বড় স্বপ্নের দিকে এগোচ্ছে—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গ্রহণের দিকেও। ইতিমধ্যে প্রায় ১৮ হাজার সরকারি কর্মকর্তা নিজেদের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট তৈরি করেছেন, যা তাদের এআই-দক্ষ করে তুলছে।

প্রযুক্তি যেন জনকল্যাণে

বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করা হয় মুনাফা বাড়ানোর জন্য। কিন্তু সরকারের লক্ষ্য জনকল্যাণ। এ জন্য উদ্ধার অভিযানের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করতে এআই-চালিত মানবাকৃতি রোবট তৈরি করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসেবার তথ্য দেওয়া থেকে শুরু করে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসায় এআই ব্যবহার করা হচ্ছে।

এআই-এর মাধ্যমে প্রতারণা ও ক্ষতিকর ওয়েবসাইট শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিমধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি বিপজ্জনক সাইট বন্ধ করেছে। একই সঙ্গে কমিউনিটি হ্যাকাথনের মাধ্যমে নাগরিকদের সমাজকল্যাণমূলক কাজে যুক্ত করা হচ্ছে।

নাগরিকরাও এগিয়ে আসছেন—অতিরিক্ত ওষুধ পুনর্বণ্টন কিংবা কম্পোস্ট তৈরির মতো উদ্যোগ প্রযুক্তির সাহায্যে সহজ করছেন তারা।

ভবিষ্যতের পথে

এই তিনটি দিকনির্দেশনা—অন্তর্ভুক্তি, বড় স্বপ্ন এবং জনকল্যাণ—সিঙ্গাপুরের স্মার্ট নেশন যাত্রাকে পথ দেখাচ্ছে। সফলতার আসল মানদণ্ড প্রযুক্তিগত জটিলতা নয়, বরং এমন এক ডিজিটাল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি সিঙ্গাপুরিয়ান সমৃদ্ধি লাভ করবে।

এটি এক সঙ্গে গড়ে তোলার মতো ভবিষ্যৎ।